মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
চট্টগ্রাম-৮ উপনির্বাচনে উপস্থিতি কম

জিতল নৌকা ফের ভোট চায় বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

ইভিএমে চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন আহমেদ বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন। গতকাল সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ শেষে গণনার পর বেসরকারি এ ফলাফল ঘোষণা করা হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটারের উপস্থিতি কম ছিল। কয়েক কেন্দ্রের বাইরে উত্তেজনারও সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে বিএনপির তরফ থেকে এ নির্বাচন স্থগিত করে পুনরায় নির্বাচন দাবি করা হয়। গতকাল সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনের উপনির্বাচনের ভোট গণনায় মোট ১৭০টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করেন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান। বেসরকারিভাবে ভোটের ফলাফলে নৌকা প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন আহমেদ পেয়েছেন ৮৭ হাজার ২৪৬ ভোট এবং নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিএনপির আবু সুফিয়ান পেয়েছেন ১৭ হাজার ৯৩২ ভোট। অন্য চার প্রার্থীর মধ্যে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সৈয়দ মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন (চেয়ার) পেয়েছেন ৯৯২, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ফ্রন্ট (বিএনএফ) এস এম আবুল কালাম আজাদ (টেলিভিশন) পেয়েছেন ১ হাজার ১৮৫ ভোট, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির বাপন দাশগুপ্ত (কুঁড়েঘর) পেয়েছেন ৬৫৬ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ এমদাদুল হক (আপেল) পেয়েছেন ৫৬৭ ভোট। উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনের উপনির্বাচনে দীর্ঘ ৪৭ বছর পর আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন আহমেদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেন। এর আগে ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ চট্টগ্রাম-৮ আসনের নির্বাচনে (তৎকালীন চট্টগ্রাম-৭ আসন) এম এ মান্নান নির্বাচিত হন। এরপর থেকেই বিএনপি এবং জোট-মহাজোটের প্রার্থীরা বিভিন্ন সময় জয়ী হয়েছিলেন।

ভোটার উপস্থিতি ছিল কম : সরেজমিন সকাল থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি কম দেখা গেছে। কয়েকটি কেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগ-বিএনপি প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ, লাঠি নিয়ে মহড়ার ফলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ কারণে ভোটারের সংখ্যা কম হয়। বিভিন্ন কেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ সরকার সমর্থকদের অবস্থান করতে দেখা যায়। আবার অনেক কেন্দ্রে বিএনপি প্রার্থীর এজেন্ট ছিল না, দেখা যায়নি কর্মী-সমর্থকদেরও।

সকালের দিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ চলছে। ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।’ বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান বলেন, ‘সরকার প্রহসনমূলক নির্বাচন পরিচালনা করছে। কেন্দ্রে সমর্থক না আসা, এজেন্টদের থাকতে না দেওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ করাসহ নানা কারণে ভোটাররা কেন্দ্রে আসতে পারেননি।’ বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আছিয়া খাতুন বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি ভালো ছিল। তবে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার বিষয়ে অভিযোগ এলে প্রশাসনিক দায়িত্বশীলরা তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।’ নগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। ভোটাররা শান্ত পরিবেশে ভোট প্রদান করেছেন। ভোটের সামগ্রিক পরিবেশ শান্ত ছিল।’

পুনরায় নির্বাচন দাবি বিএনপির : নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচন স্থগিত করে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির দলীয় প্রার্থী আবু সুফিয়ান এবং বিএনপি নেতারা। গতকাল দুপুরে নির্বাচন কমিশনার বরাবর দেওয়া লিখিত অভিযোগে তিনি এ দাবি জানান। তার দাবি, অনেক কেন্দ্রে ভোটারদের ইভিএম মেশিনে আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা নৌকায় ভোট দিয়েছে। তারা ১৭০টি কেন্দ্রের মধ্যে অস্ত্রের মুখে ১২০টি কেন্দ্র দখল করে নেয়। বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীকে মারধর এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে অন্তত ৫০ জনকে আহত করে। বেলা ১টায় নগরীর নাসিমন ভবনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আবু সুফিয়ান একই অভিযোগ তুলে নির্বাচন স্থগিত করে পুনরায় নতুন তারিখ ঘোষণার জন্য ইসির কাছে দাবি জানান। এ সময় তিনি বলেন, ভোটাররা যেন ভোট দিতে না যায় সেজন্য ভয়ভীতি সৃষ্টি করা হয়েছে। ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য রাতে আমার এজেন্টদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। যারা সকালে ভোট কেন্দ্রে যাচ্ছিল তাদের অনেককে রাস্তায় মারধর করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর