ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সাগরে ড্রেজারডুবির ঘটনায় নিখোঁজ হওয়া আরও চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট আটজনের লাশ উদ্ধার করা হলো। গতকাল তাদের লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মিরসরাই উপজেলা প্রশাসন। সব লাশ উদ্ধার হওয়ায় উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত করা হয়েছে। নিহত আটজনই পটুয়াখালীর সদর উপজেলার জৈনকাঠি ইউনিয়নের চর জৈনকাঠির কাটাখালী গ্রামে। ওই গ্রাম এখন শোকে স্তব্ধ। ড্রেজারডুবির ঘটনায় নিহতরা হলেন- ইমাম মোল্লা (৩২), মাহমুদ মোল্লা (৩২), আল আমীন (২৫), জাহিদ ফকির (২৮), শাহিন মোল্লা (৩৮), তারেক মোল্লা (২২), বাশার হাওলাদার (৩৫) ও আলম সরদার (৩২)। আনিস মোল্লার ছেলে শাহিন মোল্লা ও ইমাম মোল্লাসহ কাটাখালী গ্রামের এই আট শ্রমিক সৈকত-২ নামের বাল্কহেডে কাজ করতেন। গত সোমবার রাতে মিরসরাই উপজেলার শায়েরখালী ইউনিয়নে বঙ্গবন্ধু ইকোনমিক জোন সংলগ্ন সাগরে সৈকত-২ এন্টারপ্রাইজ নামের ড্রেজারটি শ্রমিকসহ ডুবে যায়। মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে ভাটা শুরু হলে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল সাগরে উদ্ধার অভিযানে নামে। একে একে উদ্ধার করা হয় আট শ্রমিকের লাশ। মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিনহাজুর রহমান বলেন, বুধবার রাতে এবং গতকাল চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
জানা গেছে, নিহত ইমাম মোল্লা (৩২), মাহমুদ মোল্লা (৩২), আল আমীন (২৫), জাহিদ ফকিরের (২৮) লাশ গতকাল ভোরে পটুয়াখালীর সদর উপজেলার জৈনকাঠি ইউনিয়নের চর জৈনকাঠির কাটাখালী গ্রামে পৌঁছলে সকাল ৭টায় নামাজে জানাজা শেষে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়। এ ছাড়া শাহিন মোল্লার (৩৮) লাশ পটুয়াখালীর উদ্দেশে রওনা হয়েছে। শাহিন মোল্লা ও ইমাম মোল্লা পরস্পর আপন ভাই আর মাহমুদ মোল্লা ও তারেক মোল্লা তাদের চাচাতো ভাই।
শাহিনের নাবালক তিন সন্তান ও তার গর্ভবতী স্ত্রী খাদিজা বেগমের কান্নায় আকাশ ভারী হয়ে ওঠে। দুই সন্তান হারা মা হাসিনা বেগম বিলাপ করছেন আর বলছেন, দুই ভাই দীর্ঘদিন ধরে ওই বাল্ক হেডে কাজ করতেন। গত কোরবানির পর তার বড় সন্তান শাহিন বাড়ি থেকে কাজে যায়। এর এক মাস পর ছোট ছেলেও কাজে যায়। ছোট ছেলে বিয়ে করলেও এখনো বউ উঠিয়ে আনা হয়নি। নিহত তারেকের মা সাহিদা বেগমও কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। মাহমুদের মা মনোয়ারা বেগম আহাজারি করে বলছেন, তার পাঁচ সন্তানের মধ্যে মাহমুদ অবিবাহিত। ও ড্রেজারে কাজ করত। অপরদিকে, আল-আমিন, বাসার হাওলাদার, জাহিদ ফকির ও আলম সরদারদের বাড়িতেও চলছে শোকের মাতম। দুই সহোদরের বাবা আনিস মোল্লা বলেন, পিতা বেঁচে থাকতে দুই সন্তান হারানোর শোক কোনো বাবাই সহ্য করতে পারে না। আমার নাতি-নাতনিরা আজ এতিম। আমার বয়স হয়েছে ওদের ভরণপোষণের দায়িত্ব কে নেবে।