শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

হার্ডিঞ্জ সেতুর কাছে রেলের জমিতে যুবলীগ নেতার অবৈধ রিসোর্ট

পাবনা প্রতিনিধি

হার্ডিঞ্জ সেতুর কাছে রেলের জমিতে যুবলীগ নেতার অবৈধ রিসোর্ট

ঐতিহ্যবাহী হার্ডিঞ্জ সেতুর কাছে রেলওয়ের জমি দখল করে রিসোর্ট তৈরি করছেন পাকশী ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা - বাংলাদেশ প্রতিদিন

পাকশীতে ঐতিহ্যবাহী হার্ডিঞ্জ সেতুর কাছে রেলওয়ের জমি দখল করে রিসোর্ট তৈরি করছেন পাকশী ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সহসভাপতি মোক্তার হোসেন মুক্তি। যেখানে রিসোর্ট (পিকনিক স্পট ও হোটেল) বানানো হচ্ছে সেই এলাকা ‘কি পারফরম্যান ইন্ডিকেটর’ কেপিআই এলাকা, মানে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এলাকা।

কেপিআই এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে নিয়ন্ত্রিত প্রবেশাধিকার ও সার্বক্ষণিক প্রহরার ব্যবস্থা থাকে। এ রকম এলাকায় কোনো অবৈধ স্থাপনা যাতে নির্মাণ না হয় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সজাগ দৃষ্টি রাখে এবং স্থাপনা নির্মাণ হলে দ্রুত উচ্ছেদসহ আইনগত ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু হার্ডিঞ্জ সেতু এলাকার পিকনিক স্পটের বিষয়ে কড়া সতর্কতা অবলম্বনের কোনো আলামত নেই।

সম্প্রতি হার্ডিঞ্জ সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, লালন শাহ সেতু ও হার্ডিঞ্জ সেতুর মাঝে অবস্থিত সড়ক বিভাগের পরিদর্শন বাংলোর পশ্চিম পাশের ফটকের সামনে কয়েকজন শ্রমিক পাকা সীমানা প্রাচীর তুলছে। ঝুলানো সাইনবোর্ডে লেখা ‘হার্ডিঞ্জ সেতু পিকনিক স্পট অ্যান্ড লালন শাহ কফি শপ।’ বিশাল এলাকা ঘিওে তৈরি হচ্ছে মঞ্চ, বসার ছাউনি, সিমেন্টের চেয়ার। নদী শাসনে ব্যবহৃত রেলের পাথর তুলে নির্মাণ কাজে ব্যবহার করছেন শ্রমিকরা। নির্মাণাধীন এসব স্থাপনার আড়ালে চলে গেছে সড়ক বিভাগের পরিদর্শন বাংলোর মূল ফটকও।

স্থানীয়রা জানান, কয়েক বছর আগে হার্ডিঞ্জ সেতুর নিচে টং ঘরের মতো খাবারের দোকান ছিল মুক্তির। ব্যবসা জমে ওঠায় কিছুদিন পর পরিসর বাড়িয়ে আধাপাকা রেস্টুরেন্ট গড়া হয়। মুক্তি এখন পুরো এলাকা ঘিরে রিসোর্ট করছেন।

শ্রমিক ও স্থানীয়দের সঙ্গে রিসোর্ট নিয়ে এ সংবাদদাতা কথা বলার কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে হাজির হন মোক্তার হোসেন মুক্তি। নিজেকে রেলওয়ের ঠিকাদার পরিচয় দিয়ে তিনি বলেন, জনস্বার্থেই তিনি রিসোর্ট করছেন।

তিনি বলেন, ১৯৮৪ সালে তার বাবা রেলের কিছু জমি কৃষি কাজের জন্য লিজ নেন। প্রতিদিন হার্ডিঞ্জ সেতু, লালন শাহ সেতু ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প দেখতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটক আসেন। পিকনিক মৌসুমে বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার মানুষ আসেন এখানে। কিন্তু এখানে তাদের বসে সময় কাটানোর ন্যূনতম ব্যবস্থাও নেই। টয়লেট, হাতমুখ ধোয়ার ব্যবস্থা না থাকায় তাদের খুব সমস্যা হয়। তাদের কথা চিন্তা করেই তিনি এই হোটেল ও পিকনিক স্পট নির্মাণ করছেন।

নির্মাণ কাজের অনুমতি আছে? জাবাবে মুক্তি বলেন, অনুমতি এখনো নেওয়া হয়নি। শিগগিরই আবেদন করব।

 কেপিআই এলাকা হার্ডিঞ্জ সেতু ও লালন শাহ সেতুর বিশেষ নিরাপত্তার দায়িত্ব পাকশী পুলিশ ফাঁড়ির। নির্মাণাধীন অবৈধ পিকনিক স্পট থেকে ফাঁড়ির দূরত্ব ৫০ গজেরও কম। তবুও ‘কাজ’ থামে না। পশ্চিমাঞ্চলীয় রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা নুরুজ্জামান বলেন, খোঁজ নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রেলের কোনো কর্মকর্তার গাফিলতি আছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হবে। ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অরবিন্দ সরকার বলেন, ওটা রেলের জায়গা। তারা আমাদের না জানালে স্বপ্রণোদিত হয়ে পদক্ষেপ নিতে পারি না। তবে নিরাপত্তা নির্দেশনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো স্থাপনা হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর