মঙ্গলবার, ৬ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

দোকান খোলার দাবিতে অবরোধ বিক্ষোভ ফরিদপুরে সংঘর্ষ

নিজস্ব প্রতিবেদক ও ফরিদপুর প্রতিনিধি

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে গতকাল থেকে এক সপ্তাহের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। এর আওতায় গণপরিবহন চলাচল ও বিপণিবিতানগুলো বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় চার ঘণ্টা দোকান খোলা রাখার দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন নিউমার্কেট, পুরান ঢাকার ইসলামপুর ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এলাকার শত শত ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারী। ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে ফরিদপুরে।

গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর নিউমার্কেট ও গাউছিয়ায় দোকান মালিক ব্যবসায়ী এবং কর্মচারীরা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট খোলা রাখার দাবি জানান তারা। ‘এবারের লকডাউন মানি না, মানব না’ স্লোগান দিতে থাকেন বিক্ষুব্ধরা। তারা মার্কেটের সামনের সড়কে দাঁড়িয়ে       এসব স্লোগানে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় ওই এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এতে নিউমার্কেট থেকে সায়েন্সল্যাব সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঘণ্টা দুয়েক মিছিল-সমাবেশ করার পর ব্যবসায়ীরা গাউছিয়া ও আশপাশ এলাকায় ছোট ছোট জটলা করে অপেক্ষা করছিলেন ইতিবাচক কিছু শোনার আশায়। তবে গাউছিয়া মার্কেট ও আশপাশের মুন ম্যানশন শপিং সেন্টার, ইশতিয়াক ম্যানশন, নূর ম্যানশন, হকার্স মার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেটের দোকান মালিক ও কর্মচারীরা রাস্তায় নামলেও নিষেধাজ্ঞা ভেঙে কাউকে দোকান খুলতে দেখা যায়নি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সরকার দোকান খোলার সময়সীমা বেঁধে দিলে আমরা উপকৃত হব। ওই সময়ের মধ্যে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা করতে চাই। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে করোনায় মরতে হবে। আর দোকানপাট বন্ধ থাকলে না খেয়ে মরতে হবে। এখন দুই দিকেই মরণ। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা দোকান খোলা রাখতে চাই। কারণ এই একটা দোকানের আয় দিয়ে আমাদের পরিবার চলে। আয় না থাকলে আমরা চলব কী করে?’

নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন বলেন, ‘সরকার বলছে এক সপ্তাহের লকডাউন। অথচ আজকে (গতকাল) সকাল থেকে আমরা দেখছি তা ঢিলেঢালাভাবে পালিত হচ্ছে। শিল্পকারখানা খোলা, গাড়ি চলছে, সবই চলছে শুধু মার্কেট বন্ধ! সব খোলা রেখে দোকান বন্ধ রাখবে তা হতে পারে না। যদি লকডাউন হয় তাহলে শতভাগ লকডাউন হোক। আর যদি অনেক কিছু খোলা থাকে তবে মার্কেট খোলা রাখতে হবে। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে মার্কেট খোলা রাখতে চাই। আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) আমাদের মার্কেট বন্ধ, বুধবার হয়তো আমরা খুলে ফেলার চিন্তা করছি।’ ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ধানমন্ডি জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) ফয়জুর রহমান বলেন, ‘মার্কেট খুলে দেওয়ার দাবিতে ব্যবসায়ীরা সকাল থেকে বিক্ষোভ করেন। প্রচুর মানুষ সমাগমের কারণে এ বিক্ষোভের মধ্যেও করোনাভাইরাসের বিস্তৃতি ঘটবে। ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করছি যাতে সরকারের নির্দেশনা যথাযথভাবে তারা পালন করেন।’ এদিকে সরকার-ঘোষিত কঠোর নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় পুরান ঢাকার ইসলামপুর-পাটুয়াটুলী রোডে কয়েক শ ব্যবসায়ী রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। তারা বলেছেন, ‘গরিব মারার নিষেধাজ্ঞা আমরা মানি না, মানব না। আগে মানুষের পেটে ভাত দিন, তারপর নিষেধাজ্ঞা। গত বছর লকডাউনের কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। তা এখনো পুষিয়ে না উঠতেই আবারও নিষেধাজ্ঞা। সামনে ঈদ। তাই ঈদ উপলক্ষে দোকান খুলে দিতে হবে। এ ভরা মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা মানি না।’ কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা সকাল থেকে রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট খোলা রাখার দাবি জানিয়েছেন। আমরা তাদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিয়েছি।’ এদিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে গতকাল গণপরিবহন না পেয়ে বিক্ষোভ করেছেন কারখানা শ্রমিকরা। রায়েররবাগ বাসস্ট্যান্ডে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এ বিক্ষোভ শুরু করতে প্রায় ১৫ মিনিট পর শ্রমিকদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, ১০ থেকে ১৫ জন শ্রমিক কর্মস্থলে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। বাস না পেয়ে তারা রাস্তায় নামেন। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো আরও খবর-

