বুধবার, ১৭ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভোটের সময় নিয়ন্ত্রণ থাকবে আশ্বাস সিইসির

বাসাইল পৌর দেখে সংসদ ভোটে যাবেন কাদের সিদ্দিকী

নিজস্ব প্রতিবেদক

টাঙ্গাইলের বাসাইল পৌরসভার ভোট সুষ্ঠু হলেই জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে একটি প্রতিনিধিদলের বৈঠক শেষে দলটির সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সর্বতো প্রচেষ্টার আশ্বাস দিয়ে সিইসি জানান, সংসদের ভোটের সময় ইসির ক্ষমতাবলে সরকারের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগের চেষ্টা করা হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে দলগুলোসহ সবার সহযোগিতা চান তিনি। এ ছাড়া নির্বাচনে প্রশাসন-পুলিশের নিরপেক্ষ ভূমিকা চান সিইসি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ২৫ মে, ১২ জুন ও ২১ জুন পাঁচ সিটির ভোট রয়েছে। এর মধ্যে ২১ জুন টাঙ্গাইলের বাসাইল পৌরসভা, বগুড়ার তালোড়া পৌরসভা ও নারায়ণগঞ্জের গোলাপদী পৌরসভার ভোট হবে। বাসাইল ভোট নিয়ে গতকাল বিকালে নির্বাচন ভবনে ইসির সঙ্গে বৈঠক করেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি। কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘আগেরবারের চেয়ে এবার অনেক ভালো লেগেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা পুরো নির্বাচন কমিশনের আশ্বাসে আমি আশ্বস্ত হয়েছি। তারা বলেছেন তাদের সাধ্যমতো সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ উৎসবমুখর পরিবেশে বাসাইল পৌরসভা নির্বাচন উপহার দেবেন। এ নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর হলে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।’

কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের বিষয়ে কাদের সিদ্দিকী জানান, এ নির্বাচন কমিশন প্রথম প্রথম অনেক এলোমেলো কথাবার্তা বলেছে। এখন আমার কাছে মনে হচ্ছে, বেশ কিছুদিন যাবৎ তারা বুঝতে পেরেছেন নির্বাচন কমিশন কী এবং তাদের অনেক এলোমেলো কথা অনেক দিন থেকেই কমে গেছে। তিনি জানান, নির্বাচন হওয়া উচিত অবাধ, নিরপেক্ষ। কোন দল অংশগ্রহণ করল, কটি দল অংশগ্রহণ করল এটার চেয়ে কতগুলো ভোটার তার ইচ্ছামতো ভোট দিতে পারল, এটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। এ কথাতে ইসি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেই কথার মাধ্যমে ক্ষয়িষ্ণু নির্বাচন পদ্ধতি প্রাণ ফিরে পাবে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এক প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী জানান, নির্বাচনের সময় দলীয় সরকার বলে কিছু থাকবে না। নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশন হলো সরকার, সরকার কিছু নয়। সরকার হলো তখন আজ্ঞাবহ। বর্তমান প্রেক্ষাপটে যা অতটা দেখা যায় না। আমরা প্রত্যাশা করব ধীরে ধীরে পুব দিক থেকে সূর্য উদিত হবে, পশ্চিমে অস্ত যাওয়ার আগেই আমরা এ পরিবর্তন লক্ষ করতে পারব। নির্বাচনের সময় কোনো দলীয় সরকার থাকে না। নির্বাচনী সরকার, তার কোনো কাজ নেই। অংশগ্রহণমূলক ভোটের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অসম্ভব বলে কিছু নেই। নির্বাচন কমিশনেরও এগিয়ে আসতে হবে এবং মানুষকেও একটু এগিয়ে আসতে হবে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ সৃষ্টি করতে রাজনৈতিক দলগুলোকেও ভূমিকা রাখতে হবে। বিএনপি এখানে বড় কথা নয়। বিএনপি, আওয়ামী লীগ বা অন্যান্য দল- কোনোটাই বড় কথায় নয়। যদি মানুষের মধ্যে নির্বাচনী মনোভাব সৃষ্টি করা যায়, তাহলে কোনো রাজনৈতিক দল বড় কথা নয়।’

