বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

অর্থ পাচার বন্ধে সেল গঠনের নির্দেশ হাই কোর্টের

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভারত দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করে বিদেশ থেকে টাকা ফেরত এনেছে। ভারত পারলে আমরা পারব না কেন? গতকাল বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান মাসুদ বিশ্বাস আদালতে হাজিরের পর তাকে উদ্দেশ্য করে এমন মন্তব্য করেছেন হাই কোর্ট। একই সঙ্গে অর্থ পাচার প্রতিরোধে কার্যকর  ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিএফআইইউকে একটি ‘গবেষণা সেল’ গঠন করতে বলেছেন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ।

এ ছাড়া বিএফআইইউ কোন কোন দেশের কাছে অর্থ পাচার ও পাচারকারীদের তথ্য চেয়েছে, কী তথ্য পেয়েছে, তথ্য পেয়ে থাকলে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে এবং পাচার করা অর্থ উদ্ধারে কী পদক্ষেপ নিয়েছে, এসব বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে বলে আগামী ২৬ অক্টোবর পরবর্তী আদেশের জন্য ধার্য রাখা হয়েছে। আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

গত ১০ আগস্ট জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড বলেন, সুইস ব্যাংকে জমা রাখা অর্থের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির জন্য তথ্য চায়নি। সুইস ব্যাংকের ত্রুটি সংশোধনে সুইজারল্যান্ড কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তবে আমি আপনাদের জানাতে চাই, সুইজারল্যান্ড কালো টাকা রাখার কোনো নিরাপদ ক্ষেত্র নয়। এরপর ১১ আগস্ট বিষয়টি নজরে নিয়ে সুইস ব্যাংকে অর্থ জমাকারীদের তথ্য কেন জানতে চাওয়া হয়নি তা রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) জানাতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বলেছেন হাই কোর্ট। এরপর আদালতে দুদক এবং বিএফআইইউর পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ হলফনামা আকারে তথ্য দাখিল করে। ওই হলফনামায় যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় বিএফআইইউ প্রধানকে তলব করা হয়। সেই তলবে গতকাল হাজির হন মাসুদ বিশ্বাস।  

হাজির হয়ে মাসুদ বিশ্বাস আদালতের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, অসাবধানতাবশত এমনটি হয়েছে। আদালতে খসড়া প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়েছে। আজ (গতকাল) যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে প্রতিবেদন দাখিল করেছি। এমন ভুলের যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় সে জন্য অঙ্গীকার করছি।

 এ সময় আদালত বলেন, আদালতে আদেশ বাস্তবায়ন প্রতিবেদন পাঠানোর ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়া উচিত। এ সময় মাসুদ বিশ্বাস ক্ষমা চাইলে আদালত এ কর্মকর্তাকে সতর্ক করে বলেন, ভবিষ্যতে এমন হলে কঠোর পদক্ষেপ নেব। বিএফআইইউ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দেশের এফআইইউ ও এগমন্ট গ্রুপের কাছে ৬৭ জনের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। আদালত এ প্রতিবেদন দেখে বিএফআইইউ প্রধানের কাছে জানতে চান ৬৭ জনের নাম কীভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। জবাবে মাসুদ বিশ্বাস বলেন, মিডিয়া এবং অন্যান্য এজেন্সি থেকে আমরা তথ্য সংগ্রহ করেছি। তখন আদালত বলেন, আপনার কাছে তো নির্ভুল তথ্য নেই। অনুমানের ভিত্তিতে আদালতে তথ্য দেওয়া যাবে না। আমাদের মনে হয়েছে ৬৭ জনের নাম অনুমানের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়েছে। এর কমও হতে পারে বেশিও হতে পারে। মাসুদ বিশ্বাস ফের বলেন, বিভিন্ন ডেটা বিশ্লেষণ করে এই নামগুলো আমরা পেয়েছি। অর্থ পাচার প্রতিরোধ সংক্রান্ত ভারতের ‘রামজিৎ মালানি বনাম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া’ মামলার রায় পড়ার পরামর্শ দিয়ে বিএফআইইউ প্রধানের উদ্দেশ্যে আদালত বলেন, কেবল চিঠি চালাচালিই যথেষ্ট নয়। আইনের মধ্যে যথাযথ প্রক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ না করলে ৫০ বছরেও পারবেন না। মাসুদ বিশ্বাস বলেন, ২০১৭ থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত দুদক, এনবিআর এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ৯৮৩টি ইন্টিলিজেন্স প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। বিদেশে ৬৪৪টি অনুরোধ পাঠিয়েছি। ১২৮টি রিসিভ করেছি। ৭৯ বার এফআইইউ টু এফআইইউ যোগাযোগ হয়েছে। তখন আদালত এফআইইউ টু এফআইইউ চুক্তি হওয়া উচিত অভিমত দিয়ে বলেন, ভারত দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করে ৭৮৪ জনের টাকা ফেরত এনেছে। ভারত পারলে আমরা কেন পারব না? কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন আমাদের জানান। গবেষণা সেল তৈরি করেন। সেল তৈরি করে আমাদের জানান। দেশের স্বার্থে আপনাকে ডেকেছি। আমরা যা করি দেশ-জনগণের কল্যাণে করছি।

সর্বশেষ খবর