সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে ও ঝিনাইদহের শৈলকুপায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে দুজন নিহত ও অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে সংঘর্ষ হয়। তখন নেতারা আত্মরক্ষায় চেয়ারকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন। প্রতিনিধিরা এ খবর পাঠিয়েছেন।
সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষে একজন নিহত ও অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল বিএডিসি মাঠে অনুষ্ঠিত উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে মঞ্চে ওঠা নিয়ে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহতের নাম আজমল হোসেন চৌধুরী। তিনি কুলঞ্জ গ্রামের আবদুল হান্নানের ছেলে। দলীয় সূত্র জানায়, সাবেক পৌর মেয়র মোশারফ মিয়া ও প্রদীপ রায়ের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষে উভয় পক্ষ ইটপাটকেল ও চেয়ার ছোড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দিরাই পৌরসভার সাবেক মেয়র মোশাররফ মিয়ার সমর্থকদের মঞ্চে উঠতে না দেওয়ায় এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। আহতরা হলেন- দিরাই পৌরসভার সাবেক মেয়র মোশাররফ মিয়া, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা কামরুল হাসান চৌধুরী, এবাদুর রহমান কুবাদ, জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান সেন্টু, পৌর কাউন্সিলর এ বি এম মাসুম প্রদীপ প্রমুখ।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষের সময় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূরুল ইসলাম নাহিদ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আজিজুল সামাদ আজাদ ডন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান, সহসভাপতি নোমন বখত পলিন, সাধারণ স¤পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন, স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্ত, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শামীমা আক্তার খানম মঞ্চে ছিলেন। তারা চেয়ারকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আত্মরক্ষা করেন। পরে পুলিশ ও কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। প্রায় এক ঘণ্টা পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফের সম্মেলন শুরু হয়। নিহতের ভাগ্নে রহমত আলী বলেন, আমি ও মামা একসঙ্গেই সম্মেলনে ছিলাম। আমাদের ওপর দুটি ইটের ঢিল এসে পড়ে। এতে মামা আঘাত পান। তখনই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মারা যান তিনি।
উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক পৌর মেয়র মোশাররফ মিয়া দাবি করেছেন, নিহত আজমল তার কর্মী। তার সামনে প্রতিপক্ষের ইটের আঘাতে আহত হন আজমল। তবে অপরপক্ষ এটাকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে দাবি করছে। দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল আলম বলেন, সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হয়েছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
ঝিনাইদহে নিহতের স্বজনদের আহাজারি
ঝিনাইদহ : জেলার শৈলকুপায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে সাইদ বিশ্বাস (৪০) নামে একজন নিহত ও অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল উপজেলার লক্ষণদিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সাইদ কেষ্টপুর গ্রামের জাবেদ আলীর ছেলে। জানা গেছে, উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা মান্নান মণ্ডল ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য কফিল উদ্দিনের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল।
৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কপিল বিশ্বাসের সমর্থক হানিফ মণ্ডল, মতিউর রহমান, আমিন উদ্দিন, আফজাল, আনোয়ারসহ কয়েকজন মিলে বিএলকে বাজারে তরিকুলকে পিটিয়ে আহত করে। এ ঘটনায় আহত তরিকুলকে সাইদসহ কয়েকজন তার বাড়িতে দেখতে যান। তখন আবার অতর্কিত হামলা চালায় কপিলের সমর্থকরা।
এ ঘটনায় গুরুতর আহত সাইদ বিশ্বাস, শরিফুল ইসলাম, রেজাউল বিশ্বাস, গোলাম কিবরিয়া, শরিফ, বকুল ইসমাইলকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। এর মধ্যে আবু সাইদকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ইউপি সদস্য কপিল বিশ্বাস অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মান্নানের সমর্থকরা তার সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়।
শৈলকুপা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, সংঘর্ষে জড়িতদের ধরতে অভিযান চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।