সোমবার, ১৯ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিদেশ যেতে সম্পদ বিবরণী দিতে হবে না

আয়কর বিল পাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

কিছু পরিবর্তন এনে আয়কর বিল-২০২৩ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। সংসদে পাস হওয়া বিলে সরকারি দল ও বিরোধী দলের কয়েকজন সংসদ সদস্যের কয়েকটি সংশোধনী সংসদে গ্রহণ করা হয়। এর আগে গতকাল  স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়।

বিলের আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, যাদের ১০১টি গাড়ি আছে তাদের বিপুল পরিমাণ কর দিতে হবে। আইনে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ স্থায়ী করা হচ্ছে। এতে কালো টাকা আয় করতে মানুষ উৎসাহী হবে। জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, বিদেশি যারা ডোনেশন দেন তারা সেখানে আয়কর দিয়ে চ্যারিটির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন। সেখানে করারোপ করা হলে এনজিওগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশ্য কর আদায় বাড়ানো। করের জাল ফেললে অনেক মাছ ধরা পড়বে। কিন্তু অনেক উপকারী মাছও মারা যাবে। তিনি অভিযোগ করেন, এ আইনের মাধ্যমে এনবিআরকে স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, কোনটা ধর্মীয় আর কোনটা দাতব্য- তা ঠিক করার সামর্থ্য কি এনবিআরের আছে? জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, কর আদায়ের পদ্ধতি ডিজিটাইজড করতে খরচ হবে ১০ হাজার কোটি টাকা। আর এতে দেড় লাখ কোটি টাকা কর আদায় বাড়বে। কিন্তু এটি করা হচ্ছে না। এ টাকাটা ঘুষে চলে যাচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, ঘুষ ছাড়া এনবিআরে কোনো ফাইল চলে না। ডিজিটাইজেশনে বাধা এনবিআর। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বাংলায় সহজবোধ্য করে আইনটি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। কিন্তু কারও ওপর জোর করে চাপিয়ে দিয়ে সেটা করা যাবে না। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে রাজস্ব আদায় ছিল ৫৯ হাজার কোটি টাকা। এখন সেটা ছয় গুণ বেড়েছে। এখানে সরকার খুব খারাপ করেছে তা নয়। আবার খুব ভালো করেছে সেটাও না। সংসদে পাস হওয়া বিলে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বিভিন্ন সুপারিশ আমলে নেওয়া হয়েছে। সংসদীয় কমিটি তাদের প্রতিবেদনে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানত বাধ্যতামূলক ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করে। এর পরিবর্তে কমিটি উল্লিখিত পরিমাণের ব্যাংকে মেয়াদি বা স্থায়ী আমানত থাকা ব্যাংক আমানতকারীদের জন্য রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করেছে। প্রস্তাবিত আয়কর বিলে মোট আয়ের দুই-তৃতীয়াংশ বা ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা, যা কম হোক না কেন বেতনভোগী ব্যক্তিদের করযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। আর সংসদীয় কমিটি বেতনভোগী ব্যক্তির আয়ের এক-তৃতীয়াংশ বা ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা, যেটি কম হোক, করযোগ্য আয় হিসেবে বিবেচনার প্রস্তাব করেছে। সংসদ এসব প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। সংসদে পাস হওয়া বিলে কোম্পানি, ফার্ম, ব্যক্তি সমিতি এবং ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত টার্নওভারের তহবিলগুলোকে নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী জমা দিতে হবে, যা প্রস্তাবিত বিলে ২ কোটি টাকা ছিল। সেভিংস সার্টিফিকেট এবং ডিবেঞ্চারের জন্য ট্যাক্স রেয়াত বিষয়ে পাস হওয়া আইনে তথ্য স্পষ্ট করা হয়েছে। পাস হওয়া বিলে বিদেশ ভ্রমণের সময় সম্পদ বিবরণী বাধ্যতামূলক জমা দেওয়ার বিষয়ে প্রস্তাবিত ধারা বাতিল করা হয়েছে। অ্যাপার্টমেন্টে অপ্রকাশিত আয় দেখানোর জন্য বিশেষ করের পরিমাণ বাড়ানোরও প্রস্তাব করেছে। পাস হওয়া আইনে গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল ও দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকার সঙ্গে আরও নতুন এলাকার নাম যোগ করা হয়েছে। এসব এলাকায়  ফ্ল্যাট বা ভবনে বিনিয়োগের ওপর বিশেষ করের হার কিছু ক্ষেত্রে বাড়ানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর