শুক্রবার, ৩১ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

সাহেদের অস্ত্র মামলার চার্জশিট

সঙ্গে নিয়ে সাতক্ষীরা সীমান্তে অভিযানে র‌্যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাহেদের অস্ত্র মামলার চার্জশিট

রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদের অস্ত্র মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। একই সংস্থা দ্রুততম সময়ে জেকেজির প্রতারণার অন্য মামলার চার্জশিটও দাখিল করবে বলে জানিয়েছে। তবে তদন্তে এরই মধ্যে করোনার নমুনা পরীক্ষা না করেই ভুয়া সার্টিফিকেট দেওয়ার যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া রাজধানীর পল্লবী থানায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় কোনো জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায়নি গোয়েন্দা পুলিশ। তারা বুধবার রাতে বিভিন্ন এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে অজ্ঞান পার্টির ৫৯ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। এরা কোরবানির পশুর হাটকে টার্গেট করে তৎপরতা শুরু করেছিল।

গতকাল দুপুর ১২টায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন।

তিনি বলেন, ‘রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদের একটি অস্ত্র মামলার তদন্ত আমরা শেষ করেছি। ১৬৪ ধারায় দুই সাক্ষীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে এবং তদন্ত শেষে এ মামলার চার্জশিট দাখিল করতে যাচ্ছি। সাহেদ যখন আমাদের কাছে রিমান্ডে ছিলেন, তখন তার ভাষ্য অনুযায়ী তার ব্যবহার করা গাড়িটি ও গাড়ি থেকে অবৈধ অস্ত্র আমরা জব্দ করি। অস্ত্র মামলায় সাজা নিশ্চিত করতে যে ধরনের তথ্য-প্রমাণ দরকার হয়, আমরা সবকিছুর সত্যতা নিশ্চিত করেছি এবং তা সত্য প্রমাণিত হয়েছে। এখন আদালত বিচার করে এর রায় দেবে।’ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আবদুল বাতেন বলেন, ‘অস্ত্র মামলার ক্ষেত্রে ১৫ দিনে চার্জশিট দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আমরা এই সময়ের মধ্যেই দাখিল করেছি। অস্ত্র পজিশনে পাওয়া গেলে সেটা দন্ডনীয় অপরাধ। তিনি যদি অস্ত্র ব্যবহার নাও করে থাকেন, তবু। ব্যালাস্টিক অস্ত্র প্রমাণ করার কোনো উপাদান সেখানে ছিল না। অস্ত্র মামলার ক্ষেত্রে আইন এটাই বলে যে পজিশন এবং নলেজ। এ দুটি যদি আপনি নিশ্চিত করতে পারেন, তবে অপরাধ বিবেচিত হবে। এ ছাড়া সাহেদের মাদক মামলার চার্জশিট কয়েক দিন পরে দেওয়া হবে।’

জেকেজির প্রতারণা মামলার চার্জশিট শিগগিরই : জেকেজির বিষয়ে আবদুল বাতেন বলেন, ‘তাদের প্রতারণার বিষয়ে তদন্ত শেষ হয়েছে। তাদের কাছে পাওয়া কম্পিউটারসহ বিভিন্ন মেশিনপত্র সিআইডির বিশেষজ্ঞ দিয়ে পরীক্ষা করিয়েছি এবং ফরেনসিকের রেজাল্টও আমাদের কাছে এসেছে। ওই রেজাল্টে কতগুলো করোনার জাল সার্টিফিকেট তৈরি করা হয়েছিল, কোন কম্পিউটার থেকে তৈরি করা হয়েছে, এর প্রমাণও আমাদের হাতে এসেছে।

প্রতারক সাহেদকে নিয়ে র‌্যাবের দল সাতক্ষীরায় : রিজেন্টের সাহেদকে যেখান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী সেই এলাকা দেবহাটার কোমরপুর বেইলি ব্রিজের ওপর থেকে গতকাল ঘুরিয়ে এনেছে র‌্যাব।

রিজেন্ট হাসপাতালে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিয়ে প্রতারণা ফাঁস হওয়ার পর পালিয়ে যাওয়া সাহেদকে ১৬ জুলাই ভারতের সীমান্তবর্তী দেবহাটা থেকে গ্রেফতার করেছিল র‌্যাব। গতকাল বিকাল ৪টা ১১ মিনিটে সাহেদকে গ্রেফতারের স্থান দেবহাটার পারুলিয়া ইউনিয়নের শাখরা কোমরপুরে নিয়ে আসে র‌্যাব। লাবণ্যবতী নদীর ওপর কোমরপুরের বেইলি ব্রিজে নিয়ে আসা হয় তাকে।

এ সময় উৎসুক জনতা ও স্থানীয় সাংবাদিকদের ব্রিজ থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে সরিয়ে ৫-৭ মিনিট কথাবার্তা বলে সাহেদকে গাড়িতে ওঠায় র‌্যাব। সাহেদের মুখমন্ডল ছিল হেলমেটে ঢাকা, গায়ে ছিল গেঞ্জি ও র‌্যাবের নিরাপত্তা জ্যাকেট। ব্রিজের ওপর থেকেই আবার গাড়িতে উঠিয়ে ফের খুলনার উদ্দেশে রওনা দেয় র‌্যাব। এ সময় সাংবাদিকদের কোনো ধরনের প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকতে বলেন র‌্যাব কর্মকর্তারা।

তবে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, দেবহাটা থানায় দায়ের করা অস্ত্র মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাহেদকে এখানে নিয়ে আসা হয়। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তাকে আবার খুলনা র‌্যাব-৬ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

উল্লেখ্য, দেবহাটা উপজেলার শাখরা কোমরপুরের লাবণ্যবতী খাল দিয়ে ভারতে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করেছিলেন সাহেদ। তবে লাবণ্যবতী ব্রিজের নিচ থেকে র‌্যাব সদস্যরা তাকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আটক করতে সক্ষম হন। এ সময় তার কাছ থেকে একটি পিস্তল ও কয়েক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় র‌্যাবের উপসহকারী পরিচালক নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে দেবহাটা থানায় অস্ত্র আইনে মামলা করেন। এ মামলায় ২৬ জুলাই সাহেদের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন সাতক্ষীরার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক রাজিব কুমার রায়।

সর্বশেষ খবর