বাংলাদেশে কভিড-১৯ পরিস্থিতি ক্রমেই বেড়ে যাওয়ায় আরেক দফা হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন শর্তসাপেক্ষে সাময়িক মুক্তি পাওয়া বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। প্রথম দফায় ১৪ দিন শেষ হয়েছে গতকাল। তবে বাসা থেকেই তার চিকিৎসা চলবে যথারীতি। কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়মিত দেখভাল করছেন। একজন নার্স বাসায় রাখা হয়েছে তার থেরাপির জন্য। বেগম জিয়ার ডায়াবেটিস এখন প্রায় স্বাভাবিক। তবে পায়ের গোড়ালি এখনো ফুলে গেছে। দুই হাতের আঙ্গুল একটু বেঁকে গেছে। তিনি এখনো দাঁড়াতে পারছেন না। এখনো বেগম জিয়া স্বাভাবিক খাবারও খেতে পারছেন না। সুপ জাতীয় খাবারই তার পছন্দ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। জানা যায়, বেগম জিয়ার সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় নেতা-কর্মীদের দেখা সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে তিনি কাউকে ডেকে পাঠাতে পারেন। বাসা থেকেই প্রয়োজনে কারও মাধ্যমে তিনি দিকনির্দেশনাও দিচ্ছেন। তবে সারা বিশ্বে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বেগম জিয়া বেশ উদ্বিগ্ন। নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষকে তিনি জনগণের পাশে দাঁড়াতে দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন বলে একাধিক চিকিৎসক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের বোন সেলিমা ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। তবে ডায়াবেটিস একটু কমেছে। এখনো তিনি স্বাভাবিকভাবে খেতে পারেন না।
গত ২৫ মার্চ বিএসএমএমইউ হাসপাতাল থেকে খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ওঠেন। ২৬ মার্চ থেকে তার হোম কোয়ারেন্টাইন শুরু হয়। সেই হিসেবে গতকাল ৮ এপ্রিল বুধবার ১৪ দিন পূর্ণ হয়।
পরিবারের সদস্যরা বলছেন, খালেদা জিয়া এখনো তিনি হুইল চেয়ারে চলাফেরা করছেন। নতুন করে কোনো রোগ হয়নি। তবে পারিবারিক পরিবেশে থাকার কারণে দিন দিন মানসিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। খাবারের প্রতি রুচিও কিছুটা বেড়েছে। লন্ডনে থাকা বড় ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়েদা রহমানের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছে। তিনি কোয়ারেন্টাইনে থাকার কারণে শুধু নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে বোন সেলিমা ইসলাম এবং ভাইয়ের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা এবং ব্যক্তিগত চিকিৎসকেরা তার সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করছেন। বাসায় গৃহকর্মী ফাতেমা ছাড়াও একজন নার্স বেগম জিয়াকে দেখাশোনা করছেন। খালেদা জিয়ার চিকিৎসক দলের সদস্য বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের পুত্রবধূ ডা. জোবায়েদা রহমানের তত্ত্বাবধায়নে ম্যাডামের চিকিৎসা চলছে। তার আগের চিকিৎসার সঙ্গে মিল রেখে কিছুটা পরিবর্তন করে নতুন চিকিৎসা হচ্ছে। আগে তো তার নিয়মিত ফলোআপ হতো না, এখন সেটা নিয়মিত হচ্ছে। দুই বছরের বেশি সময় তিনি অসুস্থ, সেখান থেকে পরিবর্তনের জন্য তার আধুনিক চিকিৎসা প্রয়োজন। তবে বর্তমানে সামগ্রিক পরিস্থিতি মাথায় রেখে আমরা তার চিকিৎসা শুরু করেছি। বিএনপির সিনিয়র নেতারা জানান, তারা নিজেরাও সবাই এখন স্বেচ্ছায় হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। এটা করোনাঝুঁকি থাকা পর্যন্ত চলবে। একইভাবে বেগম জিয়াও চলমান অবস্থায় হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। তার শারীরিক অবস্থা যতদিন না ভালো হবে নেতা-কর্মীরাও দেখা সাক্ষাৎ করবেন না। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনাঝুঁকি থাকা পর্যন্ত বেগম জিয়া হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকে চিকিৎসা করবেন। তিনি সুস্থ হয়ে উঠলে নেতা-কর্মীরা দেখা সাক্ষাৎ করবে।