ক্রামাত্রোস্ক শহরে নিষিদ্ধ ফসফরাস বোমা ব্যবহার করেছে রাশিয়া, এমন অভিযোগ করেছে ইউক্রেন। এক ফেসবুক পোস্টে ইউক্রেনের পুলিশ প্রধান ওলেকসি বিলোচিতস্কি বলেন, ‘তুমিও ফসফরাস বোমায় ঝলসে যেতে পার’। শুধু পুলিশ প্রধান নয়, ইউক্রেনের কর্মকর্তারা আরও কয়েকবার একই অভিযোগ করেছেন। তাদের অভিযোগ মস্কো ফসফরাস বোমা ব্যবহার করছে। যার কারণে আগুন বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। তবে রাশিয়া এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে। ১৯৭৭ সালে জেনেভা কনভেনশনে যুদ্ধ বা সংঘর্ষে ফসফরাস বোমা নিষিদ্ধ করা হয়। কারণ এটি অন্য সাধারণ বোমার চেয়ে মারাত্মক। এ বোমা যেখানে ছোড়া হয় সেখানে আগুন ধরে যায় এবং এ আগুন অনেকটা জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে, বিভিন্ন নিষিদ্ধ বোমার ব্যবহারের পর এবার রাশিয়া ইউক্রেনে কেমিক্যাল বোমার ব্যবহার করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে যদি রাশিয়া কেমিক্যাল বোমা ব্যবহার করে তাহলে তাদের চরম মূল্য দিতে হবে।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভ, দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর নগরী মারিউপোল, উত্তরাঞ্চলীয় চেরনিহিভ- এগুলোর আশপাশে এখনো লড়াই চলছে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন আরও বেশি বিস্ফোরণ দেখা যাচ্ছে। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী বলছে, তারা রুশ সৈন্যদের বিরুদ্ধে এক পাল্টা অভিযান চালিয়ে কিয়েভের পশ্চিমের মাকারিভ শহরটি পুনর্দখল করেছে। কিয়েভের কেন্দ্রস্থল থেকে ২৫ মাইল পূর্বদিকের আরেকটি শহর বোরিস্পিলের আশপাশের এলাকায় ইতোমধ্যেই যুদ্ধ চলছে। সেখানকার বাসিন্দাদের ওই অঞ্চল ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রুশ সীমান্ত থেকে ৩০ মাইল দূরের খারকিভ শহরে রুশ বাহিনী অবিরাম গোলাবর্ষণ করছে। সেখানে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৫০০ বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে এবং প্রায় ১০০০ বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী বলছে, রাশিয়া গত ২৪ ঘণ্টায় ইউক্রেনের আকাশসীমায় তাদের বিমানের উপস্থিতি বাড়িয়েছে। তবে তারা এটাও বলছে যে রুশ বাহিনীর হাতে মাত্র তিন দিন চলার মতো জ্বালানি ও গোলাবারুদের মজুদ আছে। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করছে যে এ পর্যন্ত ১৫ হাজার রুশ সৈন্য নিহত হয়েছে- যে দাবি বিবিসি যাচাই করতে পারেনি। রাশিয়া বলছে ২ মার্চ পর্যন্ত তাদের ৪৯৮ জন সৈন্য নিহত হয়েছে। অন্যদিকে এই প্রথমবারের মতো কৃষ্ণসাগর তীরবর্তী ইউক্রেনীয় বন্দর ওডেসার আবাসিক এলাকায় রুশদের নিক্ষিপ্ত গোলা এসে পড়েছে। সাগর থেকে রুশ নৌবাহিনী এ গোলাবর্ষণ করে বলে জানা গেছে। তবে ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রগুলো বলছে, রুশ বাহিনীর অগ্রযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে, এবং ইউক্রেনের বাহিনী মারিউপোল শহরটি দখলে নেওয়ার রুশ চেষ্টা ঠেকিয়ে দিচ্ছে। অবরুদ্ধ মারিউপোল শহর থেকে আরও তিন হাজার লোককে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে সোমবার বিভিন্ন যুদ্ধ এলাকা থেকে মোট ৮ হাজার বেসামরিক লোককে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। মারিউপোলে মানবিক করিডোর প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে এখনো দুই পক্ষের ঐকমত্য হয়নি।

পুতিনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসার আহ্বান জেলেনস্কির : ইউক্রেনে রুশ অভিযান চলতে থাকার মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আবারও রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। জেলেনস্কি বলেন, তার সঙ্গে পুতিনের বৈঠক ছাড়া এ যুদ্ধ অবসানের ব্যাপারে আলোচনা সম্ভব হবে না। তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার দখলকৃত ক্রিমিয়া, ডনবাস অঞ্চল এবং ইউক্রেনের নিরাপত্তার গ্যারান্টিসহ ‘সব বিষয় নিয়ে’ আলোচনার জন্য তিনি তৈরি আছেন।