সোমবার, ১৯ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

নির্বাচনী বছরে এমন বাজেট হতে পারে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচনী বছরে এমন বাজেট হতে পারে না

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, নির্বাচনী বছরে কোনোভাবেই এমন বাজেট হতে পারে না। এটা অবৈজ্ঞানিক ও অবাস্তবায়নযোগ্য। এটা অবশ্যই সংশোধন করতে হবে। গতকাল রাজধানীর লেকশোর হোটেলে ‘সিপিডি বাজেট ডায়ালগ-২০২৩’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। সংস্থাটির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সেমিনারের সঞ্চালনা করেন। এ সময় বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম, ডিসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার সামির সাত্তার, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ প্রমুখ। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বর্তমান সংকটময় সময়ে চ্যালেঞ্জগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করা না গেলে আগামীতে অর্থনীতিতে সমস্যার সৃষ্টি হবে। বাস্তবতা বিবেচনা করেই সবকিছু চিন্তা করা উচিত। বর্তমানে মূল্যস্ফীতির ব্যাপক চাপ রয়েছে। সেদিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া দরকার। সরকার ব্যাংক থেকে ধার করছে, এতে ব্যক্তিঋণ কমে যাবে। বিনিয়োগ রক্ষণশীল রেখে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির চাপ সহ্য করা কঠিন হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘এবারের বাজেট নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা আছে। আমরা চেষ্টা করছি ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধনের।’ বিদ্যুৎ নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা হচ্ছে উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘একটু সমস্যা হয়েছে তার মানে কি আমাদের কোনো অবদান নেই? আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি।’

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট মূল সামষ্টিক অর্থনৈতিক বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে বলে মনে হচ্ছে। ফলস্বরূপ বাজেটে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে উল্লেখযোগ্য ব্যবধান রয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেট সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমান বাস্তবতা হচ্ছে অত্যধিক মুদ্রাস্ফীতি। চলমান সংকট মোকাবিলায় বাজেট ব্যবস্থায় প্রতিফলন হয়নি। প্রস্তাবিত বাজেট চলমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও সংকট সমাধানে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, ‘বড় বাজেট দিয়ে সরকার খুশি হলেও আমরা আতঙ্কগ্রস্ত। বিশেষ করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত অভিঘাতে আছে। এই খাতে এক ধরনের লুণ্ঠনমুখী ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা বর্তমানে বিদ্যুতের কষ্টে রয়েছি।’ ডিসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার সামির সাত্তার বলেন, ‘রক্ষণশীল বিনিয়োগের বছর চলছে। এই সময়ে শ্রমিকের মজুরির চাহিদা পূরণের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখ টাকা করলে মুদ্রাস্ফীতির বাজারে কিছুটা সাহায্য করবে বলে মনে করি।’ সেমিনারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও নন-প্রফিট এনজিওগুলোকে কোম্পানি আইনের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শহরের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর দিতে পারলেও কীভাবে একটি গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করপোরেট কর দেবে? এটা কেমন শিক্ষাবান্ধব বাজেট হলো?’

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, ‘বাজেট পাসের আগে আয়কর আইন পাস করা হচ্ছে। এটা সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। আইনের সঙ্গে অর্থবিলের সম্পর্ক নেই। কেন এটা করা হচ্ছে, আমার বোধগম্য নয়।’

শ্রমিকনেতা তাসলিমা আখতার বলেন, মূল্যস্ফীতি বর্তমানে ১০ শতাংশের ওপরে। সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ কমানোর কথা বলা হয়েছে। মালিকরা কর ও ব্যবসায় বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেলেও শ্রমিকরা বঞ্চিত। শ্রমিকের স্বার্থে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ না কমিয়ে বাড়ানো দরকার।

সর্বশেষ খবর