সোমবার, ১৯ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

টাকার পাহাড় ইয়াবায়

কারখানায় ১০ টাকা পিস, মাদক কারবারিদের হাত ঘুরে ২৫০ টাকা

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

দেশে ইয়াবার সিংহভাগ জোগান আসে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের সান স্টেট থেকে। সান স্টেটের ইয়াবা কারখানাগুলোতে প্রতি পিস ১০ টাকা ধরে বিক্রি হলেও দেশে সেবনকারীর হাতে আসা পর্যন্ত ইয়াবার খুচরা দাম সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা। ইয়াবার উৎপাদন, সরবরাহ এবং বাজার পরিস্থিতি নিয়ে তিন বছরের অধিক সময় ধরে করা একটি গবেষণায় এমন তথ্য উঠে আসে। ‘গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল থেকে বাংলাদেশ : বাংলাদেশে মেথামফিটামিন মাদকের উৎস প্রকৃতি ও পাচার রুটের আঞ্চলিক বিশ্লেষণ’ শীর্ষক এ গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয় উৎপাদন ও সরবরাহের কারণে দেশে সহজলভ্য হয়েছে ভয়ংকর মাদক ইয়াবা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের উপপরিচালক হুমায়ন কবির খোন্দকার নিজের গবেষণাপত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় ইয়াবার সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে বাংলাদেশ। দেশে ইয়াবা বিস্তারের নেপথ্যে রয়েছে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন এবং ওই দেশের সেনাবাহিনীর কতিপয় সদস্য। মিয়ানমারে উৎপাদন ও সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দেশে ইয়াবা কম দামে সহজলভ্য হয়েছে। সান স্টেটে প্রতি পিস ইয়াবা ১০ থেকে ১৩ টাকায় বিক্রি হলেও দেশে খুচরা পর্যায়ে তা বিক্রি হয় ১২০ থেকে ২৫০ টাকায়।

জানা যায়, সান স্টেটের ইয়াবা কারখানা থেকে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলো প্রতি পিস ইয়াবা ক্রয় করে ১০ থেকে ১৩ টাকায় (বাংলাদেশি মুদ্রার সমপরিমাণ)। এরপর অবৈধ অস্ত্র পাচারের রুটগুলো ব্যবহার করে ইয়াবার চালান নিয়ে আসা হয় বাংলাদেশ সীমান্তে। এ এলাকায় প্রতি পিস ইয়াবা বিক্রি হয় ২২ থেকে ২৫ টাকা দরে। সীমানা পার হওয়ার পর প্রতি পিস ইয়াবা টেকনাফ এলাকায় বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৩৫ টাকা এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে বিক্রি হয় ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। কক্সবাজার থেকে দুই ভাবে পাচার হয় ইয়াবা। প্রথমে কক্সবাজারের স্পটে বিক্রি হয় প্রতি পিস ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। অন্য পদ্ধতি হচ্ছে কক্সবাজার থেকে ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামে বিক্রেতা নিজ দায়িত্বে পৌঁছে দেয়। এ পদ্ধতিতে প্রতি পিস ইয়াবা বিক্রি হয় ৭০ থেকে ১০০ টাকায়। চট্টগ্রামে প্রতি পিস ইয়াবা বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং ঢাকায় প্রতি পিস ইয়াবা বিক্রি হয় ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য জায়গার মতো চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, জয়পুরহাটে ১২০ থেকে ১৭০ টাকা, দিনাজপুরে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, কুড়িগ্রামে ১২০ থেকে ১৬০ টাকা, পটুয়াখালী ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, সিলেট ১২০ থেকে ১৫০ টাকা দরে খুচরা বিক্রি হয় ইয়াবা। দেশের বিভিন্ন জায়গায় খুচরা বা সেবনকারী পর্যায়ে প্রতিটি ইয়াবা বিক্রি হয় সর্বনিম্ন ১২০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত।

ইয়াবার উৎপাদন, সরবরাহ এবং বাজার পরিস্থিতি নিয়ে করা এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। ওই গবেষণাপত্রে উল্লেখ রয়েছে- ‘বাংলাদেশের ইয়াবার বিস্তার ঘটেছে মিয়ানমার ভিত্তিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোর হাত ধরে। সংগঠনগুলো অর্থ উপার্জনের সহজ মাধ্যম হিসেবে মাদক পাচারকে গ্রহণ করে। সান স্টেটের ইয়াবা কারখানা থেকে বাংলাদেশের গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছতে ইয়াবার মূল্য বেড়ে যায় কয়েক শ গুণ। ইয়াবা উৎপাদন ও সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে ইয়াবা সহজলভ্য হয়েছে। বাংলাদেশে ইয়াবা বিতরণে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী খুঁজতে হয় না। আসক্তরাই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। ফলে বাংলাদেশে অনেকটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইয়াবার সরবরাহ চেইন সৃষ্টি হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর