রবিবার, ২৮ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার

সত্যায়নের অপেক্ষায় শেষ ভিসার মেয়াদ

বাংলাদেশ হাইকমিশনে আবেদন ৯৫ হাজার মেয়াদ শেষের দিকে ১০ হাজার ভিসার

জুলকার নাইন

সত্যায়নের অপেক্ষায় শেষ ভিসার মেয়াদ

চেনদানা মেওয়াহ রিসোর্স নামের মালয়েশিয়ার নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে চায় ১ হাজার জন। কোটা অনুমোদনের পর কয়েক ধাপে এই কর্মীদের নেওয়ার জন্য ভিসা সংগ্রহ করে তারা। গত ডিসেম্বরে তারা সত্যায়নের জন্য আবেদন করে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনে। আবেদনের পর পাঁচ মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সেই সত্যায়ন করেনি হাইকমিশন। এখন ভিসার মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২ জুন। ঢাকা থেকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাতেও এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি হাইকমিশন। জনশক্তি রপ্তানিকারকদের মতে, এটা শুধু এই একটা কোম্পানির ক্ষেত্রে নয়, সত্যায়নের অপেক্ষায় হাইকমিশনে আবেদনের স্তূপ জমা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত প্রায় ৯৪ হাজার ৮০০ কর্মী নিয়োগের আবেদন জমা আছে সত্যায়নের জন্য। এর মধ্যে মেয়াদ শেষের দিকে প্রায় ১০ হাজারের মতো ভিসার। সত্যায়নের এই টালবাহানায় দীর্ঘায়িত হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে কর্মী যাওয়ার প্রক্রিয়া। অনেক ক্ষেত্রে আগ্রহ হারাচ্ছে নিয়োগকর্তারা। চেনদানা মেওয়াহ রিসোর্সের আবেদনের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে সত্যায়নের ফাঁদে দীর্ঘ ভোগান্তির তথ্য জানা যায়। মালয়েশিয়ার কর্মী নিয়োগের কেন্দ্রীয় সার্ভার ফরেন ওয়ার্কার সেন্ট্রালাইজড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এফডব্লিউসিএমএস) এর তথ্যানুসারে, গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর সত্যায়নের জন্য আবেদন করে চেনদানা মেওয়াহ রিসোর্স নামের নিয়োগকর্তা। কৃষি খাতে প্রোডাকশন, হার্ভেস্টিং ও পোস্ট হার্ভেস্ট ওয়ার্কার হিসেবে কোটার ১০০ জনের জন্য আবেদন করে নিয়োগকর্তা প্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রে রিক্রুটমেন্ট এজেন্ট হিসেবে আছে আবিদ এয়ার ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুর। জানা যায়, সত্যায়নের আবেদনের পর হাইকমিশনের ধীরগতিকে মেনে নিয়ে অপেক্ষা করে রপ্তানিকারক ও নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। সাধারণত ডিমান্ড নোট ও অন্যান্য কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে হাইকমিশনের সত্যায়ন করে দেওয়ার কথা। কিন্তু দীর্ঘ অপেক্ষার পরও ভিসার মেয়াদ শেষের দিকে চলে আসায় চলতি মাসে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে হাইকমিশনের চিঠিও পাঠানো হয়। চেনদানা মেওয়াহ রিসোর্সের সিইও বাংলাদেশ হাইকমিশনের লেবার মিনিস্টারের কাছে লেখা চিঠিতে উল্লেখ করেন, ইতোমধ্যেই দুই ধাপে ৭৫ জন কর্মী কুয়ালালামপুর এসে পৌঁছে কাজে যোগ দিয়েছে। মে মাসের শেষ নাগাদ ৩৫০ জন ও জুন মাসে আরও ৩৫০ জন কর্মী এসে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। তারা সবাই ক্যামেরন হাইল্যান্ড ও জোহর বাহুতে কাজে যোগ দেবেন। তাদের চাকরি, বাসস্থান, যাতায়াত ও বেতনের জন্য সব দায়দায়িত্ব আমার বলে চিঠিতে উল্লেখ করে ক্লিয়ারেন্স দেওয়ার অনুরোধ জানান প্রতিষ্ঠানের সিইও দাতো সানদানাতাভান। কিন্তু এরপরও সত্যায়ন পাওয়া যায়নি হাইকমিশনের। সূত্র জানায়, সাধারণত সত্যায়নগুলো করে থাকে মিশনের লেবার উইং। তারাই এ জন্য দায়িত্বশীল। কিন্তু লেবার উইং অনুমোদন করে দিলেও হাইকমিশনের অন্য অংশে আটকে যায় অনুমোদন। আগামী ২ জুন এই আবেদনের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে এমন পরিস্থিতির কথা জেনে ঢাকা থেকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ ব্যক্তি যোগাযোগ করে হাইকমিশনে। কাগজপত্র ঠিক থাকলে ভিসার নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে সত্যায়নের আবেদন অনুমোদনের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। কিন্তু গতকাল ২৭ মে পর্যন্ত সত্যায়ন হয়নি এই আবেদনের। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার গোলাম সারোয়ার বলেন, এই কোম্পানির নিজস্ব কোনো জমি নেই। তারা ৯৫০ জন বাংলাদেশি কৃষি শ্রমিক নিয়োগের অনুমোদন নিয়েছে। এই বিপুলসংখ্যক শ্রমিক তারা কোথায় নিয়োগ দেবে সেটা সঠিকভাবে পরীক্ষণ করা প্রয়োজন, যাতে মালয়েশিয়ায় আসার পর তারা বিপদগ্রস্ত না হয়। তবে ওই কোম্পানির শ্রমিকদের পদায়নসংক্রান্ত কাগজপত্র সঠিক থাকলে যাতে দ্রুত ডিমান্ডসমূহ সত্যায়ন করা হয় সে জন্য উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানান হাইকমিশনার। তবে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান আবিদ এয়ার ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরের স্বত্বাধিকারী কে এম মোরারক উল্লাহ শিমুল বলেন, বেশির ভাগ কোম্পানির নিজস্ব জমি নেই, তারা লিজ নিয়ে ব্যবসা করে। হাইকমিশন এটা জানে। তাই হাইকমিশন থেকে লিজের কাগজ চাওয়া হয়েছিল। সেই জমির লিজের সব কাগজপত্র দেওয়া হয়েছে। লিজের কাগজের পর ব্যাংক স্টেটমেন্ট চাওয়া হয়েছে, তাও দেওয়া হয়েছে। এরপর শর্ত দেওয়া হয়েছে, ২৫০ কর্মীকে আগে নিয়ে এসে কাজে যোগ দেওয়ার, তাও করা হয়েছে। কোম্পানির মালিক সব দায়দায়িত্ব নেওয়ার অঙ্গীকারও করেছেন। কিন্তু তারপরও এই ভোগান্তি। এই জনশক্তি রপ্তানিকারকের দাবি, সত্যায়নের নামে এই দীর্ঘ ভোগান্তি ও কিছু লোকের বাণিজ্যের অবসান করা দরকার।

কর্মী পাঠাতে কিছু সমস্যা হতে পারে, সে জন্য মন্ত্রণালয় থেকে শাস্তির ব্যবস্থা আছে। অভিযোগ পেলে শাস্তি দেওয়াও হয়। হাইকমিশন থেকে সত্যায়ন দিতে যেহেতু এত দীর্ঘ সময় লাগছে, তাই মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত করার ব্যবস্থা করতে পারলে কর্মী পাঠানোয় গতি আসত। না হলে এখনকার এই ধারা অব্যাহত থাকলে সংকটে পড়বে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার।

সর্বশেষ খবর