কাবুল দখলের পর আফগানিস্তানে সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে তালেবান। গতকাল অর্থ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নতুন দুই মন্ত্রী ও গোয়েন্দা প্রধানের নাম ঘোষণা করেছে। এর আগে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর। যদিও দেশটির সরকার এখনো গঠন করা হয়নি। তবে রাশিয়ার গণমাধ্যমের খবর, আফগানিস্তানে গণতন্ত্র নয়, চলবে শরিয়াহ শাসন। আর দেশ চালাবে ১২ সদস্যের একটি কাউন্সিল বা পরিষদ। সেই কাউন্সিলে জায়গা পাচ্ছেন দেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই ও ‘হাই-কাউন্সিল ফর ন্যাশনাল রেকন্সিলিয়েশন’-এর প্রধান আবদুল্লা আবদুল্লা। কাউন্সিলে থাকছেন শীর্ষ তালেবান নেতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদারও।
রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা স্পুটনিককে উদ্ধৃত করে এএনআই জানিয়েছে, কাউন্সিলের সাত সদস্যের নাম ইতিমধ্যে ঠিক করে ফেলা হয়েছে। বাকিদের নামও শিগগিরই ঘোষণা করা হবে। তালেবানের এক সূত্র জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ছাড়া আফগানিস্তানের শাসনভার থাকবে ১২ সদস্যের পরিষদের হাতে। এখন পর্যন্ত সাতজন সদস্যের নাম ঠিক করা হয়েছে। তারা হলেন- হামিদ কারজাই, আবদুল্লা আবদুল্লা, মুজাহিদ কমান্ডার গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার, প্রাক্তন আফগান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হানিফ আতমার, তালেবান প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে মোল্লা ইয়াকুব, তালেবান নেতা আবদুল গনি বারাদার ও হাক্কানি নেটওয়ার্কের নেতা খলিলুর রহমান হাক্কানি। তবে তালেবানবিরোধী কমান্ডার আবদুল রশিদ দস্তাম ও ‘ওয়ারলর্ড’ নুর মহম্মদ আট্টা এ পরিষদে যোগ দেবেন না বলেই খবর। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, অর্থমন্ত্রী করা হয়েছে গুল আগাকে, ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সদর ইব্রাহিম ও নাজিবুল্লাহ হবেন গোয়েন্দা প্রধান। এ ছাড়া কাবুলের গভর্নর করা হয়েছে মোল্লা শিরিনকে। আর রাজধানীর মেয়র হলেন হামদুল্লাহ নোমানি। হাজি মোহাম্মদ ইদ্রিসকে দ্য আফগানিস্তান ব্যাংকের (ডিএবি) নতুন গভর্নর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আফগানিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঘোষণায় জানানো হয়, শিগগিরই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যক্রম আবারও শুরু হবে। তালেবান নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব স্থগিত হয়ে যায়। একই কারণে বন্ধ হয়ে যায় ব্যাংকটি। তালেবানের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হাজি মোহাম্মদ ইদ্রিস উত্তরাঞ্চলীয় জাওজান প্রদেশের বাসিন্দা। তালেবানের পুরনো নেতা মোল্লা আখতার মানসুরের সঙ্গে আর্থিক ইস্যুতে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। ২০১৬ সালে ড্রোন হামলায় নিহত হন মোল্লা আখতার। তালেবানের বাইরে কোনো প্রকাশ্য পরিচিতি হাজি মোহাম্মদ ইদ্রিসের নেই। কোনো আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ কিংবা উচ্চ শিক্ষা না থাকলেও ইদ্রিস তালেবানের আর্থিক বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন। নিজের অভিজ্ঞতার কারণে তিনি তালেবানের মধ্যে শ্রদ্ধার পাত্র বলে জানিয়েছেন গোষ্ঠীটির সিনিয়র নেতারা।
১৫ আগস্ট কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। এরপর থেকে সরকার গঠনের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে তৎপরতা শুরু করেছে তারা। বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনাও শুরু হয়েছে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল তালেবান। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বাহিনীর হস্তক্ষেপে তারা ক্ষমতাচ্যুত হয়। ওই সময় শরিয়াহ আইন অনুসারে দেশ পরিচালনা করেছিল তারা। সে সময় নারীশিক্ষার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। এ ছাড়া নারীর একা বাইরে যাওয়া ও ঘরের বাইরে নারীর কাজ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। সে সময় চুরির অভিযোগ প্রমাণিত হলে অঙ্গচ্ছেদের বিধানও ছিল আফগানিস্তানে। তবে এবার ঠিক কেমন সরকার হবে, তা এখনো জানা যায়নি।কাবুলে সিআইএর পরিচালকের গোপন বৈঠক : আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে তালেবানের শীর্ষ নেতা আবদুল গনি বারাদারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর প্রধানের গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। কাবুলের নিয়ন্ত্রণ তালেবানের হাতে যাওয়ার পর মার্কিন প্রশাসন এবং এই গোষ্ঠীর সর্বোচ্চ নেতার প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। আফগানিস্তান থেকে আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শেষ না হলে পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে সোমবার তালেবান হুঁশিয়ারি দেয়। কাবুল থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার সময়সীমা বৃদ্ধি নিয়ে প্রচ- চাপের মুখে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ পশ্চিমা বিশ্বের নেতারা। এর মাঝেই তালেবানের শীর্ষ নেতার সঙ্গে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে তা জানাতে অস্বীকার করেছে সিআইএ। তবে মার্কিন নাগরিক এবং আফগান মিত্রদের সরিয়ে নেওয়ার সময়সীমা বৃদ্ধির বিষয়ে তালেবানের নেতার সঙ্গে সিআইএ পরিচালকের আলোচনা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।