সোমবার, ১৯ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

নজর মোদি-বাইডেন বৈঠকে

♦ মার্কিন কংগ্রেসের সভায় আমন্ত্রণ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকেও ♦ আঞ্চলিক রাজনীতি গুরুত্ব পেতে পারে ইঙ্গিত জয়শংকরের

গৌতম লাহিড়ী, নয়াদিল্লি

নজর মোদি-বাইডেন বৈঠকে

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমন্ত্রণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমেরিকা সফর ‘ঐতিহাসিক’ হতে চলেছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শংকর। আগামী ২১ থেকে ২৪ জুন মোদির এ রাষ্ট্রীয় সফর হওয়ার কথা রয়েছে। ঐতিহাসিক হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ সংসদে নরেন্দ্র মোদি দ্বিতীয়বার ভাষণ দেবেন ২২ জুন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শংকর বলেন, এর আগে বিশ্বের মাত্র দুজন রাষ্ট্রনেতা এই বিরল সম্মান পেয়েছেন। এরা হলেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলা। এই যৌথ সভার ভাষণকে কেন্দ্র করে ভারত এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশেও প্রবল কৌতূহল তৈরি হয়েছে। হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে দুই দফার বৈঠকে ভারত-আমেরিকা প্রতিরক্ষা সম্পর্ক এবং ‘আঞ্চলিক’ রাজনৈতিক পরিস্থিতি গুরুত্ব পেতে পারে। একবার প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন মধ্যাহ্ন ভোজে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে আমন্ত্রণ করছেন এবং দ্বিতীয়বার হোয়াইট হাউসের দক্ষিণ বাগিচায় রাষ্ট্রীয় নৈশভোজ দেওয়া হবে। এই দুটি ভোজসভা এবং মার্কিন কংগ্রেসের সভায় ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মহম্মদ ইমরান আমন্ত্রিত হয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জল্পনা তৈরি হয়েছে। কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে স্পষ্ট ভাষায় কিছুই বলা হয়নি। বরং একটি সূত্র বলেছে, মূলত ভারত-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও উন্নত করাই প্রধান লক্ষ্য। মার্কিন কংগ্রেসের সভায় সেই ছয়জন সংসদ সদস্যও উপস্থিত থাকবেন, যারা সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের কাছে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশের ‘মানবিক অধিকার’ লঙ্ঘনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ফলে মার্কিন কংগ্রেসে ভাষণে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ আদৌ মোদি উল্লেখ করবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। প্রতিরক্ষা চুক্তির মধ্যে রয়েছে ভারতে যুদ্ধবিমানের ডবল ইঞ্জিন নির্মাণের কারখানা তৈরি। ভারত চায় প্রযুক্তি হস্তান্তর করা হোক। এটা কিসের বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র করবে তা গোপন রয়েছে।

 

দ্বিপক্ষীয় আলোচনার সময় আদৌ বাংলাদেশ সম্পর্কে মার্কিন নয়া ভিসানীতি উল্লেখ হবে কি না এ প্রশ্নে ভারত সরকার স্পষ্ট কোনো জবাব দেয়নি। গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের বিশেষ ব্রিফিংয়ে প্রশ্নের জবাবে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক আলোচনার সময় বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হতেই পারে।’ সম্প্রতি চীন বাংলাদেশ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করায় সাউথ ব্লক সমগ্র পরিস্থিতি নতুনভাবে পর্যালোচনা করছে। মোদির ভাষণে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের প্রভাব বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ সংযোজিত হতে চলেছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

সরাসরি বাংলাদেশ প্রসঙ্গ উল্লেখ না করে মোদি যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ নীতি প্রকারান্তরে সংশোধনের সুপারিশ করতে পারেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান ভারত সফর করেন। তখন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বাংলাদেশের নাম উল্লেখ না করেই বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের তেমন কিছু করা উচিত নয়, যাতে এই উপমহাদেশের ভারসাম্য বিঘিœত হয়। ভারতের গণমাধ্যমে প্রকাশিত এই সংবাদের সত্যতা স্বীকার করা হয়নি। আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে প্রধানমন্ত্রী মোদি স্বয়ং জাতিসংঘের উদ্যানে যোগব্যায়ামে অংশগ্রহণ করবেন। এই প্রথম বিদেশের মাটিতে মোদি যোগব্যায়াম করবেন। জাতিসংঘ এর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করেছে।

মোদির ওয়াশিংটন সফরের সময় প্রতিরক্ষা-সংক্রান্ত সমঝোতা গুরুত্ব পাবে বলে জানা গেছে। এর অংশ হিসেবে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে ‘তৃতীয় রাষ্ট্রে’ প্রতিরক্ষা সামগ্রী উৎপাদনের প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারে। এই তৃতীয় রাষ্ট্রের মধ্যে ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশের নাম যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ এ ধরনের প্রস্তাবে সম্মতি দেবে কি না সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক প্রতিরক্ষা পরিকল্পনার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ভারত মনে করে এ সিদ্ধান্ত ‘সার্বভৌম বাংলাদেশের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত’। একে অভ্যন্তরীণ রাজনীতির শর্ত বলে ধরা সঠিক হবে না। মোদির সফর শুরু হবে ২১ জুন নিউইয়র্কে। আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বয়ং জাতিসংঘের উদ্যানে যোগব্যায়ামে অংশ নেবেন। এই প্রথম বিদেশের মাটিতে মোদি যোগব্যায়াম করবেন। জাতিসংঘ এর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর