বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

সিএনজিতে ভর্তুকি কার স্বার্থে

নিজস্ব প্রতিবেদক

সিএনজিতে ভর্তুকি কার স্বার্থে

কৃষির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ডিজেলসহ সব জ্বালানির দাম বাড়লেও রহস্যজনক কারণে এখনো সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস বা সিএনজিতে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। প্রভাবশালীদের সিএনজি গ্যাস স্টেশন থাকায় এ খাত নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। এ কারণে অনেকে প্রশ্ন করছেন, কার স্বার্থে সিএনজিতে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে! নাকি এর আড়ালে কোনো রাঘববোয়ালরা জড়িত। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সন্ধ্যার পর থেকেই সারা রাত সিএনজি স্টেশনগুলো থেকে দূরপাল্লার বাসসহ সব ধরনের যানবাহন গ্যাস নিয়ে থাকে। পাশাপাশি কিছু শিল্পকারখানার গাড়িও তাদের বয়লার চালাতে সিএনজি নেয়। দাম কম থাকার সুযোগ নিয়ে সিএনজি ব্যবসার নামে হরিলুট চলছে। আর এতে সরকার শুধু ভর্তুকিই গুনছে না, বিষয়টি ব্যাপকভাবে জ্বালানি খাতকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। দূরপাল্লার বাস, ট্রাক, লরিসহ বিভিন্ন পরিবহনে সিএনজি ব্যবহার এর অন্যতম কারণ কি না তা তদন্ত করে দেখার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক প্রভাবশালী ট্রাক ও লরির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। অনেক এমপির আছে সিএনজি স্টেশন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে গুরুত্ব বেড়েছে সিএনজির। সে সময় আভাস দেওয়া হচ্ছিল সিএনজির দামও বাড়বে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিএনজির দাম বাড়ানো হয়নি। এতে জ্বালানি খাতে তৈরি হয়েছে বৈষম্য, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন খাতে। অন্যদিকে অনেকে পরিবহনে সিএনজি ব্যবহার করেন। কিন্তু দাম বাড়ানো হয়েছে তেলের মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে বিষেশজ্ঞরা চান সিএনজির দাম বাড়ানো হোক। আর তা না হলে এ খাত নিয়ে প্রশ্ন বাড়তেই থাকবে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সিএনজির বিকল্প জ্বালানি যানবাহন খাতে হয় পেট্রোল না হয় ডিজেল। এজন্য এবার যখন ডিজেলের দাম বাড়ানো হয় তখন সিএনজির দাম বাড়ানোর বিষয়টিও সামনে আসে। সিএনজিতে প্রচুর বিনিয়োগ হয়েছে। সিএনজি আগে দেশি গ্যাসে ছিল। এখন আমদানি করতে হচ্ছে। আমরা আগে বলেছিলাম পেট্রোলের দাম যা হবে তার ৭৫ শতাংশ হবে সিএনজির দাম।’ জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম বলেন, ‘সরকারকে এজন্য সিএনজির মূল্য নির্ধারণে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ পর্যন্ত দেশের অন্যান্য জ্বালানির মূল্য বাড়ালেও এ খাতটি এখনো ধরা হয়নি। শুধু সিএনজির ওপর ভর করে থাকলে সংকট বাড়বে।’ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) তথ্যমতে, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির আগে জুলাইয়ে গড়ে দৈনিক অকটেন বিক্রি হতো ১ হাজার ৩০৯ মেট্রিক টন। ৫ আগস্ট তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর এটি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১৮৫ মেট্রিক টন। এ ছাড়া পেট্রোল দৈনিক গড়ে বিক্রি হতো ১ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন, মূল্যবৃদ্ধির পর গড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০০ মেট্রিক টন। একই সঙ্গে কমেছে ডিজেলের বিক্রিও। জুলাইয়ে গড়ে দৈনিক ডিজেল বিক্রি হয় ১৩ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। দাম বাড়ার পর থেকে গড়ে দৈনিক ডিজেল বিক্রি হচ্ছে ১৩ হাজার ২০০ মেট্রিক টন। সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন করে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যবহারকারী অনেকেই এখন সিএনজিতে ঝুঁকছেন। অকটেনের তুলনায় সাশ্রয়ী হওয়ায় গাড়ির মালিকরাও ঝুঁকছেন সিএনজিতে। যেখানে প্রতি লিটার অকটেন ১৩০ টাকা সেখানে প্রতি ঘনমিটার সিএনজি ৪৩ টাকা। এজন্য গাড়িতে সিএনজি কনভারসনের প্রবণতাও আগের চেয়ে বেড়েছে। বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভারসন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারহার নুর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সিএনজির ব্যবহার বেড়েছে। ডিজেলচালিত গাড়িগুলো আবার সিএনজিতে ফেরত এলে এর ব্যবহার আরও বৃদ্ধি পাবে। আগে বাই ফুয়েল সিস্টেমের কারণে ব্যক্তিগত গাড়িতে দুটো ফুয়েলই (তেল ও গ্যাস) ভোক্তারা ব্যবহার করতেন। তখন তারা তেল ব্যবহার করতেন ৩০ শতাংশ ও গ্যাস ৭০ শতাংশ। এখন গ্যাসের ব্যবহার বেড়ে ৮০ শতাংশ হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর