সোমবার, ১৯ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা
ভুল চিকিৎসা

নবজাতকের পর মারা গেলেন মা

নিজস্ব প্রতিবেদক

নবজাতকের পর মারা গেলেন মা

রাজধানীর গ্রিন রোডে সেন্ট্রাল হসপিটালে ভুল চিকিৎসা ও কর্তৃপক্ষের প্রতারণায় নবজাতকের মৃত্যুর পর মা মাহবুবা রহমান আঁখিও মারা গেছেন। গতকাল বেলা পৌনে ২টার দিকে ল্যাবএইড হাসাপাতালে তিনি মারা যান। এর আগে, গত ৯ জুন রাত ১২টা ৫০ মিনিটে প্রসব ব্যথা ওঠায় আঁখিকে সেন্ট্রাল হসপিটালে অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে ভর্তি করানো হয়। পরে ১৪ জুন সেন্ট্রাল হসপিটালে ভুল চিকিৎসা ও কর্তৃপক্ষের প্রতারণার অভিযোগ তোলেন তার স্বামী ইয়াকুব আলী সুমন।

তিনি দাবি করেন, হসপিটাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় মারা গেছে তাদের নবজাতক সন্তান। ১৪ জুন রাতে আঁখির স্বজনরা জানান, গত ৯ জুন প্রসব ব্যথা ওঠায় রাত সাড়ে ১২টার দিকে সেন্ট্রাল হসপিটালে ডা. সংযুক্তার অধীনে ভর্তি করা হয় আঁখিকে। তখন ডা. সংযুক্তা হসপিটালে উপস্থিত ছিলেন না, তারপরও হসপিটাল কর্তৃপক্ষ জানায়, তিনি আছেন এবং ওটিতে (অপারেশন থিয়েটার) কাজ করছেন।

ভুক্তভোগীর স্বামী ইয়াকুব আলী বলেন, আমার স্ত্রীকে যখন ওটিতে ঢোকানো হয় এবং নরমাল ডেলিভারির জন্য চেষ্টা শুরু করা হয়, তখনো আমি ডা. সংযুক্তা হাসপাতালে আছেন কি না জানতে চাই। কর্তৃপক্ষ জানান, তিনি আছেন এবং তিনি তার চেষ্টা চালাচ্ছেন। রোগীর কোনো রকম চেকআপ ছাড়াই ডেলিভারির কাজ শুরু করে দেন তারা। পরে জানতে পেরেছি ডা. সংযুক্তা ছিলেন না, তিনি তখন দুবাইতে ছিলেন।

চিকিৎসক না থাকার পরও তার অধীনে রোগী ভর্তি করা হয়। এরপর ডেলিভারির চেষ্টা ও পরবর্তীতে সফল না হওয়ায় সিজার করে বাচ্চা বের করে আনা হয়। সিজারের পরদিন মারা যায় বাচ্চাটি। আর মায়ের অস্ত্রোপচারের পর জ্ঞান ফেরেনি। পরে তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা তখনই বলেছিলেন, এ ধরনের রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশেরও কম।

নিহত আঁখির ভাই শামিম জানান, সেন্ট্রাল হসপিটালে অস্ত্রোপচারের পর জ্ঞান ফেরেনি আঁখির। পরে তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে সাত দিন ধরে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে আজ (গতকাল) মৃত্যুবরণ করে। আঁখির সঙ্গে কী ধরনের অবিচার হয়েছে তা সবাই জানে। ভুল চিকিৎসা করে যারা আমার বোনটাকে মেরে ফেলল তাদের বিচার চাই। ভুল চিকিৎসায় বোনের ছেলেটা তো আগেই মারা গেল। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছুই হতে পারে না।

নিহত আঁখির চাচাতো বোন বলেন, যাদের ভুল চিকিৎসায় ও অবহেলায় আমার বোন ও ভাগ্নের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ফাঁসি চাই। আঁখির পরিবার জানায়, আঁখিকে বাঁচাতে ৪০ ব্যাগের বেশি রক্ত তারা জোগাড় করে দিয়েছেন। কিন্তু তাকে বাঁচানো গেল না।

এর আগে, মৃত্যুঝুঁকিতে পড়ার ঘটনা তদন্তে হাসপাতাল পরিদর্শন করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি প্রতিনিধি দল। এ সময় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত হাসপাতালে সবধরনের অপারেশন বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে গাইনি ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহা চিকিৎসা সেবায় থাকতে পারবেন না বলেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পরিদর্শক দলের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সেন্ট্রাল হসপিটালের আইসিইউ ও জরুরি সেবার মান সন্তোষজনক নয়। এ অবস্থায় পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত হসপিটালটির অপারেশন থিয়েটারের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। একই সঙ্গে ভুক্তভোগীর চিকিৎসক ড. সংযুক্তা সাহা স্বাস্থ্য অধিদফতরের লিখিত অনুমোদন ছাড়া পরবর্তী সময়ে সেন্ট্রাল হসপিটালে কোনো বিশেষজ্ঞ সেবা দিতে পারবেন না।

এদিকে এ ঘটনায় ১৪ জুন ধানমন্ডি থানায় সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে মামলা করেন ইয়াকুব আলী। মামলার আসামিরা হলেন- সেন্ট্রাল হাসপাতালের ডা. মুনা সাহা, ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা, অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার সহকারী মো. জমির, ডা. এহসান, ডা. মিলি ও সেন্ট্রাল হাসপাতালের ম্যানেজার পারভেজসহ আরও অজ্ঞাত ৫-৬ জন। গত বুধবার এজাহার নামীয় দুই আসামি ডা. মুনা সাহা ও ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

পুলিশ বলছে, কুমিল্লার তিতাস উপজেলা থেকে অন্তঃসত্ত্বা মাহবুবা রহমানকে (২৫) ৯ জুন রাজধানীর সেন্ট্রাল হসপিটালে ভর্তি করা হয়। তবে মাহবুবাকে যে চিকিৎসকের অধীনে ভর্তি করা হয়, তিনি তখন দেশের বাইরে ছিলেন। এ বিষয়ে রোগী বা স্বজনদের জানানো হয়নি। অন্য চিকিৎসকেরা তার স্বাভাবিক প্রসব করাতে ব্যর্থ হন। পরে অস্ত্রোপচার করা হয়। গত ১১ জুন নবজাতকের মৃত্যু হয়। আর মাহবুবার অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালে নেওয়া হয়। আর সেখানেই আজ (গতকাল) তার মৃত্যু হয়।

সর্বশেষ খবর