রবিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা
ক্যাবের নাগরিক সভা

বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে ১৩ সংস্কার প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘ইনডেমনিটি একটি অসভ্য আইন। বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে ইনডেমনিটি থাকতে পারে না। অপরাধ করলে বিচার করা যাবে না, এটা কোনো সভ্য সমাজে চলতে পারে না।’ গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) আয়োজিত ‘জ্বালানি সংকট ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন’ শীর্ষক নাগরিক সভায় এমন বক্তব্য উঠে এসেছে। অনুষ্ঠানে ক্যাবের পক্ষ থেকে ১৩ দফা সংস্কার প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।

ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। প্রতিষ্ঠানটির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক মিজানুর রহমান রাজুর সঞ্চালনায় এতে সমাপনী বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া। অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি খাতের উন্নয়নে প্রতিযোগিতাবিহীন যে কোনো ধরনের বিনিয়োগ আইন দ্বারা নিষিদ্ধ করাসহ ১৩ দফা দাবি তুলে ধরে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। এসব দফার মধ্যে রয়েছে- সরকার ব্যক্তি খাতের সঙ্গে যৌথ মালিকানায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িত হবে না এবং সরকারি মালিকানাধীন কোনো কোম্পানির শেয়ার ব্যক্তি খাতে হস্তান্তর করবে না, আইন দ্বারা তা নিশ্চিত হতে হবে। বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানি খাতভুক্ত সরকারি ও যৌথ মালিকানাধীন সব কোম্পানির পরিচালনা বোর্ড থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উভয় বিভাগের আমলাদের প্রত্যাহার করতে হবে। মুনাফা ব্যতীত কস্ট বেসিসে ৫০ শতাংশের অধিক বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদন সরকারি মালিকানায় হতে হবে। কস্ট প্লাস নয়, সরকার শুধু কস্ট বেসিসে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সেবা দেবে। গ্যাস উন্নয়ন তহবিল, বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিল, জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিলের অর্থ যথাক্রমে গ্যাস অনুসন্ধান, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও জ্বালানি আমদানিতে ব্যয় ভোক্তার ইকুইটি বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হতে হবে। প্রাথমিক জ্বালানি মিশ্রণে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনায় কয়লা ও তেলের অনুপাত কমাতে হবে। নিজস্ব গ্যাস অনুসন্ধান ও মজুদ বৃদ্ধি এবং নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন দ্বারা জ্বালানি আমদানি নিয়ন্ত্রিত হতে হবে। জলবায়ু তহবিলসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য উৎস থেকে উক্ত ক্ষয়ক্ষতি বাবদ ঋণ নয়, ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তি/আদায় নিশ্চিত হতে হবে। এবং সে ক্ষতিপূরণ ক্ষতিগ্রস্তদের সক্ষমতা উন্নয়নে বিনিয়োগ আইন দ্বারা নিশ্চিত হতে হবে। বিদ্যুৎ, জীবাশ্ম ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন নীতি, আইন, বিধিবিধান ও পরিকল্পনা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সম্পাদিত প্যারিস চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। ভোক্তার জ্বালানি অধিকার সংরক্ষণ ও জ্বালানি সুবিচারের পরিপন্থী হওয়ায় (ক) দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০ রদ হতে হবে, এবং বাংলাদেশ রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আইন ২০০৩ সংশোধনক্রমে সংযোজিত ধারা ৩৪ক রহিত হতে হবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যহার নির্ধারণের একক এখতিয়ার বিইআরসিকে ফিরিয়ে দিতে হবে। অনুরূপ অভিযোগে অভিযুক্ত অন্য চুক্তিসমূহও যাচাই-বাছাইক্রমে বাতিল হতে হবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উন্নয়নে সম্পাদিত সব চুক্তি বিধিবদ্ধ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পাদনের লক্ষ্যে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় অনুমোদিত মডেল চুক্তি মতে হতে হবে।

অনুষ্ঠানে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, এখন বিদ্যুতের উৎপাদন হচ্ছে কিন্তু ব্যবহার করতে পারছি না। বসে থাকলেও ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে। ইনডেমনিটি আমাদের রাজনীতিতে একটি ঘৃণিত শব্দ। এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে, এলএনজি লবি অনেক ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করছে। লুণ্ঠনবৃত্তি বিগত সরকারের মতো অব্যাহত রয়েছে। আমাদের সংসদে যে ভূমিকা পালন করার কথা দুঃখজনক হলেও সত্য সংসদ সঠিকভাবে ভূমিকা পালন করতে পারছে না। ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ও সিনিয়র সহ-সভাপতি ড. শামসুল আলম বলেন, জ্বালানির অভাবে বিদ্যুতের উৎপাদন কম হচ্ছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. বদরুল ইমাম বলেন, দেশীয় গ্যাসের অনুসন্ধান কার্যক্রম সঠিক গতিতে না হওয়ায় আজকের এই সংকট। অচলাবস্থার কারণেই আজকে চড়া দামে এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে।

অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, সরকার সম্প্রতি বিইআরসির ক্ষমতা খর্ব করেছে। বিইআরসি যখন দাম নির্ধারণ করে সেখানে কিছুটা হলেও স্বচ্ছতা থাকে, জবাবদিহিতা থাকে। এ জন্য বিইআরসির ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, জ্বালানি খাতে যে দুর্নীতি হচ্ছে তা বুঝতে বোদ্ধা হওয়ার প্রয়োজন নেই। অনেক আমলা নিজেদের আত্মীয়স্বজনদের দিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাজ করছে। কমিশনগুলোকে সঠিকভাবে কাজ করতে দিতে হবে। ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি নীতিমালা করার জন্য জাইকাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিশ্বে আর কোনো দেশ এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে বিদেশিদের দায়িত্ব দিয়েছে বলে নজির নেই। বিইআরসিকে বিলুপ্ত করার ষড়যন্ত্র করছে। বাসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, আমরা একটি দুষ্টচক্রে আটকে গেছি। একজন দুর্নীতি করবে আর দাম বাড়বে আমরা এমন একটি প্রক্রিয়ায় আটকে গেছি। সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আমরা বিশেষজ্ঞ এনে কেন গ্যাস তুলতে পারছি না। জ্বালানি মন্ত্রণালয় বহুজাতিক কোম্পানির পিআরও হিসেবে কাজ করে। তাদের আর কোনো ভূমিকা চোখে পড়ে না।

সর্বশেষ খবর