সোমবার, ১১ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

বিশ্বে মৃত্যু বেড়ে দুই লাখ ৮১ হাজার, আক্রান্ত ছাড়াল ৪১ লাখ

প্রতিদিন ডেস্ক

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে (কভিড-১৯) গত শনিবার ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে মৃতের সংখ্যা নতুন করে চার হাজার বেড়ে মোট সংখ্যা দুই লাখ ৮১ হাজার ছাড়িয়েছে। আগের দিন ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার। গতকাল বিশ্বে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ বেড়ে ৪২ লাখের কাছাকাছি চলে যায়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের ২১২টি দেশ ও অঞ্চলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। এতে সবচেয়ে বিপর্যস্ত দেশ এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে শনিবার পর্যন্ত ১৩ লাখ ৪৮ হাজারের  বেশি কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছে ৮০ হাজারের বেশি মানুষ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী- আক্রান্ত ও মৃতের দিক থেকে এখনো সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে আমেরিকা। মৃতের সংখ্যায় আমেরিকার পরেই রয়েছে ইউরোপের দেশ ব্রিটেন। দেশটিতে মারা গেছে ৩১ হাজার ৫৮৭ জন। এ ছাড়া ইতালিতে ৩০ হাজার ৩৯৫, স্পেনে ২৬ হাজার ৪৭৮, ফ্রান্সে ২৬ হাজার ৩১০, ব্রাজিলে ১০ হাজার ৬৫৬ জন, বেলজিয়ামে ৮ হাজার ৫৮১, জার্মানিতে ৭ হাজার ৫৪৯ জন মৃত্যুবরণ করেছে। এদিকে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক দেশে পরীক্ষার হার কম হওয়ায় এসব পরিসংখ্যানে বাস্তব চিত্র উঠে আসেনি এবং আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন। খবরে আরও বলা হয়েছে, স্পেনসহ কয়েকটি দেশে  দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে হ্রাস পাচ্ছে, কিন্তু লকডাউনের বিধিনিষেধ শিথিল করায় এসব দেশে প্রাদুর্ভাবের ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ শুরু হতে পারে বলেও আশঙ্কা আছে। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের পরিচালক লি বিন বলছেন, মহামারী একটি ‘বড় পরীক্ষা’ ছিল। আর তা দেশের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতাগুলো দেখিয়ে দিয়েছে।

রাশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ছাড়িয়েছে : রাশিয়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। রবিবার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ১১ হাজার ১২ জনের শরীরে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দুই লাখ ১০ হাজার হয়েছে। রুশ সরকারের করোনাভাইরাস টাস্কফোর্স জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায়  দেশটিতে এ ভাইরাসে নতুন করে আরও ৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে  মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল এক হাজার ৯১৫ জনে। উল্লেখ্য, আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে এরই মধ্যে ফ্রান্স ও জার্মানিকে ছাড়িয়ে গেছে রাশিয়া। সবচেয়ে  বেশি আক্রান্ত দেশগুলোর তালিকায় দেশটির অবস্থান এখন পঞ্চম।

খবরে বলা হয়েছে, রাশিয়ায় মোট আক্রান্তের প্রায় অর্ধেকই রাজধানী মস্কোর বাসিন্দা। মস্কোর মেয়র  সের্গেই সোবিয়ানিন আশঙ্কা করছেন, সরকারিভাবে শনাক্তের তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যা তিন গুণ হতে পারে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত সোবিয়ানিন বলেন, পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর ফলে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। আমরা যে বিপুল সংখ্যক মানুষকে শনাক্ত করতে পারছি এটি ইতিবাচক, নেতিবাচক নয়। কারণ এখন তাদেও কোয়ারেন্টাইনে রাখা যাবে এবং ভাইরাসের বিস্তার মন্থর হবে। আরেক খবরে বলা হয়েছে, ১৯৪৫ সালের ৯ মে জার্মানিকে হারিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জয়ী হয় রাশিয়া। প্রতি বছর বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবে দেশটিতে এই দিবসটি পালন করা হয়। তবে ওই যুদ্ধ জয়ের ৭৫ বছরের মাথায় এবার দিবসটির আয়োজন বা বিজয়োৎসব সীমিত করে মস্কো। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে এমনকি এবার দিবসটিতে কোনো বিজয় র?্যালিরও আয়োজন করা হয়নি। অবশ্য সীমিত আকারে কিছু আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে কর্তৃপক্ষ। ক্রেমলিনের দেয়ালের বাইরে যুদ্ধের স্মারকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। এ সময় তিনি যুদ্ধের সময় সোভিয়েত বাহিনীর বীরত্ব ও আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন। দিবসটিকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে উল্লেখযোগ্য কোনো জমায়েত না হলেও অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় এ সংক্রান্ত নানা পোস্ট শেয়ার করেছেন।

চীনে আবারও সুস্থ রোগীদের ১৫ শতাংশ আক্রান্ত : নতুন এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, চীনে যারা মহামারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের মধ্যে ৫ থেকে ১৫ শতাংশ  রোগী সুস্থ হওয়ার পর ফের কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হন। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের করোনা নিয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য উন্মোচন করেছেন পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিভাগের পরিচালক ওয়াং গুইকিয়াং। তিনি জানান, একেক অঞ্চলে সুস্থ রোগীর পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার হার ভিন্ন। যেমন কোথাও এই হার ছিল মাত্র ১ শতাংশ। পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্স্ট হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিভাগের পরিচালক ওয়াং গুইকিয়াং বলেন, বেশিরভাগ সুস্থ রোগী যারা কভিড-১৯ পজিটিভ হিসেবে পুনরায় শনাক্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে এখনো রোগটির কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি। এ নিয়ে উদ্বেগের কথাও জানান তিনি। খবরে বলা হয়, মহামারী এই রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা  শেষে ফের আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা বেড়েছে চীনে। তবে এটা  কেন হচ্ছে এ নিয়ে গবেষক, চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা এখনো তেমন কোনো উপসংহারে পৌঁছাতে পারেননি। যদিও অনেকের ধারণা, করোনা পরীক্ষার ফলাফলে অসঙ্গতির কারণেও এমনটা হতে পারে।

সর্বশেষ খবর