মঙ্গলবার, ৬ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

প্রণবপুত্র অভিজিৎ তৃণমূলে

কলকাতা প্রতিনিধি

প্রণবপুত্র অভিজিৎ তৃণমূলে

পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত প্রণব মুখার্জির ছেলে কংগ্রেস দলের সংসদ সদস্য অভিজিৎ মুখার্জি। গতকাল কলকাতায় তৃণমূল ভবনে দলের মহাসচিব ও রাজ্যের শিল্প, বাণিজ্যমন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি ও লোকসভার দলনেতা ও সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে তৃণমূলের পতাকা হাতে তুলে নেন অভিজিৎ। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ‘কারণ’ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অভিজিৎ বলেন, ‘বিধানসভা ভোটে মমতা ব্যানার্জি প্রমাণ করেছেন তিনি বিজেপিকে রুখতে পারেন। আমার বিশ্বাস আগামী লোকসভা ভোটেও তিনি তা পারবেন।’ কংগ্রেসের টিকিটে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে দুইবার সংসদ সদস্য হয়েছিলেন অভিজিৎ। তার আগে হয়েছিলেন বীরভূমের নলহাটির বিধায়ক। অভিজিৎ গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমি এখন শুধুই প্রাক্তন। কোনো পদ আমার নেই।’ পাশাপাশি, প্রণবপুত্র বলেন, ‘বাবা আমাকে কখনোই কংগ্রেসে যোগ দিতে বলেননি। আমার নিজস্ব সিদ্ধান্তে রাজনীতিতে এসেছিলাম।’ খুব বড় মাপের রাজনীতিবিদ না হলেও কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান সোনিয়া-রাহুলের দলের পক্ষে খুব একটা স্বস্তিদায়ক নয়। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, জিতীন প্রসাদ, হিমন্ত বিশ্বশর্মার মতো পোড়খাওয়া কংগ্রেস নেতারা যেভাবে দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন তা যথেষ্ট অস্বস্তিকর।

একুশের বিধানসভার নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে অভূতপূর্ব সাফল্য পেয়েছে তৃণমূল। বিরোধীদের কার্যত ধরাশায়ী করে তৃতীয়বারের জন্য রাজ্যটিতে সরকার গড়েছে মমতা ব্যানার্জির দল। বিজেপি রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা পেলেও কংগ্রেস ও বামেদের কার্যত খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। সাম্প্রতিক এই নির্বাচনের পরই টুইট করে একাধিকবার মমতা ব্যানার্জির সরকারের সমর্থনে মুখ খুলতে দেখা গেছে অভিজিৎকে। এমনকি গত ২৫ জুন টুইট করে ভুয়া করোনা ভ্যাকসিনকান্ডে মমতা সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে অভিজিৎ মুখার্জি লিখেছিলেন যে, ‘ভুয়া আইএএস কর্মকর্তা দেবাঞ্জন দেবের উদ্যোগে ভুয়া ভ্যাকসিন ক্যাম্পের আয়োজনের ঘটনায় যদি মমতা ব্যানার্জিকে ব্যক্তিগতভাবে দায়ী করা হয় তবে তো আর্থিক কেলেঙ্কারির নায়ক নীরব মোদি, মেহুল চোকসি, বিজয় মালিয়ার মতো অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদিজিকেও দায়ী করা উচিত।’ আর এর পরই জল্পনা ছড়ায় কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগদানের বিষয়টি কেবল সময়ের অপেক্ষা। এরপরই গত মাসেই কলকাতায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক, সাংসদ ও মমতা ব্যানার্জির ভাতিজা অভিষেক ব্যানার্জির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন অভিজিৎ। অভিজিৎ গতকাল জানান, ‘২০১১ সালে আমি সরকারি চাকরি ছেড়ে জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান করেছিলাম। সে সময় বাম বিরোধী যে হাওয়া উঠেছিল, তার কান্ডারী ছিলেন মমতা ব্যানার্জি। ওর আনুকুল্যেই আমি ৪৪ বছর পর বীরভূম জেলার নলহাটি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে সিপিআইএম প্রার্থীকে পরাজিত করে বিধায়ক হিসেবে জিতেছিলাম। সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনেও এখানে বিজেপির মতো একটি সাম্প্রদায়িক শক্তি উদ্ভব হওয়ার চেষ্টা করেছিল কিন্তু মমতা ব্যানার্জি রুখে দিয়েছেন। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি পশ্চিমবঙ্গে যিনি বিজেপিকে রুখে দিতে পেরেছিলেন, ভবিষ্যতেও তার নেতৃত্বে, অনেকের সহযোগিতায় গোটা ভারতে সেটা সম্ভবপর হবে।’

তিনি আরও যোগ করেন ‘কংগ্রেস দলে আমাকে কোনো পদে রাখা হয়নি, কেবলমাত্র প্রাথমিক সদস্য ছাড়া। তাই একজন সৈনিক হিসেবে আমি তৃণমূলে যোগ দিয়েছি এবং দলের নির্দেশ অনুযায়ী আমি কাজ করে যাব। অখন্ডতা ও ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষায়ও আমি কাজ করব।’

স্থানীয় সূত্রের খবর, আগামী লোকসভা ভোটে তিনি জঙ্গিপুরে তৃণমূলের প্রার্থী হতে পারেন বলে জল্পনা রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর