শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় শেখ হাসিনা

মনোনয়ন পেতে হলে এলাকায় যেতে হবে

রফিকুল ইসলাম রনি

দলীয় সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের প্রতি যাদের ফিলিংস নেই তাদের সংসদে এমপি হয়ে আসার দরকার নেই। এমপি হওয়া মানেই সংসদে এসে সুযোগ-সুবিধা নেওয়া নয়। এমপিদের দেশের প্রতি ফিলিংস থাকতে হবে। মানুষের সার্বিক কল্যাণে কাজ করতে হবে। দলের মনোনয়ন পেতে হলে এলাকায় যেতে হবে।

গতকাল সংসদ ভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় তিনি এ কথা বলেন। গত রাত ৮টায় সংসদ ভবনের লেভেল ৯-এ সরকারি দলের সভাকক্ষে সংসদ নেতা, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। একাদশ জাতীয় সংসদে এটি ক্ষমতাসীন দলের ষষ্ঠ সভা। এ সভা রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত চলে। এতে সংসদীয় দলের সাধারণ সম্পাদক এবং জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ বেশির ভাগ সদস্যই উপস্থিত ছিলেন। সভায় বেগম মতিয়া চৌধুরীকে দলের সংসদ উপনেতা নির্বাচিত করা হয়। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সংসদ সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এমন তথ্য জানিয়েছেন। সভার শুরুতে বক্তব্য দেন সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, মোতাহার হোসেন, সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, বর্তমান হুইপ আতিউর রহমান আতিক, সংসদ সদস্য সাদেক খান, অধ্যাপক মেরিনা জাহান কবিতা, খোদেজা নাসরিন, তাহজিব আলম সিদ্দিকী, হোসনে আরা, উম্মে ফাতেমা নাজমা, জাকিয়া পারভীন মণি, আবিদা আনজুম মিতা প্রমুখ। সভাপতির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দলের অনেক সংসদ সদস্য বক্তব্য দিয়েছেন। আমি সবার কথা শুনেছি। আপনারা এলাকার কথা বললেন, গ্রুপিংয়ের কথা বললেন। কেউ কেউ জাতীয় রাজনীতি নিয়েও কথা বললেন। এলাকার জন্য নতুন নতুন বরাদ্দ দাবি করলেন। কিন্তু একজনও বিগত ১৪ বছর যে উন্নয়ন করেছি, সে কথা বলেননি। বিএনপি-জামায়াতসহ নতুন নতুন গজিয়ে ওঠা সংগঠন যে দেশ-বিদেশে সরকারের ডিজিটাল সুবিধা নিয়ে অপপ্রচার করছে, সেগুলোর কোনো জবাব দিতে শুনলাম না। আগুনসন্ত্রাস নিয়ে কেউ কথা বললেন না। আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, এ বছর নতুন কোনো প্রকল্প হাতে নিতে পারব না। গত ১৪ বছর যে উন্নয়ন-অর্জন করেছি, আগামীতে ক্ষমতায় আসার জন্য যথেষ্ট। এ উন্নয়নগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। মানুষের দ্বারে দ্বারে উন্নয়ন প্রচার করতে হবে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিটি সংসদীয় আসনে ছয় মাস পরপর জরিপ করি। একেকটা সংসদ সদস্যের পেছনে ৭০-৮০ হাজার টাকা খরচ হয়। কে এলাকায় যান, কে যান না সব তথ্য আমার কাছে আছে। দলীয় মনোনয়ন পেতে হলে এলাকায় যেতে হবে। আমার দলের দুঃসময়ের কর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে। সংসদ সদস্য হওয়া মানেই সংসদে আসা-যাওয়া, বরাদ্দ পাওয়া, এলাকায় মাইম্যান তৈরি, আধিপত্য বিস্তার করা চলবে না। সংসদ সদস্যদের গ্লোবাল রাজনীতি বুঝতে হবে। বৈশি^ক মহামারি মোকাবিলা করলাম, কীভাবে উত্তরণ করলাম, সারা বিশ্বে কী অবস্থা সেগুলো জানতে হবে। বর্তমানে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে দ্রব্যমূল্য যে বেড়ে যাচ্ছে, সেগুলো মানুষকে জানাতে হবে। বিএনপি-জামায়াত মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে, দু-একজন এমপির নামেও অপবাদ দিচ্ছে। এগুলো শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে হবে। সত্যটা তুলে ধরতে হবে। ২০১৩-২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানো এবং সরকার পতনের নামে বিএনপি-জামায়াত কী কী করেছে, সেগুলো তুলে ধরতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি-জামায়াতের বিভিন্ন কর্মসূচির বিরুদ্ধে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা সক্রিয় থাকায় ধন্যবাদ জানান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদ জানাই। তারা সক্রিয় ছিল বলেই বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। সূত্র জানান, সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ দুর্নীতি, টাকা পাচার নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, সামনে নির্বাচন। এ নির্বাচন সামনে রেখে দুর্নীতিবাজ, অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এতে সরকারের ইমেজ ফিরবে। সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি খোদেজা নাসরিন জাতীয় রাজনীতি নিয়ে কথা বলেন। তাঁকে প্রধানমন্ত্রী থামিয়ে দিয়ে বলেন, তুমি বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার হয়েছিলে। মুখ, হাত-পা ঝলসে দিয়েছিল। তোমাকে সে কারণে এমপি বানিয়েছি। তুমি মানুষের কাছে একটা কথাই বলবে- কী কারণে, কাদের কারণে, তোমার মুখ ঝলসে দেওয়া হয়েছিল। হাত-পা পুড়িয়ে দিয়েছিল। এগুলো জনগণকে বলতে হবে। বোঝাতে হবে। নারী সংসদ সদস্য জাকিয়া পারভীন মণি ইউপি চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে ভিজিডিসহ বিভিন্ন কাজে দুর্নীতি, অনিয়মের অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, অনেক চেয়ারম্যান আছেন, যারা টাকা ছাড়া ভিজিডি কার্ড দেন না। আবার কেউ কেউ টাকা নিয়েও কার্ড দেন না। ফলে সরকারের বদনাম হয়। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ঘুষ দেওয়া ও ঘুষ নেওয়া সমান অপরাধ। দুজনই সমান দোষী। যারাই এসব কাজে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে সমান ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

 সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, দেশে এখন নারী ভোটার বেশি। নারীদের ক্ষমতায়ন করা হয়েছে। দলের নেতা-কর্মী যারা আছে, নারী সংগঠনকে একটু বেশি সহযোগিতা করলে ভালো হয়। কারণ নারীরা মানুষের ঘরে ঘরে যেতে পারে। ভোটার তৈরিতে সহযোগিতা করতে পারে। কিন্তু আশানুরূপভাবে দলের নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়া যায় না।

সর্বশেষ খবর