শনিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

পাঁচ বছরে পোশাক কারখানায় বেশি অগ্নিকান্ড ২০২০ সালে

মাহবুব মমতাজী

গত পাঁচ বছরে পোশাক কারখানায় সবচেয়ে বেশি অগ্নিকান্ড ঘটেছে ২০২০ সালে। এ বছরগুলোয় তৈরি পোশাক ও শিল্প কারখানায় ৫ হাজার ৮৩৪টি অগ্নিকান্ডে ২৫০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক শিল্পকারখানা। এ তথ্য ফায়ার সার্ভিসের।

বিগত বছরের ঘটনাগুলোর মধ্যে ২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর একটি। ওইদিন ভোর ৫টা ৫৫ মিনিটে গাজীপুরের টঙ্গীর টাম্পাকো ফয়েলস কারখানায় আগুন লাগে। পুড়ে মারা যান ৪১ জন। ক্ষতি হয় কয়েক কোটি টাকার সম্পদ। এ ছাড়া গত কয়েক বছরে পোশাক ও শিল্প কারখানায় ছোট-বড় কয়েক হাজার অগ্নিকান্ড ঘটেছে। এসব ঘটনায় ব্যাপক হতাহত ও আর্থিক ক্ষতি হয়েছে শত কোটি টাকার।

ফায়ার সার্ভিসের তথ্যানুযায়ী গত পাঁচ বছরে পোশাক ও শিল্প কারখানায় ৫ হাজার ৮৩৪টি আগুনের ঘটনায় ২৫০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক শিল্পকারখানা। ১০ বছরে পোশাক ও শিল্প কারখানায় বড় বড় অগ্নিকান্ড ঘটে। এসব ঘটনার পর সরকারের উচ্চমহল থেকে ফায়ার সেইফটির জন্য নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তবে নিয়মিত প্রশিক্ষণ, মহড়া ও শিল্পকারখানাগুলো কমপ্লায়েন্স হওয়ায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা অনেক কমেছে বলে দাবি করেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সারা দেশে গার্মেন্টে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ২০১৭ সালের পর কিছুটা কমে আসে। তবে গত বছর আবার তা বাড়ে। ২০১৬ সালে সারা দেশে শিল্পকারখানায় ১ হাজার ১৬৫টি অগ্নিকান্ড ঘটে। পরের বছর আগুনের ঘটনা ছিল ১ হাজার ১৯টি। ২০১৮ সালে এসে অগ্নিকান্ড কিছুটা বেড়ে যায়। সে বছর ১ হাজার ১৩১টি দুর্ঘটনা ঘটে। পরবর্তী দুই বছর ধারাবাহিকভাবে কমেছে আগুনের ঘটনা। ২০১৯ সালে ৯৯৭টি অগ্নিকান্ড ঘটে। ২০২০ সালে অর্ধেকের বেশি কমে গিয়ে ঘটে মাত্র ৩৮৩টি। অন্যদিকে ২০১৬ সালে সারা দেশে গার্মেন্টে ২৫৮টি অগ্নিকান্ড ঘটে। পরের বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭০-এ। এরপর টানা দুই বছর আগুনের ঘটনা কমে ছিল। ২০১৮ সালে ছিল ১৭৩ এবং ২০১৯ সালে ১৬৫টি। কিন্তু ২০২০ সালে অগ্নিকান্ড বেড়ে যায়। সে বছর এ ধরনের ঘটনা ঘটে ২৭৩টি। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধন এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘শিল্পকারখানায় ফায়ার সার্ভিস নিয়মিত পরিদর্শন করছে। নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও মহড়া হচ্ছে। সরকার ও বিদেশি বায়ারদের চাপে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান কমপ্লায়েন্সসহ নানা ফায়ার সেইফটি মেজারমেন্ট নিয়েছে। ফলে আগুনের ঘটনা কমেছে। এখনো অনেক শিল্প ও পোশাক কারখানা নন-কমপ্লায়েন্স রয়েছে। এসব শিল্পকারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে। যেসব প্রতিষ্ঠান যথাযথ ফায়ার সেইফটির ব্যবস্থা নিচ্ছে না তাদের ফায়ার সার্ভিস থেকে কোনো ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে না। ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, মোট অগ্নিকান্ডের ৩৯ শতাংশ ঘটনা ঘটে বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে। অন্যদিকে সারা দেশে গার্মেন্ট ও শিল্পকারখানার মধ্যে সবচেয়ে বেশি অগ্নিকান্ড ঘটে ঢাকা বিভাগে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম। সবচেয়ে কম আগুনের ঘটনা ঘটেছে সিলেটে। গত ১০ বছরে পোশাক ও শিল্প কারখানায় ঘটা বড় বড় অগ্নিকান্ডের মধ্যে আছে ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলীর ঘটনা। এতে ১২৪ জন নিহত হন। এর পরের বছর সাভারের আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশনসের অগ্নিকান্ডে মারা যান ১১১ জন। ২০১৬ সালে টঙ্গীর টাম্পাকো ফয়েলস কারখানার অগ্নিকান্ডে মারা যান ৪১ জন। এ ছাড়া অগ্নিকান্ডে গরিব অ্যান্ড গরিব গার্মেন্টে ২১, হা-মিম গ্রুপের গার্মেন্টে ২৯, মোহাম্মদপুরে স্মার্ট এক্সপোর্ট গার্মেন্টস লিমিটেডে সাত নারী পোশাকশ্রমিক নিহত হন। বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকান্ডে ২৫ ও চুড়িহাট্টায় ৭১ জন মারা যান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর