বুধবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

হাসপাতালে নতুন ঝুঁকি উপসর্গহীন রোগী

হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসকসহ আক্রান্ত ৭২৯ স্বাস্থ্যকর্মী

জয়শ্রী ভাদুড়ী

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ওয়ার্ড, কেবিন ও করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) সাতজন রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাদের মধ্যে তিনজনের জরুরি অপারেশনের প্রয়োজন পড়লে বিভিন্ন পরীক্ষার সঙ্গে করোনা টেস্ট করেন চিকিৎসকরা। প্রতিবেদনে দেখা যায় তারা করোনা পজেটিভ। তাদের মধ্যে করোনার কোনো উপসর্গ ছিল না। গতকাল ওই হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্সসহ ২৯ জনের করোনা পজেটিভ রিপোর্ট এসেছে। উপসর্গহীন রোগীদের নিয়ে ঝুঁকিতে পড়েছে হাসপাতালগুলো। জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন এমন রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কাজল কুমার কর্মকার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হাসপাতালে আটজন চিকিৎসক, ১৫ জন নার্স, দুজন ওয়ার্ড মাস্টার, তিনজন ওয়ার্ডবয় ও একজন আনসার সদস্য ও আটজন রোগী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। হাসপাতালের কেবিন ব্লক, ৩ নম্বর ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড লকডাউন করা হয়েছে।

শুধু এই হাসপাতাল নয়, করোনা পজেটিভ উপসর্গহীন রোগী শনাক্ত হচ্ছে সারা দেশেই। ব্যক্তি নিজের অজান্তেই বয়ে বেড়াচ্ছেন প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। দেশজুড়ে এখন যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের অধিকাংশই ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর ফেরত। নির্দেশনা অনুযায়ী স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ এসব আক্রান্ত এলাকা থেকে অন্য জায়গায় গেলে নমুনা সংগ্রহ করে টেস্ট করছে। এদের মধ্যে আক্রান্তের হার বেশি। অধিকাংশ রোগী পাওয়া যাচ্ছে উপসর্গহীন। উপসর্গ ছাড়াই রোগটি কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়ায় এ মুহূর্তে ঠিক কতজন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। উপসর্গহীন রোগীর কারণে বাড়ছে উদ্বেগ। তাই দ্রুত রোগী শনাক্তে টেস্টের সংখ্যা বাড়াতে জোর দিয়েছে সরকার। গত কয়েকদিন ধরে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন চিকিৎসকরা। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাধারণ সম্পাদক ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গতকাল পর্যন্ত সারা দেশে ৩১৪ জন চিকিৎসক, ১৫২ জন নার্সসহ ২৬৩ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। সবমিলিয়ে এ পর্যন্ত ৭২৯ জন স্বাস্থ্যকর্মী সেবা দিতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। ২২ এপ্রিল সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। তবে তার শরীরে কোনো লক্ষণই ছিল না। গাজীপুর থেকে সিলেট আসার কারণে সতকর্তামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তার নমুনা পরীক্ষা করিয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এতেই করোনা পজেটিভ ধরা পড়ে। সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে কর্মরত স্টোরকিপার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু সর্দি, জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টের কোনো উপসর্গই ছিল না তার। উপসর্গ না থাকা অবস্থায় করোনা শনাক্ত হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। তারা বলছেন, এমনটা হলে বোঝার সাধ্য নেই কে আক্রান্ত আর কে নয়। উপসর্গহীন ব্যক্তি সবার মাঝে ঘুরে বেড়ালেও কেউ সাবধান হতে পারবেন না। ফলে আরও অনেকের মধ্যে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াও কারও করোনা পজেটিভ হতে পারে। সবার মধ্যে উপসর্গ থাকবে, এমন নয়। ৫০-৮০ ভাগ লোকের উপসর্গ থাকে না। তারা কোনোরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা কিংবা চিকিৎসা ছাড়াই শারীরিক প্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়ে ভাইরাস প্রতিহত করে সুস্থ হয়ে ওঠেন। ঝালকাঠি সদর উপজেলার একটি গ্রামে ৮ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে ফেরে একটি পরিবার। তাদের করোনার উপসর্গ ছিল না। তাদের ছয় মাসের বাচ্চাসহ তিনজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তিনজনেরই করোনা পজেটিভ প্রতিবেদন এসেছে। হবিগঞ্জে আক্রান্ত ১১ জন রোগী পাওয়া গেছে, তাদের মধ্যে করোনার কোনো উপসর্গ পাওয়া যায়নি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর