বুধবার, ৫ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের নামে বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞা

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো আর লাভজনক বাণিজ্যে জড়াতে পারবে না। অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান হিসেবে যারা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) থেকে নিবন্ধন নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে লাভজনক বাণিজ্যে জড়ানোর বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। গতকাল এমআরএ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। সূত্র জানায়, কোনো কোনো ক্ষুদ্রঋণদাতা প্রতিষ্ঠান সদস্যদের ঋণ দেওয়ার পাশাপাশি ইলেকট্রনিক্স পণ্য বা ভোগ্যপণ্য দিচ্ছে। এর বিপরীতে তারা আবার উচ্চ সুদে কিস্তিও নিচ্ছে।

এমন কি কর্মীদের প্রতি মাসে এ ধরনের পণ্য বিক্রির টার্গেট করে দেওয়া হচ্ছে। টার্গেট পূরণ না হলে বেতন থেকে টাকা কেটে রাখারও অভিযোগ ওঠেছে। এমআরএ আইন অনুযায়ী এ ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। প্রজ্ঞাপনে এ বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এ অথরিটির সনদপ্রাপ্ত কিছু ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান এমআরএ আইনের পরপন্থী লেনদেন বা ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িত হয়ে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের লোকবল ও অন্যান্য সম্পদ ব্যবহার করে ক্ষুদ্রঋণের গ্রাহকের কাছে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও ভোগ্যপণ্য ঋণ প্রদানের মাধ্যমে বা নগদমূল্যে বিক্রি করছে। এমআরএ আইনের (২০০৬) এর ২৪ এর ৩ ধারা উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতীত কোনো ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান এই ধারার বিধান ও উদ্দেশ্য পরিপন্থী কার্যক্রম গ্রহণ, লেনদেন, শিল্প বা ব্যবসা-বাণিজ্য করতে বা অন্য কোনো সেবা দিতে পারবে না। এমআরএ আইনের ৪৮ ধারার ক্ষমতাবলে এ নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়টি প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এমআরএর পরিচালক মো. জিল্লুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা সুনির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছি না। সামগ্রিকভাবে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে শৃঙ্খলার মধ্যে রাখার জন্যই এ সার্কুলার জারি হয়েছে। তিনি বলেন, সারা দেশে ৭০০-এর বেশি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই সার্কুলার জারির পর প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মীদের মাধ্যমে গ্রহীতাদের কাছে আর পণ্য বিক্রির কার্যক্রম চালাবে না বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।  এমআরএর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সারা দেশে ৭৩৯টি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে যার গ্রাহকসংখ্যা প্রায় ৪ কোটি। এর মধ্যে ২ কোটি ৯৭ লাখ ঋণগ্রহীতা সদস্য রয়েছেন। এমআরএর নিবন্ধিত ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ১ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। এর মধ্যে আলোচ্য ১০ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৬৭ শতাংশ ঋণ। ঋণ দেওয়ার পাশাপাশি কিছু প্রতিষ্ঠান এই বিপুলসংখ্যক সদস্যকে তাদের লাভজনক বাণিজ্যে সম্পৃক্ত করছে এমন অভিযোগ ওঠার পরই এই সার্কুলার জারি করা হয়। অর্থনৈতিক সমীক্ষা, ২০২৩-এর তথ্য অনুযায়ী দেশে প্রথম সারির ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ব্র্যাক, আশা, বুরো বাংলাদেশ, প্রশিকা, টিএমএসএস, এসএসএস, জাগরণী ফাউন্ডেশন, পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র, উদ্দীপণ, সাজেদা ফাউন্ডেশন, পল্লী মঙ্গল কর্মসূচি। এ ছাড়া শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। এই প্রতিষ্ঠানটির সহযোগী হিসেবে গ্রামীণফোন, গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ কমিউনিকেশন্স, গ্রামীণ সাইবারনেট, গ্রামীণ সলিউশন্স, গ্রামীণ আইটি পার্ক, গ্রামীণ ইনফরমেশন হাইওয়েজ, গ্রামীণ স্টার, এডুকেশন, গ্রামীণ বাইটেক, গ্রামীণ উদ্যোগ, গ্রামীণ সামগ্রী, গ্রামীণ নিটওয়্যারসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা ইলেকট্রনিক ও ভোগ্যপণ্য সরবরাহ করে। সামাজিক ব্যবসায় নিয়োজিত এসব প্রতিষ্ঠান নিজেদের লাভজনক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত নয় বলে দাবি করে। তবে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক-এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক ব্যাংক, বিকাশ, ব্র্যাক-ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেড, ব্র্যাক আইটি সার্ভিস, ব্র্যাক-সাজান এক্সচেঞ্জ লিমিটেড ও ব্র্যাক-ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং আড়ং নামে বিভিন্ন লাভজনক প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

এমআরএর পরিচালক বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক এমআরএ নিবন্ধিত কোনো প্রতিষ্ঠান নয়, সে কারণে ওই প্রতিষ্ঠান বা তার সহযোগী কোনো প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম তাদের সার্কুলারের আওতায় পড়বে না। এ ছাড়া ব্র্যাক তাদের নিবন্ধিত ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা হলেও ব্র্যাক ব্যাংক, আড়ংসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো পৃথকভাবে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে লাইসেন্সপ্রাপ্ত- যে কারণে ওই সংস্থাগুলোও এই সার্কুলারের বাইরে থাকবে। শুধুমাত্র এমআরএ-তে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের নামে বা কর্মী ব্যবহার করে কোনো লাভজনক বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালাতে পারবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর