রবিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

সিইসিকে একদিন বিচারের মুখোমুখি হতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

সিইসিকে একদিন বিচারের মুখোমুখি হতে হবে

শাহদীন মালিক

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন নির্বাহী সদস্য ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগে আজ হোক কাল হোক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।

গতকাল সকালে সুজন আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার ‘মিথ্যচারের প্রতিবাদ’ শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুজন-এর নির্বাহী সদস্য সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

গত ২৭ জানুয়ারি রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি) আয়োজিত ‘আরএফইডি টক’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের বিরুদ্ধে ১ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগ তুলে বক্তব্য দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। লিখিত বক্তব্যে সুজন জানিয়েছে, কান কথার ভিত্তিতে সিইসির উত্থাপিত ১ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগ এবং কাজ নিয়ে কাজ না করার অভিযোগ সম্পূর্ণ বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

ড. শাহদীন মালিক বলেন, সমালোচনার সদুত্তর না থাকলে, কৃতকার্যের কোনো ব্যাখ্যা না থাকলে সমালোচনাকারীকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করাটা হচ্ছে সবচেয়ে সহজ পন্থা। সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য অপ্রত্যাশিত ছিল। আমি আশ্চর্য হইনি, পাঁচ বছর তিনি এভাবেই কাটিয়েছেন। তাঁর কৃতকাজের বিচার চেয়ে আমরা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের আবেদন করেছিলাম। আজ হোক কাল হোক এ জন্য তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে বলে আমার বিশ্বাস। সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার মিথ্যাচারে আমরা স্তম্ভিত। আমাদের দুর্ভাগ্য, এরকম একজন খলনায়ককে সিইসি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সিইসির বক্তব্যে কেবল আমার নয়, সুজনের সঙ্গে যারা যুক্ত রয়েছেন, সবার মানহানি হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে মানহানি মামলা করব কি না, পরে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আদালতের রায় আছে, প্রার্থীদের (হলফনামা) তথ্য প্রচার করতে হবে। তখন তৎকালীন এ টি এম শামসুল হুদা কমিশন এ কাজে আমাদের সহায়তা নিয়েছিল। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দলগুলো আদালতে যায়নি বলে সিইসি অজুহাত দেখিয়েছেন। কিন্তু ৭০টির মতো মামলা হয়েছে। একটিরও শুনানি হয়নি। ব্যালট পেপার খুললে মধ্যরাতে ভোট হয়েছে প্রমাণ হতো। এ ছাড়া ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) প্রিসাইডিং কর্মকর্তার হাতে ব্যালট ইউনিটে ২৫ শতাংশ ব্যালট পেপার ওপেন করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। এমন অনিয়মের বিষয়ও উঠে এসেছে। আমাদের দুর্ভাগ্য, এরকম একজন খলনায়ককে সিইসি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান লিখিত বক্তব্যে বলেন, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ড. বদিউল আলম মজুমদারের ব্যক্তিগত আর্থিক লেনদেনের কোনো সম্পর্ক নেই এবং কোনো দিন ছিলও না। তিনি কমিশন থেকে কখনো কোনো কাজ নেননি, অসমাপ্ত রাখার তো কোনো প্রশ্নই আসে না। তিনি বলেন, ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় হলফনামায় বর্ণিত প্রার্থীদের তথ্য প্রকাশ ও ভোটারদের মাঝে বিতরণ, পোস্টারিং এবং প্রার্থী-ভোটার মুখোমুখি অনুষ্ঠানের আয়োজনের কাজটি করার জন্য ড. শামসুল হুদা কমিশন ইউএনডিপির অর্থায়নে পরিচালিত এসইএমবি প্রকল্প থেকে সুজনকে ৯ লাখ ৫০ হাজার ৬০০ টাকা প্রদান করে। ২০১২ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় একই ধরনের কাজের জন্য সুজনকে ৩ লাখ টাকা প্রদান করা হয়। অর্থাৎ দুটি নির্বাচনে সর্বমোট ১২ লাখ ৫০ হাজার ৬০০ টাকা সুজন নির্বাচন কমিশন থেকে পায়। নির্বাচন দুটির জন্য নির্ধারিত কাজগুলো যথাযথভাবে সম্পন্ন করে যথাসময়ে কমিশনের কাছে বিল-ভাউচারসহ হিসাব-নিকাশ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ সম্পর্কে কোনোরূপ অনিয়মের অভিযোগ ওঠা সম্পূর্ণ অমূলক।  লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ড. মজুমদারের সঙ্গে সিইসি নূরুল হুদার আরও দুবার সাক্ষাৎ হয়। একবার সাক্ষাৎ হয় ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর, যখন ড. মজুমদার নির্বাচনের কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলের তথ্য পাওয়ার জন্য আবেদন করেন, যদিও অতীতে নির্বাচন কমিশন এসব তথ্য স্বউদ্যোগে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করত। সাক্ষাৎকালে সিইসি হুদা অত্যন্ত অভদ্রভাবে এসব তথ্য প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানালে ড. মজুমদার তথ্য অধিকার আইনের অধীনে আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রভিত্তিক তথ্য নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এই তথ্যের বিশ্লেষণ থেকেই ২১৩টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়া, ৫৯০টি কেন্দ্রে প্রদত্ত বৈধ ভোটের সব এক প্রতীকে পড়া, ১ হাজার ১৭৭টি কেন্দ্রে বিএনপি এবং দুটি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের শূন্য ভোট পাওয়া ইত্যাদি চিত্র উঠে আসে। এসব অবিশ্বাস্য তথ্য জালিয়াতির নির্বাচনেরই অকাট্য প্রমাণ, যা সুজন ও ড. বদিউল আলম মজুমদার জাতির সামনে তুলে ধরে সিইসি নূরুল হুদা ও তার কমিশনকে অভিযুক্তের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় লিখিত বক্তব্যে। বিচারপতি এম এ মতিন বলেন, কমিশনের কয়েকজন লোক সিইসিকে আর্থিক অনিয়মের কথা বলেছে। শোনার পর তার উচিত ছিল বিষয়টির তদন্ত করা বা দুদকে পাঠানো। কিন্তু তা না করে তিনি কানকথা প্রচার করে বেড়াচ্ছেন। তাতেই বোঝা যায় এটা অসত্য। ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, সুজন কারও কাছ থেকে টাকা নেয় না, চায়ও না। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সুজন সহসভাপতি ড. হামিদা হোসেন, নির্বাহী সদস্য বিচারপতি এম এ মতিন, আলী ইমাম মজুমদার, ড. শাহনাজ হুদা, শফিউদ্দিন আহমেদ, ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, সুজন জাতীয় কমিটির সদস্য একরাম হোসেন, সঞ্জীব দ্রং প্রমুখ।

 

 

সর্বশেষ খবর