বুধবার, ৯ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

নির্যাতনের তথ্য ভারতফেরত আরেক তরুণীর

রাফিসহ দুই আসামির স্বীকারোক্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভারতের চেন্নাইয়ে তিন মাস ধরে আটকে থাকা এক নারী তাকে নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন। মাসখানেক আগে পালিয়ে দেশে ফিরলেও সম্প্রতি মুখ খুলেছেন এই নারী। রাজধানীর শনিরআখড়া এলাকার বাসিন্দা এক অডিও বার্তায় ওই তরুণী কীভাবে পাচার চক্রের খপ্পরে পড়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তা জানিয়েছেন। অডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, তিন বছর আগে প্রেম করে তার বিয়ে হয়। স্বামীর সঙ্গে শনিরআখড়ায় থাকতে শুরু করেন। তবে সংসারে ছিল অর্থকষ্ট। স্বামী তাকে চাকরি করতে বললে তিনি পোশাকশ্রমিকের কাজ করতে রাজি হননি। পরে স্বামী তাকে দেশের বাইরে ভালো বেতনে চাকরির ব্যবস্থা করার কথা বলেন। তাকে বলেন, বাইরে গেলে দুই-তিন মাস থাকলে ভালো আয় হবে। এরপর ব্যবসা করলে তারা ভালোভাবে চলতে পারবেন। তখন আর কাজ করতে হবে না। তিনি প্রথমে আপত্তি করলেও পরে রাজি হন। এরপর স্বামী তাকে শনিরআখড়ার বাসায় একটি মেয়ের হাতে তুলে দেন। সেই মেয়ে তাকে সাতক্ষীরায় নিয়ে যান। সেখান থেকে সীমান্ত পার হয়ে তারা কলকাতায় যান। সেখানে একটি ঘরে রাখা হয় তাদের। এরপর তাকে ভারতের পরিচয়পত্র বানিয়ে দেওয়া হয়। পরে তাকে বিমানে করে নিয়ে যায় চেন্নাই। সেখানে একটি ঘরে তাকে আটকে রাখা হয়। এরপর এমন অত্যাচার চলতে থাকে, যা বলার মতো নয়। এ সময় তিনি কান্নাকাটি করলে মারধর করে বলা হয়, তাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। তিনি পালানোর সুযোগ খুঁজতে থাকেন। ঈদুল ফিতরের আগে সুযোগমতো পালিয়ে দেশে চলে আসেন তিনি। ওই তরুণী পাচারকারী চক্রসহ তার স্বামীর বিচার দাবি করেন।

বস রাফিসহ দুই আসামির স্বীকারোক্তি : আদালত প্রতিবেদক জানান, রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় করা মানব পাচার ও পর্নোগ্রাফি আইনের মামলায় আন্তর্জাতিক নারী পাচার চক্রের অন্যতম হোতা আশরাফুল মন্ডল ওরফে বস রাফি ও তার সহযোগী মো. আবদুর রহমান শেখ ওরফে আরমান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদার আসামি আশরাফুল এবং ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসীম আসামি আবদুর রহমানের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় আদালত। এর আগে রিমান্ডে থাকাকালে আসামি আশরাফুল ও আবদুর রহমান ঘটনার বিষয়ে আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন। এর আগে ২ জুন আসামিদের পাঁচ দিন করে রিমান্ডে পাঠায় আদালত। মামলা সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশি তরুণীকে ভারতে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়। এ ঘটনায় গত ২৭ মে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় ভুক্তভোগী তরুণীর বাবা মানব পাচার ও পর্নোগ্রাফি আইনে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় টিকটক হৃদয় বাবুসহ অজ্ঞাতনামা আরও চারজনকে আসামি করা হয়। পরে র‌্যাব-৩- নারী পাচার চক্রের মূলহোতা মো. আশরাফুল ইসলাম ওরফে বস রাফিসহ চারজনকে গ্রেফতার করে।

সর্বশেষ খবর