সরকারকে নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগের চেষ্টা করব : পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, কোনো দলের দিকে তাকানো আমাদের দায়িত্ব নয়। নির্বাচনে সরকারকে নিয়ন্ত্রণের জন্য যে আইন রয়েছে তা প্রয়োগ করা হবে। আপনারা (দল) নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক, উৎসবমুখর করে তুলুন। আমাদের যে দায়িত্ব থাকবে, আমাদের দায়িত্ব কোনো দলের দিকে তাকানো নয়, ভোটাররা নির্ভয়ে, উৎসবমুখর পরিবেশে কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছেন কি না, সেই চেষ্টাটাই আমরা মূলত করব। নির্বাচনকালীন ইসির কর্তৃত্ব দেখানোর বিষয়টিও তুলে ধরেন সিইসি। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে কিন্তু নির্বাচনকালীন যে রাজনৈতক সরকার এবং যে আমলাতান্ত্রিক সরকার থাকবে, আমলাতান্ত্রিক সরকার বলতে মিন করছি মন্ত্রিপরিষদ সচিব থেকে সহকারী সচিব পর্যন্ত এবং রাজনৈতিক সরকার বলতে উপমন্ত্রী থেকে ওপর পর্যন্ত, দুটি মিলেই কিন্তু পরিপূর্ণ সরকার। আমরা রাজনৈতিক সরকার ও আমলাতান্ত্রিক সরকারে ওপর আমাদের যে নিয়ন্ত্রণ আইনে আমাদের ওপর প্রদত্ত হয়েছ, সেটি প্রয়োগ করার চেষ্টা করব। সিদ্দিকীর সঙ্গে বৈঠকে সহায়তা ও আশ্বাসের বিষয়টি তুলে ধরে সিইসি বলেন, ‘আমরা আশ্বাস দিয়েছি আমাদের দায়িত্ব সাধ্যানুযায়ী যতটুকু সম্ভব পালন করার চেষ্টা করব। আবার এটাও বলেছি যে হ্যাঁ, নির্বাচন কমিশনের ওপর নির্বাচন আয়োজনের একটা বড় দায়িত্ব আছে, একই সঙ্গে আপনারাও যারা দল আছেন, নেতৃবৃন্দ আছেন, কর্মীরা আছেন; তাদেরও দায়িত্ব আছে সার্বিকভাবে নির্বাচনের জন্য একটা অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে দেওয়া। খুব প্রতিকূল পরিবেশ যদি বিরাজ করে তাহলে আমাদের জন্য অনেকটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়তে পারে।’ কাদের সিদ্দিকীর উদ্ধৃতি দিয়ে সিইসি বলেন, ‘তিনি বলেছেন যদি আসন্ন বাসাইল পৌরসভা নির্বাচনটা সুষ্ঠু হয়, তাহলে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উনারা অংশগ্রহণ করবেন। আমরা বারবার বলেছি যে একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। উনি বলেছেন যে অংশগ্রহণমূলক যদি না হয়, আমাদের করার কিছু থাকবে না।’

নিরপেক্ষ ভূমিকা চান প্রশাসন-পুলিশের : কাজী হাবিবুল আউয়াল জানান, নির্বাচনে সবার সহায়তা করতে হবে। সরকারের সদিচ্ছা অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রাজনৈতিক সরকারের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে কিন্তু অনেকটা। দীর্ঘদিনের যে আমলাতান্ত্রিক সরকার অর্থাৎ ডিসি, এসপি...। আমরা বারবার একটা অভিযোগ শুনেছি যে পুলিশের একটা ভূমিকা থাকে নেতিবাচক। এটা পুলিশের জন্য নয়, স্থানীয়ভাবেই হয়তো পুলিশকে পক্ষাশ্রিত করার চেষ্টা হয়ে থাকে প্রার্থীদের পক্ষ থেকে। পুলিশের হাতে অস্ত্র থাকে, শক্তি থাকে, ইউনিফরম থাকে, সেই দিকটাও আমরা দেখব। আমি পুলিশকে দোষারোপ করছি না। কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, সরকারের সদিচ্ছা এবং সহযোগিতা যদি না থাকে এবং তার যে অঙ্গগুলো পুলিশ, প্রশাসন সহায়তা না করে, তাহলে যে সক্ষমতা আছে তা সীমিত হয়ে পড়বে। বিশেষ করে পুলিশ, আর্মি, বিজিবি ওরা যদি আমাদের নিরপেক্ষভাবে সহায়তা করে, কোনোরকম যদি অন্য কোনো পক্ষ থেকে প্রভাবিত না হয়, তাহলে আমার শক্তিটা অনেক বেড়ে যাবে, সেখানে আমার সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।’

সর্বশেষ খবর