মুন্সীগঞ্জ সদরের চরঝপটা এলাকায় আধিপত্য নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষে ভয়াবহ সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ ও ঘরবাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে এই আশঙ্কায় স্থানীয় দক্ষিণ চরমশুরা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঠদান না করেই ছুটি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। রবিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সদর উপজেলার চরকেওয়ার ইউনিয়নের চরঝাপটা গ্রামে বিবদমান দুটি পক্ষ মন্টু দেওয়ান ও নান্নু মিজি গ্রুপের সঙ্গে জিন্নত মিজি ও নাজমুল প্রধানের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় অর্ধশতাধিক ককটেল বিস্ফোরণ, ৪০ বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রবিবার রাত ৯টার দিকে মন্টু দেওয়ান ও তার পক্ষের নান্নু হাজী, দ্বীন ইসলাম ও ইউসুফ আলীর নেতৃত্বে প্রতিপক্ষ জিন্নত মিজি ও নাজমুল প্রধান গ্রুপের লোকজনের বাড়িতে হামলা ও লুটপাট চালানো হয়। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তারিকুজ্জামান জানান, দুইপক্ষের সংঘর্ষের খবর পাওয়ার পরপরই রাতেই ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। কোনো পক্ষ থেকে গতকাল বিকাল পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। তবে এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। গতকাল ভোরে উপজেলার তৈলটুপি গ্রামে এ সংঘর্ষ বাধে।আহতরা হলেন ওই গ্রামের মতিয়ার রহমান, ইসলাম উদ্দিন, ডিটু, দেলোয়ার হোসেন, হৃদয়, শরিফুল ইসলাম, আলমগীর হোসেন, ইয়াকুব হোসেন মেম্বার, খবির উদ্দিন, আহার আলী, ফজলুর রহমান, মজিদ, মোক্তার আলী, শাহিন, মোয়াজ্জেম হোসেন ও সোহেল। এর মধ্যে গুরুতর আহত শরিফুল ইসলাম, মতিয়ার রহমান, দেলোয়ার হোসেন ও হৃদয় আহম্মেদকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।
স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ওই গ্রামে ১ নম্বর ভায়না ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইয়াকুব হোসেন মণ্ডল ও আওয়ামী লীগ নেতা আলাল হোসেনের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। ইয়াকুব হোসেন মারা যাওয়ার পর তার ছেলে রিপন এবং ওই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা তুষার গ্রুপটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
স্থানীয় সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমির আগমনকে কেন্দ্র করে গত ১৯ নভেম্বর মঞ্চ তৈরি এবং কম্বল বিতরণের তালিকা তৈরিকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে বিরোধ বাধে। এরই জের ধরে গতকাল ভোরে দুই পক্ষ দা, ঢাল, সড়কিসহ দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
আলাল হোসেন দাবি করেন, ভোরে তার লোকজন গ্রামের মাঠে পানের বরজে গেলে প্রতিপক্ষ বাধা দেয় ও মারধর করে। এ সময় তাদের অন্যরা উদ্ধার করতে গেলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয়। তিনি অভিযোগ করেন, বর্তমান চেয়ারম্যান রাতে পাশর্^বর্তী কুষ্টিয়া জেলার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার বিভিন্ন এলাকা থেকে লোক এনে অতর্কিত তাদের ওপর হামলা করে। এ ঘটনায় আহতরা সবাই তার পক্ষের লোক। ঘটনার পর তার সমর্থকদের বাড়িঘর ভাঙচুর, ফসলের খেত নষ্ট ও লুটপাটের অভিযোগও করেন তিনি।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা বলেন, ঘটনার দিন প্রতিপক্ষ তার সমর্থকদের ওপর হামলা করে। এতে সংঘর্ষ বাধে।
হরিণাকুণ্ডু থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আক্তারুজ্জামান লিটন জানান, পুলিশ খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।