ফরিদপুরে পুলিশের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের ব্যাপক সংঘর্ষ উপজেলা পরিষদে আগুন : ফরিদপুরের সালথায় কঠোর নিষেধাজ্ঞার সময় দোকান খোলা নিয়ে সহকারী ভূমি কমিশনারের (এসিল্যান্ড) সঙ্গে ব্যবসায়ীর বাদানুবাদের জেরে পুলিশের সঙ্গে স্থানীয়দের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় শুরু হওয়া সংঘর্ষের একপর্যায়ে কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ লোক সালথা থানা ও উপজেলা পরিষদ ঘেরাও করে বিভিন্ন অফিসে ঢুকে ভাঙচুর চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট-টিয়ার শেল ছুড়ে। সংঘর্ষ থামাতে ফরিদপুর থেকে র‌্যাব ও পুলিশের সদস্যরা ঘটানস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারেনি। রাত ১০টার দিকে বিক্ষুব্ধরা উপজেলা পরিষদের বেশ কিছু কক্ষ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। সন্ধ্যা ৭টা থেকে শুরু হওয়া এ সংঘর্ষ মধ্যরাত পর্যন্ত চলে। স্থানীয়রা জানান, বিকালে সালথার ফুকরা বাজারে এসিল্যান্ডের নেতৃত্বে একদল পুলিশ বাজারে গিয়ে অভিযান চালায়। এ সময় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এসিল্যান্ডের বাদানুবাদ হয়। এ সময় অভিযান সংশ্লিষ্টরা এক ব্যবসায়ীকে লাঞ্ছিত করেন।

রাজশাহীতে বিক্ষোভ : নিষেধাজ্ঞায়ও রাজশাহীতে মার্কেট খুলে রাখার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল সকালে মহানগরীর সাহেববাজারে রাস্তায় নামেন ব্যবসায়ীরা। তারা দাবি করেন, সামনে ঈদ। এ সময় তাদের মার্কেট বন্ধ থাকলে আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির মুখে পড়বেন। বেলা ১১টার দিকে রাজশাহীর বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারীরা সাহেববাজারে আরডিএ মার্কেটের সামনে জড়ো হন। তারা মার্কেটের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন। সাহেববাজার বড় রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। দোকান খুলে দেওয়ার দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। কেউ কেউ শুয়ে পড়েন রাস্তায়। পরে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিক্ষোভ : সরকার-ঘোষিত নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। গতকাল বেলা ১১টায় সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড় হাজী আহসান উল্লাহ সুপার মার্কেটের সামনে সড়ক অবরোধ করে শতাধিক ব্যবসায়ী এ বিক্ষোভ দেখান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।

কুমিল্লায় বিক্ষোভ : চৌদ্দগ্রাম ও হোমনায় মার্কেট এবং দোকান খোলা রাখার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা। গতকাল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল শেষে পৌর মেয়র জি এম মীর হোসেন মিরুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ব্যবসায়ীরা। পরে ব্যবসায়ীরা মহাসড়কে অবস্থান নেন।

চট্টগ্রামে বিক্ষোভ : সরকার-ঘোষিত সাত দিনের লকডাউনের প্রতিবাদে প্রথম দিনেই চট্টগ্রাম মহানগরসহ বিভিন্ন উপজেলায় বিক্ষোভ করেছেন ব্যবসায়ীরা। বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত মহানগরের রেয়াজউদ্দিন বাজারের সহস্রাধিক ব্যবসায়ী নিউমার্কেট মোড় এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। এ সময় বক্তব্য দেন তামাকুমন্ডি লেন বণিক সমিতির সভাপতি আবু তালেব, সাধারণ সম্পাদক আহমেদ কবির দুলালসহ নেতৃবৃন্দ। তারা স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে দোকান খুলে দেওয়ার দাবি জানান এবং ‘লকডাউন মানি না, মানব না’ বলে স্লোগান দেন। এদিকে লকডাউনের প্রতিবাদে লোহাগাড়া উপজেলায় সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন ব্যবসায়ীরা। বেলা ১২টার দিকে বটতলী মোটর স্টেশনে লোহাগড়া দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীরা এ বিক্ষোভ করেন। এ ছাড়া হাটহাজারী উপজেলায় দোকান খোলায় বেলা ১১টার দিকে সুপার সিটি নামে একটি মার্কেটে তালা দেয় উপজেলা প্রশাসন।

 প্রতিবাদে বিক্ষোভে নামেন ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারীরা। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিন ঘটনাস্থলে আসেন এবং তাদের ডেকে নিয়ে উপজেলা পরিষদে বৈঠকে বসেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর