করোনাভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যু বেড়েই চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ২১ জন কভিড রোগীর মৃত্যু হয়েছে, যা ১১৫ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। সবশেষ ২১ জনের মৃত্যুর খবর এসেছিল গত ৬ অক্টোবর। মাঝের দিনগুলোতে কখনো এক দিনে এত মৃত্যু হয়নি। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে সংক্রমণ ধরা পড়েছে ১০ হাজার ৩৭৮ জনের দেহে।
এদিকে করোনাভাইরাসের আফ্রিকান ধরন ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই ‘নিওকোভ’ নামের নতুন আরেকটি ধরন শনাক্তের কথা জানিয়েছে চীনের গবেষকরা। তাদের দাবি, পূর্বের যে কোনো ধরন থেকে বেশি প্রাণঘাতী নিওকোভ। এর সঙ্গে ২০১২ সালে সৌদি আরবে শনাক্ত হওয়া ভাইরাস মার্সের (মিডল ইস্ট রেসপিরেটরির সিনড্রোম) সঙ্গে মিল রয়েছে। প্রতি তিনজন আক্রান্তে মৃত্যু হতে পারে একজনের। গবেষকদের ভাষ্য মতে, নিওকোভ ধরনটি এখনো মানুষকে সংক্রমিত করেনি। দক্ষিণ আফ্রিকার বাদুড়ের মধ্যে এটি ছড়িয়ে পড়েছে। তবে একটিমাত্র রূপান্তর ঘটলেই ভাইরাসটি মানুষের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, ‘নিওকোভ’ মানুষের জন্য কতটা হুমকি হয়ে উঠবে তা জানতে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
বাংলাদেশে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৩৩ হাজার ৩৭৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে শনাক্তের হার ছিল ৩১.১০ শতাংশ। আগের দিনের তুলনায় শনাক্তের হার কিছুটা কমলেও বেড়েছে মৃত্যু। আগের দিন শনাক্তের হার ছিল ৩৩.৩৭ শতাংশ। মারা গিয়েছিলেন ২০ জন।গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট ১৭ লাখ ৭৩ হাজার ১৪৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৮ হাজার ৩২৯ জনের। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৫ লাখ ৬৩ হাজার ৪৭৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ১০৯ জন। সুস্থ ও মৃত বাদে গতকাল দেশে সক্রিয় করোনা রোগী ছিল ১ লাখ ৮১ হাজার ৩৪২ জন, যা মাসের প্রথম দিনে ছিল মাত্র ৮ হাজার ৫২৯ জন।
গত এক দিনে মৃতদের মধ্যে ১৪ জন ছিলেন পুরুষ ও সাতজন নারী। সবাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন এবং বয়স ছিল ৪১ বছরের বেশি। ঢাকা বিভাগেই মারা গেছেন ১২ জন। দুজন করে মারা গেছেন চট্টগ্রাম, খুলনা ও রংপুর বিভাগে এবং একজন করে মারা গেছেন রাজশাহী, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগে।
এদিকে নিওকোভ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, চীনের উহানের গবেষকরা করোনাভাইরাসের নতুন ওই ধরনটি শনাক্ত করেছেন। গবেষকদের আশঙ্কা, করোনাভাইরাস প্রতিরোধের জন্য বিদ্যমান অ্যান্টিবডি দিয়ে নিওকোভকে ঠেকানো যাবে না। বাদুড় থেকে ভাইরাসটি মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে। প্রতি তিনজন আক্রান্তে একজনের মৃত্যু হতে পারে। গবেষণা প্রতিবেদনটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়নি। বায়োআরজিভ ওয়েবসাইটে এর পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যেসব ভাইরাস মানবদেহকে আক্রান্ত করে, তার ৭৫ শতাংশেরই উৎস বন্যপ্রাণী। এসব ভাইরাসের বেশির ভাগেরই প্রাকৃতিক ভাণ্ডার হিসেবে বাদুড়কে অভিহিত করা হয়। প্রাণী থেকে মানুষের শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে তারা নিবিড়ভাবে কাজ করছেন। নিওকোভ মানুষের জন্য কতটা ভয়ংকর হতে পারে তা নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। নিওকোভ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ইতোমধ্যে বিশ্ব প্রাণিস্বাস্থ্য সংস্থা, খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।