সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

আইনের দুর্বলতা চিহ্নিত করতে চার সাব কমিটি

সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠক দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন

বিশেষ প্রতিনিধি

সড়ক পরিবহন আইনের দুর্বলতা খতিয়ে দেখতে চারটি সাব কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি সাব কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন একজন সচিব। কমিটি আইনের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় করণীয় সম্পর্কে আগামী দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে।

গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের একথা জানান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অংশ নেন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দিন, একই মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. শহীদুজ্জামান, সড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম, বিআরটিএ চেয়ারম্যান কামরুল আহসান, পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ এবং ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম। বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, সড়ক পরিবহন আইনটি বাস্তবায়নে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দুর্বলতা দেখা দিয়েছে। সেই দুর্বলতা খতিয়ে দেখতে চারজন সচিবের নেতৃত্বে চারটি সাব কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে সুপারিশ ও অ্যাকশন প্লানসহ প্রতিবেদন জমা দেবে এসব কমিটি। পরে টাস্কফোর্স কমিটির সভায় তা উপস্থাপনের পর আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পরিবহন সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোরও কিছু দুর্বলতা ছিল। তাই আগামী বছরের জুন পর্যন্ত লাইসেন্সসহ অন্যান্য বিষয়ের জন্য পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সময় দেওয়া হয়েছে। এদিকে গণপরিবহনে চালক সংকটের কথা উল্লেখ করে দুর্ঘটনার পর আটক চালকদের জামিনের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহজাহান খান। সড়কের নতুন আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে জামিন অযোগ্য ধারাটি বাদ দেওয়াকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন পরিবহন শ্রমিকরা। তিনি বলেন, নতুন আইনে জামিন অযোগ্য ধারাটি বাতিল হলে এই আইনে বিচার মেনে নিতেও প্রস্তুত তারা। জামিন অযোগ্য ধারার কারণে পরিবহন শ্রমিকদের পরিবারে সংকট তৈরি হওয়ার পাশাপাশি চালকেরও ঘাটতি দেখা দেবে।

সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে পরিবহন শ্রমিকরা গত সপ্তাহে ঢাকাসহ সারা দেশে ‘ধর্মঘট’ ডেকে অচলাবস্থার সৃষ্টি করলেও শাজাহান খান জানিয়েছেন, তারা কোনো ধর্মঘট ডাকেননি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শাজাহান খান বলেন, বাস্তবতা হলো, লাইসেন্সের কথা মন্ত্রী বলছেন, অনেক ঘাটতি আছে, লাইসেন্স দিতে পারছে না বিআরটিএ। ভুয়া ও ফেক লাইসেন্স নিয়ে যদি কেউ গাড়ি চালায় তার তো জরিমানা হবে, জেল হবে। স্বাভাবিকভাবেই সে গাড়ি চালাতে পারছে না। আবার অনেক গাড়ির ফিটনেস না থাকায় রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কম ছিল। আমি মনে করি সবই স্বাভাবিক চলছে। লাইসেন্স ও কাগজপত্র না থাকায় গত কয়দিন গাড়ির ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। শাজাহান খান বলেন, কয়েকটি ধারা জামিনযোগ্য করার বিষয়ে বলা হয়েছে, একজন ড্রাইভার মাসে ১৫ দিনের বেশি গাড়ি চালাতে পারে না। ১৫ দিনের আয় দিয়ে তাকে এক মাস সংসার পরিচালনা করতে হয়। তিনি বলেন, আইনে জেল নিয়ে যা আছে সেটা নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমরা সরকারের কাছে দাবি করেছি, একজন ড্রাইভার যদি দুর্ঘটনা ঘটান, সে যদি দীর্ঘদিন জামিন না পান, তবে ড্রাইভারের ঘাটতি পড়ে যাবে। বছরে সারা দেশে ৩-৪ হাজার দুর্ঘটনা ঘটে। তাহলে ৩-৪ হাজার ড্রাইভারের ঘাটতি পড়ে যাবে। আমরা এখনো কিন্তু ৩-৪ হাজার ড্রাইভার প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করতে পারছি না। আমাদের সেই ক্যাপাসিটি নেই। এ কারণেই বলেছি দুর্ঘটনা ঘটালে তদন্ত করে বিচার হবে। কিন্তু সে (ড্রাইভার) যেন জামিনটা পায়। এতে ঘাটতির জায়গাটা পূরণ হবে। রাস্তায় আবার কোনো অচলাবস্থা হবে কিনা- জানতে চাইলে শাজাহান খান বলেন, শোনেন, আমরা কেউ ধর্মঘট ডাকিনি। নানা অপপ্রচারের কারণে শ্রমিকরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই অচলাবস্থা করেছে।

আপনারা সড়ক দুর্ঘটনার তদন্তে পুলিশের সঙ্গে বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটকে (এআরআই) সংযুক্ত করার কথা বলেছেন। তবে কি পুলিশের ওপর আপনাদের আস্থা নেই, জানতে চাইলে  শাহাজান খানের পরিবর্তে জবাব দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ইনভেস্টিগেশন পুলিশই করবে, এটাই আইন। তবে যখনই প্রয়োজন হবে সিরিয়াস কোনো অ্যাকসিডেন্ট হলে তখন এক্সপার্ট অপিনিয়নের জন্য এআরআইর পরামর্শ নেওয়া হবে। জটিল ও স্পর্শকাতর কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে আমাদের পুলিশরাই এআরআইর পরামর্শ নিচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও সেগুলো নেবেন। এটাই সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সর্বশেষ খবর