বাজারমূল্যের চেয়ে সুলভে নিত্যপণ্য কিনতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাকসেলে ভিড় বাড়ছেই। সব বয়সী মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনছেন। প্রথম দিকে সংকোচ থাকলেও বর্তমানে অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারকেও টিসিবির ট্রাক থেকে ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে দেখা যাচ্ছে। রোদের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে কষ্ট সহ্য করলেও কম মূল্যে অনেক দিনের খাদ্যপণ্যের জোগান হাতে পেয়েই হাসি ফুটছে মানুষের মুখে। এদিকে ট্রাকসেলের পাশাপাশি সরকার রমজানে ১ কোটি নিম্ন আয়ের পরিবারকে কার্ডের মাধ্যমে কম মূল্যে টিসিবির পণ্য দেওয়া শুরু করায় বাজারেও ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এক দিনের ব্যবধানে গতকাল বাজারে চাল, চিনি, ছোলা, ডাল, পিঁয়াজসহ কিছু পণ্যের দাম কেজিতে ২ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত কমেছে। তবে মাছ-মাংসের দাম গতকালও ছিল নিম্ন আয়ের মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। গতকালও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় টিসিবির লাইনে ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে হাজারো মানুষের ভিড় দেখা গেছে। কিশোর থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষই ছিল সে লাইনে। বেশি দেখা গেছে নারীদের। দেখা মেলে অনেক মধ্যবিত্তের। ২০ নম্বর মহাখালী কাঁচাবাজারের সামনে টিসিবির ট্রাকসেল থেকে পণ্য কিনতে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন এই প্রতিবেদকের পরিচিত একজন স্কুলশিক্ষক। তিনি বলেন, ‘সামাজিক অবস্থানের কথা ভেবে আগে কখনো টিসিবির লাইনে দাঁড়াইনি। পরে ভেবে দেখলাম নিজের টাকা দিয়েই পণ্য কিনছি। ভিক্ষা তো করছি না। রমজান সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো দাম রাখছেন। আর সরকার তো আমাদের টাকা দিয়েই ভর্তুকিমূল্যে এসব পণ্য দিচ্ছে।’ টিসিবির পণ্য কিনতে নাতির হাত ধরে এসেছিলেন সত্তরোর্ধ্ব আছিয়া। বয়স্ক মানুষ দেখে লাইনে দাঁড়ানো অন্যরা তাঁকে সামনে এগিয়ে দেন। ১০ মিনিটের মধ্যেই টিসিবির পণ্য কিনে ফিরে যান তিনি। এদিকে বৃহস্পতিবার রাজধানীর সাঁতারকূলের পুকুরপাড় এলাকায় প্রতিবেশীর হাত ধরে টিসিবির পণ্য কিনতে আসেন শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী বৃদ্ধ মো. শফিক। বয়স তাঁর আশির ওপরে। ঠিকমতো হাঁটতেও পারেন না। স্ত্রী মারা গেছেন অনেক আগে। লাঠিতে ভর দিয়ে এসে টিসিবির পণ্য কিনে হাসিমুখে ফিরে যান বাসায়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রেক্ষাপটে রমজানে ১ কোটি হতদরিদ্র পরিবারকে এবার টিসিবির মাধ্যমে সাশ্রয়ী দামে পিঁয়াজ, তেল, ডাল, চিনি, খেজুর ও ছোলা দিচ্ছে সরকার। প্রতিটি পরিবারকে দেওয়া হবে দুবার। এ ব্যাপারে বাণিজমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ১ কোটি কার্ড মানে প্রতি পরিবারে পাঁচজন সদস্য হলে ৫ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষভাবে উপকারভোগী হবেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জেলা প্রশাসনের ৫৭ লাখ ১০ হাজার ‘উপকারভোগী’ পরিবারের মধ্যে টিসিবি পণ্য বিক্রি করতে ‘ফ্যামিলি কার্ড’ বিতরণ করা হয়েছে। করোনার সময় ৩০ লাখ পরিবারের নগদ সহায়তার ডাটাবেজের সঙ্গে এ ৫৭ লাখ ১০ হাজার ‘উপকারভোগী’ পরিবার যোগ করা হয়েছে। বলা যায় দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা সবাই এ সুবিধা পাবেন।