রবিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

চাকরিপ্রার্থীদের শতভাগ আস্থার জায়গা সরকারি কর্ম কমিশন

নিয়োগ শুধুই মেধায়

আকতারুজ্জামান

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারে যোগ্য প্রার্থী নিয়োগের জন্য পরীক্ষা গ্রহণ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (বিপিএসসি)। বিসিএসে উত্তীর্ণ কিন্তু পদস্বল্পতার কারণে ক্যাডার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত নন এমন নন-ক্যাডারদেরও বিভিন্ন পদে নিয়োগের সুপারিশ করে কমিশন। এ ছাড়া সরকারের যে কোনো মন্ত্রণালয়ের চাহিদামাফিক প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে যোগ্য প্রার্থী নিয়োগ দিতে পরীক্ষার আয়োজন করে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। কোনো সুপারিশ, তদবির ছাড়াই মেধার মাধ্যমে প্রার্থীদের নিয়োগের কারণে দিন দিন পিএসসির বিভিন্ন পরীক্ষায় আগ্রহ বাড়ছে চাকরিপ্রার্থীদের। বিসিএসে এখন রেকর্ডসংখ্যক প্রার্থী আবেদন করছেন। মেধার মাধ্যমে শতভাগ প্রার্থী নিয়োগের কারণে সরকারি কর্ম কমিশন চাকরিপ্রার্থীদের জন্য শতভাগ আস্থার জায়গায় পরিণত হয়েছে।

তথ্যমতে, সরকারি কর্ম কমিশনের পরীক্ষায় দিন দিন বাড়ছে আবেদনকারীর সংখ্যা। ৪০তম বিসিএসে ১ হাজার ৯০৩টি শূন্যপদের বিপরীতে আবেদন করেছিলেন ৪ লাখ ১২ হাজার ৫৩২ প্রার্থী। ৪১তম বিসিএসে ২ হাজার ১৬৬টি শূন্য পদের বিপরীতে আবেদন করেন ৪ লাখ ৪ হাজার ৬৫১ জন প্রার্থী। আর ৪৩তম বিসিএসে ১ হাজার ৮১৪টি শূন্যপদের বিপরীতে আবেদন জমা পড়েছিল ৪ লাখ ৩৫ হাজার ১৯০টি। বর্তমানে ৪৪তম বিসিএসের আবেদন গ্রহণ চলছে। যোগ্য প্রার্থী বাছাই করতেই বড় একটি সময় ব্যয় হয় এ কমিশনের।

জানা গেছে, বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া গেলেও পিএসসির পরীক্ষার ক্ষেত্রে এমন কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় না। পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্নফাঁসের কোনো গুজবও তৈরি হয় না। কারণ কমিশন কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নকারক, মডারেটর, পরীক্ষক, নিরীক্ষক ও মৌখিক পরীক্ষার বিশেষজ্ঞ নিয়োগের জন্য সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা নির্ধারণ করে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক, খ্যাতিমান সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রশ্নকারক, মডারেটর, পরীক্ষক, নিরীক্ষক নিয়োগ করা হয়। নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের কোনো পর্যায়েই কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য বা কর্মকর্তারা সরাসরি সম্পৃক্ত থাকেন না। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর বর্তমান পদ্ধতিতে নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণের ফলে পরীক্ষা গ্রহণ কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হয়েছে কমিশনে।

পিএসসি-সূত্র জানান, নন-ক্যাডারে বিভিন্ন পদের পরীক্ষা নিতে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের শেরেবাংলানগরে পিএসসি কার্যালয়ে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে সেখানেই ছাপাকাজ সম্পন্ন করা হয়। আর ক্যাডারের বিভিন্ন পদে প্রশ্নপত্র ছাপার কাজ সম্পন্ন করা হয় বিশেষায়িত একটি প্রেস থেকে। ছয়টি সেটে প্রশ্ন প্রণয়ন করে পরীক্ষার দিন পরীক্ষার আধঘণ্টা আগে লটারি করে একটি সেটকোড নির্ধারণ করা হয়। এ সময় সেখানে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশের দুজন বিশিষ্ট নাগরিক উপস্থিত থাকেন। লিখিত পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রণয়ন করা হয় চার সেট প্রশ্ন। সেখান থেকে পরীক্ষার দিন আধঘণ্টা আগে লটারি করে একটি সেট নির্ধারণ করে পরীক্ষা নেওয়া হয়। যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করার ফলে এ পরীক্ষা কার্যক্রম নিয়ে কোনো সংশয় তৈরি হয় না।

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘আমরা সম সময় প্রস্তুত থাকি যেন পিএসসির পরীক্ষা নিয়ে কোনো প্রশ্ন বা অভিযোগ না ওঠে। পিএসসি সবার জন্য পরিপূর্ণ আস্থার জায়গা। ৯৯ শতাংশও নয়, পুরো ১০০ শতাংশ আস্থার জায়গা। এটি নিশ্চিত করতে যা যা করার সবই করার চেষ্টা করি আমরা।’ তিনি বলেন, পিএসসির পরীক্ষায় তদবিরের কোনো ভূমিকা নেই। এখানে কোনো তদবির কার্যকর হয় না। যারা তদবিরের চেষ্টা বা অপচেষ্টা করেন তারা না জেনেই করেন। কোনো নিয়োগ পরীক্ষা বা পরীক্ষার ফল প্রভাবিত করার ক্ষমতা চেয়ারম্যানেরও থাকে না। শতভাগ পদে নিয়োগের সুপারিশ মেধার ভিত্তিতে করা হয়। তিনি বলেন, ‘পিএসসিতে যারা শপথ নিয়ে আসেন তারাও শপথ রক্ষা করেন বলে মনে করি। অবৈধভাবে কোনো কিছু করার সুযোগও তাদের থাকে না। মৌখিক পরীক্ষাও প্রভাবিত করার সুযোগ থাকে না। কোন পিএসসি সদস্য কোন বোর্ডে মৌখিক পরীক্ষা নেবেন তা-ও পরীক্ষা শুরুর কিছুক্ষণ আগে জানতে পারেন তারা। এখানে ধর্ম, বর্ণ, জেলা নির্বিশেষে একজন প্রার্থীকে মেধার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়।’

সর্বশেষ খবর