রবিবার, ২০ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

বিদায়ের পথে হুদা কমিশন

মেয়াদ শেষ হচ্ছে ফেব্রুয়ারিতে, জানুয়ারিতে গঠন হবে সার্চ কমিটি

গোলাম রাব্বানী

বিদায়ের পথে হুদা কমিশন

বিদায়ের পথে কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন। আট মাস মেয়াদ রয়েছে এই নির্বাচন কমিশনের। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি বিদায় নেবেন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা। তারপরই সাংবিধানিক সংস্থাটিতে দায়িত্ব নেবেন নতুন ব্যক্তিরা, যাদের অধীনে হবে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন।

নির্বাচন কমিশন গঠনের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির; সংবিধানে বলা আছে, একটি আইনের অধীনে তিনি এই নিয়োগ দেবেন। তবে বিগত সময়ের মতো এবারে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের আভাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ জন্য আগামী জানুয়ারিতে সার্চ কমিটি গঠন করা হবে। এরপরে গঠন হবে নতুন নির্বাচন কমিশন। তবে সার্চ কমিটি নির্বাচন কমিশন ঠিক করে দেবে না, তারা রাষ্ট্রপতিকে সহায়তা করতে কিছু নাম বাছাই করে দেবে। রাষ্ট্রপতি তা থেকে নিয়োগ দেবেন। স্বাধীনতার পর ১২ জন সিইসি ও ২৭ জন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ পেয়েছেন। এর মধ্যে সিইসি পদে বিচারপতি এ কে এম নুরুল ইসলাম সাড়ে সাত বছর ছিলেন।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে ২০১২ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি একটি সার্চ কমিটি গঠন করেন। তাদের মনোনীত ব্যক্তিদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেন নতুন কমিশনের সদস্যদের। এরপরে ২০১৭ সালে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদও একই পদ্ধতি অনুসরণ করেন। তবে ২০১২ সালে চার সদস্যের সার্চ কমিটির পরিবর্তে ২০১৭ সালে ছয় সদস্যের কমিটি করেছিলেন রাষ্ট্রপতি। ওই কমিটিতে দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে নেওয়া হয়েছিল।

যে ভাবে গঠন হয় হুদা কমিশন : নতুন ইসি গঠন প্রশ্নে রাষ্ট্রপতি ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর থেকে ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩১টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেন। অধিকাংশ দলের সুপারিশ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ইসি গঠনের সুপারিশ তৈরির জন্য ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেন। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সিইসি ও অন্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য ১০ জনের নাম সুপারিশ করার সময়সীমা দেওয়া হয় সার্চ কমিটিকে। ১০ জনের নামের তালিকা চূড়ান্ত করতে সার্চ কমিটি নিজেদের মধ্যে চার দফা বৈঠক করেন। প্রথম বৈঠকে কার্যপরিধি ঠিক করার পাশাপাশি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেওয়া ৩১টি রাজনৈতিক দলের কাছে সর্বোচ্চ পাঁচটি করে নাম নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। দ্বিতীয় বৈঠকে ২৬টি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে পাওয়া ১২৫টি নাম থেকে ২০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি এবং তৃতীয় বৈঠকে ওই তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের সম্পর্কে যাচাই-বাছাই ও বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়। সর্বশেষ বৈঠকে ১০ জনের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করার পরে ২০১৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের হাতে সেই তালিকা তুলে দেয় সার্চ কমিটি। এরপরে ওই দিন নতুন ইসি গঠন করেন রাষ্ট্রপতি। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি শপথ নেন সিইসি কে এম নূরুল হুদাসহ নতুন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সদস্যরা।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন এ কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। সেই হিসাবে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি তাদের মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ হবে।

ইসি গঠনে প্রথম রাজনৈতিক সংলাপ : ২০১২ সালে নতুন ইসি গঠনের আগে রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেন, ২২ জানুয়ারি গঠন করা হয় সার্চ কমিটি। সে সময় সার্চ কমিটির আহ্বানে আওয়ামী লীগসহ কয়েকটি দল নতুন কমিশনের জন্য তাদের পছন্দের ব্যক্তির নামের তালিকা দিলেও বিএনপি দেয়নি। ২২ জানুয়ারি গঠনের পর ৭ ফেব্রুয়ারি ১০ জনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে দিয়েছিল। তার মধ্য থেকে পাঁচজনকে ৮ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপ্রধান। কমিটি রাষ্ট্রপতির কাছে যে সুপারিশ জমা দেয়, তাতে সিইসি ও চার কমিশনার নিয়ে পাঁচটি পদের জন্য ১০টি নাম আসে। তার মধ্য থেকেই পাঁচজনকে বেছে নেন রাষ্ট্রপতি।

সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮(১) এ বলা হয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত আইনের বিধানাবলি-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করিবেন। সংবিধানের আলোকে রাষ্ট্রপতি সবসময় সিইসি ও ইসি নিয়োগ দিলেও ২০১২ সালে কমিশন হয় সার্চ কমিটির মাধ্যমে। সে সময় প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর