দীর্ঘ এক যুগের সাধনার ফল পেল কাতার। সফলভাবে আয়োজন করল বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর। ২০ নভেম্বর থেকে ১৮ ডিসেম্বর। প্রায় একটা মাস পুরো ফুটবল দুনিয়ার আকর্ষণের কেন্দ্র ছিল কাতারের রাজধানী দোহা। ফাইনালের মাধ্যমে ভাঙল বিশ্বফুটবলের মিলনমেলা। ৬৪টি বিশ্বকাপের ম্যাচ শেষ হওয়ার পর সবাই মুগ্ধ। ছোট্ট একটা দেশ বিশ্বকাপের মতো বড় ইভেন্ট কীভাবে আয়োজন করল! বিস্ময়ের যেন শেষ নেই। শুধু বিশ্বকাপের জন্যই কাতার তৈরি করে আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো লাইন। তিনটি লাইনের ৩৬টি স্টেশন। তৈরি করা হয় ট্রাম। ব্যবস্থা করা হয় বিশেষ শাটল সার্ভিস। সবকিছুই বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে। ফিফার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রায় ২০ লাখ মানুষ এসেছে কাতারে। ফ্যান জোনে তারা সমবেত হয়েছে বিভিন্ন ম্যাচকে কেন্দ্র করে। কিন্তু কাতারের স্থানীয়রা অবাক হয়ে গেছে কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায়। ওরা ভেবেছিল, ছোট্ট এই দেশে এত ফুটবল সমর্থকদের জায়গা হবে কোথায়! কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হলো, বিশ্বকাপের ভিড়টা ছিল কেবল নির্দিষ্ট কিছু স্থানে। মেট্রোতে, বাসে, কোরনিশ এলাকায়, পার্কে এবং ফ্যান জোনে। সুন্দর এক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিশ্বকাপটা শেষ করল কাতার। কাতার যেমন বিশ্বকাপ আয়োজনে চমকে দিয়েছে তেমনি এবারের বিশ্বকাপের দলগুলোও চমক উপহার দিয়েছে। গ্রুপপর্ব খেলেই বিদায় নিয়েছে জার্মানি, বেলজিয়াম, উরুগুয়ে। নকআউটের শুরুতেই বিদায় নিয়েছে স্পেন। বড় বড় দলগুলোকে পাত্তাই দেয়নি ছোটরা। তিউনিসিয়া হারিয়েছে বিশ্বকাপের রানার্সআপ ফ্রান্সকে। ব্রাজিলকে হারিয়েছে ক্যামেরুন। মরক্কো হারিয়েছে বেলজিয়াম, স্পেন এবং পর্তুগালকে। পুরো বিশ্বকাপটা জমজমাট করে তুলেছিল আফ্রিকা এশিয়ার দলগুলো। জার্মানিকে হারানোর পর স্পেনকেও হারায় জাপান। অবিশ্বাস্য সব ঘটনার দেখা মিলেছে কাতার বিশ্বকাপে। দীর্ঘ এক যুগ ধরে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিয়েছে কাতার। তৈরি করেছে দৃষ্টিনন্দন স্টেডিয়াম। পথ ঘাট নতুন করে গড়ে তুলেছে। পুরো আধুনিক এক সিটিতে পরিণত হয়েছে দোহা। লুসাইলের উঁচু উঁচু বিল্ডিংগুলো বিশ্বের সেরা সেরা শহরের প্রমাণ দিচ্ছে। কিন্তু একটা বিশ্বকাপ আয়োজন করেই কী শেষ হয়ে যাবে সব কিছু! দোহার মেট্রো পড়ে থাকবে শূন্য হয়ে! তা নয়। কাতার ২০২৩ সালে আয়োজন করতে যাচ্ছে এশিয়ার ফুটবলের সেরা আসর এশিয়ান কাপ। ২০৩০ সালে এই দেশেই অনুষ্ঠিত হবে এশিয়ান গেমস। এখানেই থামবে না তারা। অলিম্পিক গেমস আয়োজনের চেষ্টায় আছে দেশটি। কাতারের সুপ্রিম কমিটি ফর ডেলিভারি অ্যান্ড লিগ্যাসির সেক্রেটারি হাসান আল থাওয়াদি বলেছেন, ‘বিশ্বকাপ আয়োজন করে কাতার ইতিহাস গড়েছে। আমরা আয়োজন করব এশিয়ান কাপ এবং এশিয়ান গেমস। এরপর আমাদের লক্ষ্য অলিম্পিক আয়োজন করা।’ কাতারে আছে দৃষ্টিনন্দন উন্নতমানের স্টেডিয়াম। স্পোর্টস ফ্যাসিলিটির অভাব নেই। এখানে অলিম্পিকের সব ইভেন্ট আয়োজন করার ব্যবস্থাই আছে। এডুকেশন সিটিতে আছে স্পোর্টস কমপ্লেক্স। অলিম্পিকের মতো আয়োজন কাতারও করতেই পারে। তবে এজন্য হয়তো অপেক্ষা করতে হবে কাতারকে। গত বছর এশিয়ার মাটিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে অলিম্পিক (টোকিওতে)। ২০২৪ সালে প্যারিসে, ২০২৮ সালে লস অ্যাঞ্জেলসে এবং ২০৩২ সালে ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত হবে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক। ২০৩৬ সালের অলিম্পিক আয়োজনের জন্য চেষ্টা করবে কাতার। সম্ভব হলে, বিশ্বকাপের মতোই সফল এক আয়োজন করতে পারে দেশটি।