রবিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

অনিশ্চয়তা কাটছে না শাবিতে

আন্দোলন অব্যাহত

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে করা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ক্লাস, পরীক্ষা, দাফতরিক কার্যক্রম নিয়ে তৈরি হয়েছে এক ধরনের অনিশ্চয়তা। উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে চলমান আন্দোলন এখন সাংস্কৃতিক আন্দোলনে রূপ নিয়েছে।

২৭ জানুয়ারি আন্দোলনকারীরা সব ভবনের অবরোধ উঠিয়ে নেন। তবে সেদিন কোনো দাফতরিক কার্যক্রম চলেনি। ফলে শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক বন্ধের পর আজ থেকে আদৌ উপাচার্যের দফতরসহ বিভিন্ন দফতরে কার্যক্রম চলবে কি না তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অনিশ্চয়তা। তবে উপাচার্য যদি নিজের দফতরে এসে দাফতরিক কার্যক্রম চালাতে চান তার পরিণাম ভয়ংকর হবে বলে জানান আন্দোলনকারীরা। তাদের মুখপাত্র শাহরিয়ার আবেদিন বলেন, ‘আমরা উপাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছি। তিনি কোনোভাবেই অফিস করতে পারবেন না। তবে অন্য দফতরগুলো চালু থাকলে আমাদের কোনো সমস্যা নেই।’ এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস পরীক্ষা চালু হবে কবে, চালু হলে অনলাইনে নাকি সশরীরে হবে, হলের ডাইনিং ও ক্যান্টিন কবে চালু হবে, বিশ্ববিদ্যালয় কবে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরে আসবে- এ নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মনে সৃষ্টি হচ্ছে নানা প্রশ্ন। ক্লাস পরীক্ষা ও বিভিন্ন দফতরের কার্যক্রমের ব্যাপারে রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন বলেন, ‘১৬ জানুয়ারি জরুরি সিন্ডিকেটে ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ করা হয়েছে। আবার কবে ক্লাস পরীক্ষা চালু হবে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে সিন্ডিকেট। এ ছাড়া আমাদের দাফতরিক কার্যক্রম কখনো বন্ধ ছিল না। শিক্ষার্থীরা অফিসে তালা লাগানোয় আমরা অফিস করতে পারিনি। করোনার কারণে আগামীকাল (আজ) থেকে অর্ধেক জনবল নিয়ে অফিস চলবে।’

ছাত্র হলে খাবার বন্ধ, ছাত্রী হলে চালু : জানা যায়, ১৬ জানুয়ারি রাতে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার ঘটনায় উত্তাল হয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়। এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এক জরুরি সিন্ডিকেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস, পরীক্ষা ও আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন এবং পর দিন বেলা ১২টার মধ্যে আবাসিক হল ত্যাগ করার জন্য শিক্ষার্থীদের নির্দেশ দেন। তবে শিক্ষার্থীরা আবাসিক হল ত্যাগ না করে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন। এ সময় পাঁচটি আবাসিক হলের ডাইনিং ও ক্যান্টিন বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে কয়েক দিনের মধ্যে তিনটি আবাসিক হলের খাবারের জায়গা চালু হলেও বন্ধ আছে দুটি হলের সব ডাইনিং ও ক্যান্টিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি আবাসিক ছাত্র হলের মধ্যে শাহ পরান ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ডাইনিং ও ক্যান্টিন বন্ধ আছে। চালু আছে সৈয়দ মুজতবা আলী হলের ডাইনিং, বেগম সিরাজুন্নেসা ছাত্রী হলের ক্যান্টিন, প্রথম ছাত্রী হলের ডাইনিং ও ক্যান্টিন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে অনেক শিক্ষার্থী বাড়ি চলে গেলেও আবাসিক হলগুলোয় এখনো বেশকিছু শিক্ষার্থীর উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে; টিউশনি, চাকরির পড়াশোনাসহ বিভিন্ন কারণে। এই শিক্ষার্থীদের হলে খাবার না পাওয়ায় বাইরে থেকে বেশি দামে খাবার কিনে খেতে হচ্ছে। হলের আশপাশে খাবারের ভালো দোকান না থাকায় তাদের প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। খাবারের স্থান বন্ধ কেন জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট সামিউল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘ডাইনিং ও ক্যান্টিন যে বন্ধ আছে তা আমি জানি না।’ শাহ পরান হলের প্রভোস্ট মিজানুর রহমান খান বলেন, ‘সহকারী প্রভোস্টদের সঙ্গে কথা বলে আমরা দ্রুত সিদ্ধান্ত নেব।’

