বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে গণপরিবহন শূন্য ছিল রাজধানী। নগরজুড়ে যেন ছিল হরতালের আমেজ। বিভিন্ন রুটের যাত্রীবাহী বাসগুলো পার্কিং করে রাখা ছিল সড়কের পাশে। অন্যদিকে যানবাহন না পেয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। অফিস ও বিভিন্ন কাজে বের হওয়া মানুষকে মোড়ে মোড়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। কেউ কেউ বিকল্প উপায়ে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে রিকশায়, সিএনজিতে গন্তব্যের দিকে ছুটছেন। গতকাল রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। উত্তরা, আবদুল্লাহপুর, বিমানবন্দর থেকে সদরঘাট বা বাড্ডা হয়ে সায়েদাবাদমুখী কোনো বাস চোখে পড়েনি। সদরঘাট, নিউমার্কেট, গাবতলী, যাত্রাবাড়ী, মিরপুরগামী কোনো বাস চলাচল করতে দেখা যায়নি।
নারায়ণগঞ্জ থেকে গোলাপবাগ হয়ে আবদুল্লাহপুরগামী অনাবিল, পোস্তগোলা থেকে গোলাপবাগ দিয়ে দিয়াবাড়ীগামী রাইদা পরিবহন, কিংবা যাত্রাবাড়ী থেকে গোলাপবাগ হয়ে টঙ্গীগামী তুরাগ পরিবহন ও বলাকা পরিবহনসহ সব বাস অঘোষিতভাবে বন্ধ ছিল। আবার সদরঘাট থেকে আবদুল্লাহপুরগামী ভিক্টর পরিবহন ও কেরানীগঞ্জ থেকে আবদুল্লাহপুরগামী আকাশ পরিবহনসহ সব গাড়ি বন্ধ ছিল। মোহাম্মদপুর, আসাদগেট, শ্যামলী ও কল্যাণপুর এলাকায় ঘুরেও কোনো গণপরিবহন চোখে পড়েনি। এই সুযোগে সড়কে দাপিয়ে বেড়িয়েছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল। অন্য দিনের তুলনায় বেশি ভাড়াও আদায় করেন তারা। দুপুরে বনানী সেতু ভবনের সামনে মহাখালী ফ্লাইওভারে ওঠার জায়গায়, মহাখালী রেলগেটে এবং মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার থেকে গোলাপবাগ নামার দুটি রাস্তায় ব্যারিকেড দেখা গেছে। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মোড়ে মোড়ে লাঠি হাতে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। এতে রাস্তায় বের হওয়া সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। উত্তরা থেকে বাংলামোটরগামী যাত্রী সারওয়ার জানান, তিনি বাস না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েন। পরে উবারের প্রাইভেট কার নিয়ে বাংলামোটর আসেন। রাস্তা ছিল ফাঁকা, ফলে অল্প সময়ের মধ্যে গন্তব্যে চলে আসি। একদিকে আতঙ্ক, অন্যদিকে ভাড়া বেশি। ফেরার সময় কী হবে জানি না। সকালে শ্যামলী থেকে ধানমন্ডির অফিসে এসেছেন বেসরকারি অফিসে কর্মরত এক যুবক। তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও কোনো বাস পাইনি। পরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় জনপ্রতি ৩০ টাকা ভাড়া দিয়ে আসাদগেট পর্যন্ত এসেছি। শুক্রাবাদে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে কথা হয় হেঁটে আসা আরেক যুবকের। তিনি দাবি করেন, শ্যামলী থেকে এক অটোরিকশা ৫০০ টাকা ভাড়া চেয়েছে। তার সঙ্গে হেঁটে আসা আরেকজন জানান, তিনি যাবেন আজিমপুর। কল্যাণপুর থেকে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলে তার কাছে ৮০০ টাকা ভাড়া চেয়েছে। উপায় না পেয়ে হেঁটেই রওনা দিয়েছেন। গণপরিবহন না থাকায় জুরাইন থেকে রাজি নামে এক ব্যক্তি হেঁটেই পল্টনে আসেন। সকালে অফিসগামী যাত্রীরা পড়েন ভোগান্তিতে। বাহন হিসেবে তাদের ভরসা ছিল রাইড শেয়ার, রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা। এই সুযোগে এসব পরিবহন চালক কয়েক গুণ ভাড়া হাঁকিয়েছেন। ঘোষণা ছাড়াই কেন বাস বন্ধ করা হয়েছে জানতে চাইলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আজমল উদ্দিন আহমেদ সবুর গণমাধ্যমকে জানান, মালিক সমিতি বাস চলাচল স্বাভাবিক রাখার নির্দেশনা দিয়েছে। মালিকরা হয়তো ভয়ের কারণে বাস চালাতে চাইছেন না। সরকারের পক্ষ থেকেও কোনো বাধা নেই। তবে পুলিশ যদি কোথাও বাধা দিয়ে থাকে তা বাসের নিরাপত্তার স্বার্থেই দিচ্ছে। বিআরটিসি সূত্র জানিয়েছে, যাত্রীসেবায় ৪০০টির বেশি বাস রাজধানীতে চলাচল করে। মোহাম্মদপুর-উত্তরা, গুলিস্তান-নারায়ণগঞ্জ, মতিঝিল-কুড়িল, ঘাটারচর-কদমতলী এবং ঘাটারচর-কাঁচপুরসহ বিভিন্ন রুটে এ বাস চলাচল করে। তবে বিএনপির গণসমাবেশের দিন সড়কে বিআরটিসির কোনো বাসই চলতে দেখা যায়নি। সাধারণ যাত্রী, অফিসগামী ও দিনমজুর শ্রেণির মানুষ রাস্তার দুই পাশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোনো বাস পাননি। যাত্রীরা বলেছেন, সরকারি বিআরটিসির বাস বন্ধ করে দুর্ভোগ আরও বাড়ানো হয়েছে। বিআরটিসি থেকে সমাবেশের আগে জানানো হয়েছিল, রাজনৈতিক সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিআরটিসির বাস বন্ধ থাকবে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিসির ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের তরফ থেকে বাস বন্ধের কোনো ঘোষণা ছিল না। কিন্তু কেন বন্ধ আছে, আমি জেনে জানাতে পারব। এদিকে বন্ধ ছিল দূরপাল্লার বাসও। ঢাকা থেকে কোনো বাস ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি, আবার ঢাকায়ও প্রবেশ করতে দেখা যায়নি। গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে দূরপাল্লার বাসগুলো সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। বিকালে সমাবেশ শেষ হওয়ার পর রাজধানীতে সীমিত পরিসরে বাস চলতে শুরু করে। এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান বলেন, ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে গণপরিবহন চলাচলে কোনো বিধিনিষেধ ছিল না। যেগুলো চলাচল করেছে, সেগুলোকে আমরা বাধা দিইনি।