রবিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

আত্মহত্যা বাড়ছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের

এক বছরে ১০১ জন

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। গত বছর (২০২১) ৫২ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন। পুরুষ আত্মহত্যাকারীদের সংখ্যা নারীদের প্রায় দ্বিগুণ। এদের মধ্যে ৬৫ জন ছাত্র। বাকি ৩৬ জন ছাত্রী। আত্মহননকারী শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের। এদের ৬২ জন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া। সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, যার সংখ্যা নয়জন। এক সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

গতকাল অনলাইনে আঁচল ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে বেড়েছে আত্মহত্যা- হতাশায় নিমজ্জিত শিক্ষার্থীরা’ শীর্ষক এ সমীক্ষা ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়েছে, এক বছরে এত বেশিসংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা এই প্রথম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিন আহমেদ এবং আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ।

সমীক্ষায় বলা হয়, ২০২১ সালে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে যা ৬১ দশমিক ৩৯ শতাংশ অর্থাৎ ৬২ জন। মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সংখ্যা ১২, যা মোট আত্মহননকারীর ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সংখ্যাটি ৪ যা মোট আত্মহত্যাকারীর ৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ। অন্যদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার ২২ দশমিক ৭৭ শতাংশ, যা সংখ্যায় ২৩ জন। সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আর সবচেয়ে কম আত্মহত্যা করেছেন ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আত্মহত্যার ঘটনাগুলো অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, যার সংখ্যা ৯। এ ছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়জন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচজন এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চারজন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছেন ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এদের সংখ্যা ৩। সাধারণত নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি দেখা গেলেও গত বছর আত্মহত্যাকারীদের একটা বড় অংশই ছিল পুরুষ শিক্ষার্থী। সর্বমোট ৬৫ জন পুরুষ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন যা মোট শিক্ষার্থীর ৬৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। অন্যদিকে নারী শিক্ষার্থীদের এ সংখ্যা ছিল ৩৬ বা ৩৫.৬৪ শতাংশ। আত্মহত্যার কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, করোনার মধ্যে সামাজিক, আর্থিক ও পারিবারিক চাপ বৃদ্ধি পাওয়া পুরুষ শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার পেছনে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। অনার্স পড়ুয়া তৃতীয় এবং চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার তুলনামূলক বেশি। এই শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার-কেন্দ্রিক সামাজিক চাপ বেশি থাকে এবং ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার কারণে তাদের মধ্যে হতাশার ছাপ বেশি দেখা যায়। এ ছাড়া সম্পর্কগত কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন ২৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং পারিবারিক সমস্যার কারণে এ পথে ধাবিত হয়েছেন ১৯ দশমিক ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী। মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং পড়ালেখা-সংক্রান্ত কারণে ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন। আর আর্থিক সমস্যার জন্য ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন। মাদকাসক্ত হয়ে ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং নানাবিধ কারণে ২১ দশমিক ৭৮ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন।

 

সর্বশেষ খবর