শাবির টিলায়রহস্যময় আগুন : এদিকে গতকাল সকালে বেগম সিরাজুন্নেসা ছাত্রী হলের পাশের দুটি টিলা এবং বিকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্র হলের পাশের টিলায় আগুন জ্বলতে দেখা যায়। এতে প্রায় ১ একর জায়গা পুড়ে যায়। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- শনিবার সকালের দিকে ক্যাম্পাসের টিলাগুলোয় কে বা কারা আগুন দিয়ে গাছের চারা পুড়িয়ে দেয়। এবার ক্যাম্পাসে ৩০ হাজার চারা লাগানো হয়েছিল। এভাবে আগুন ধরানোর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বনজ সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে। তা ছাড়া এ ধরনের আগুন থেকে ব্যাপক বিপর্যয় ঘটতে পারে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ টিলায় আগুন জ্বালানোর ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সজাগ এবং এসব থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। আগুনের ঘটনায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘটিত এই প্রাণ-প্রকৃতিবিরোধী কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করছি। এ জঘন্য কাজে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। ক্যাম্পাসের বিস্তীর্ণ টিলাময় এলাকায় দফায় দফায় আগুন লাগা আমাদের বর্তমান ক্যাম্পাসে চলমান ছাত্র আন্দোলনের পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

আন্দোলন অব্যাহত : উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত আছে শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের। ক্যাম্পাসে মুক্ত আড্ডা ও খাবারের জন্য ‘টং দোকান’ স্থাপন, প্রতিবাদী কনসার্ট, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় ছড়ানো ময়লা পরিষ্কারের মাধ্যমে গতকাল সারা দিন আন্দোলন চলে বলে জানান মুখপাত্র মোহাইমিনুল বাশার। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রতিবাদ করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা এতে অংশগ্রহণ করছেন।’

এখনো ব্লকড আন্দোলনকারীদের সহায়তা করার অ্যাকাউন্ট : ১৬ জানুয়ারি থেকে আন্দোলনরতদের খাবার ও আনুষঙ্গিক খরচের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা ছয়টি অ্যাকাউন্টে পাঠাতেন আর্থিক সহায়তা। ২৪ জানুয়ারি অ্যাকাউন্টগুলো ব্লকড হয়ে যায়। এর মধ্যে ইস্টার্ন ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্ট, তিনটি বিকাশ অ্যাকাউন্ট, একটি রকেট ও একটি নগদ অ্যাকাউন্ট আছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র মোহাইমিনুল বাশার রাজ বলেন, ‘আমাদের অসুস্থ শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয়ভার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিয়েছেন। আন্দোলনে অধ্যাপক জাফর ইকবাল ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন। কিন্তু এখনো আমাদের ছয়টি অ্যাকাউন্ট ব্লকড হয়ে আছে। আমরা এর আশু সমাধান চাই এবং এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’ তাদের অভিযোগ, সোমবার থেকে অ্যাকাউন্টগুলোয় কোনো লেনদেন করা যাচ্ছে না। সব অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তারা প্রাথমিকভাবে বিকাশের কল সেন্টারে যোগাযোগ করলেও কোনো সদুত্তর পাননি।

 

সর্বশেষ খবর