সোমবার, ৩০ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

পেশিশক্তি দিয়ে ভোটে জেতার সুযোগ নেই : সিইসি

কুমিল্লা প্রতিনিধি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পেশি শক্তি ব্যবহার করে বিজয়ী হওয়ার চেষ্টা করলে তা হবে চরম ভুল। প্রয়োজনে নির্বাচন বন্ধ করে দেব। পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য থাকবেন। আনন্দমুখর পরিবেশে নির্বাচন করতে চাই। আমরা যুদ্ধ চাই না। প্রতিযোগিতা চাই।

জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে গতকাল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সিইসি এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে কেউ কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে বিজয়ী হলে, তদন্তে তা প্রমাণিত হলে, নির্বাচন কমিশন যে কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণসহ ফৌজদারি আইনে মামলা করবে। নির্বাচন বাতিলও করা হতে পারে। কোনো কারণে যদি কোনো কেন্দ্রে ইভিএম নষ্ট হয় বা কেউ নষ্ট করে ফেলে সে ক্ষেত্রে কোনো ভোটার যদি বিকাল ৪টার আগে কেন্দ্রে উপস্থিত হন রাত ১টা হলেও তাদের ভোট গ্রহণ করা হবে। সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণের সব প্রস্তুতি আছে আমাদের। কেউ যদি সুন্দর পরিবেশ নষ্ট করেন তাহলে ওইসব ব্যক্তি নিজেদের বিপদ ডেকে আনবেন। তাই মেয়র, সংরক্ষিত কাউন্সিলর ও সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীদের অনুরোধ করব, তারা যেন সৌহার্দ্য বজায় রেখে নির্বাচন সম্পন্ন করেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. দুলাল তালুকদার। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর হোসেন, নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহম্মদ খান, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং অফিসার মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী, পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান। মতবিনিময় সভায় মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে বক্তৃতা করেন টেবিলঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু, ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার, হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী রাশেদুল ইসলাম, হরিণ প্রতীকের প্রার্থী কামরুল আহসান বাবুল। সভায় যোগ দেননি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। তার পক্ষে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন বক্তৃতা করেন। এদিকে বিভিন্ন ওয়ার্ডে পুলিশের কোনো প্রার্থীর পক্ষ নেওয়া, প্রতিপক্ষের বাসায় গিয়ে হুমকিসহ বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে বক্তৃতা করেন ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী কাজী গোলাম কিবরিয়া, আবুল হোসেন ছোটন, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী জমির উদ্দিন খান জম্পি, ২ নম্বর ওয়ার্ডের মাসুদুর রহমান মাসুদ, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের সেলিম খান, নাহিদা আক্তার,  ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সরকার মাহমুদ জাবেদ, কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল্লাহ মোমেন, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল জলিল, সংরক্ষিত ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী কাউছারা বেগম সুমি, সংরক্ষিত ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী নেহার বেগমসহ আরও কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থী।

মতবিনিময় সভায় উত্তেজনা : সভায় গিয়ে দেখা যায়, স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার তার বক্তব্যে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন ও পূর্বের নির্বাচনের অনিয়ম নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন। এ সময় পেছন থেকে আওয়ামী লীগপন্থি কয়েকজন কাউন্সিলর উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তারা এই স্বতন্ত্র প্রার্থীকে উদ্দেশ করে নানা কথা বলতে থাকেন। এতে পুরো অডিটরিয়ামে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। কাউন্সিলররা আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ান। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান উত্তেজিত প্রার্থীদের শান্ত করেন। এরপর আবারও বক্তব্য রাখেন স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার।

কাউন্সিলর প্রার্থীর বাসার সামনে পাহারা : মতবিনিময় সভায় নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সেলিম খান বলেন, মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার পর আমার বাড়ির সামনে প্রতিপক্ষের লোকজন পাহারা বসিয়েছে। বাসায় আসা লোকদের ভয় দেখাচ্ছে। আমার বাড়ির কাজের মেয়েকেও আসতে নিষেধ করেছে। ১৫/২০ দিন ধরে কাজের মেয়ে বাসায় আসতে পারছেন না। আমার প্রচারণায় যারা যাচ্ছে তাদের ছবি তুলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে। আমাকে প্রায় একঘরে করার পরিকল্পনা করছে। এ বিষয়ে গত ২৬ মে আমি রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। সেলিম খান বলেন, এই ওয়ার্ডে আমিসহ তিনজন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী আছেন। আমি কারও নাম বলতে চাই না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত করলে সব বেরিয়ে আসবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, সবার অভিযোগ আমলে নিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রমাণ পেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগামী ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী, বিএনপির সাবেক দুই নেতাসহ পাঁচজন মেয়র প্রার্থী। সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১০৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সর্বশেষ খবর