মঙ্গলবার, ১৮ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইসি ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি নিবন্ধন না পাওয়া দলগুলোর

নিজস্ব প্রতিবেদক

ক্রিয়াশীল দলগুলো বাদ দিয়ে অখ্যাত দলকে নিবন্ধন দেওয়ার অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশন ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ১০ দলের নেতারা। জাতীয় প্রেস ক্লাবে গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে এ হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে নুরুল হক নূর, মজিবুর রহমান মঞ্জু, মুস্তাফিজুর রহমান ইরান নিজ নিজ দলের নিবন্ধন না পাওয়ায় ইসি কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচির কথা বলেন। পরে অন্যরাও তাতে মত দেন। দলগুলোর মধ্যে রয়েছে- নাগরিক ঐক্য, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), গণ অধিকার পরিষদ, লেবার পার্টি, বাংলাদেশ হিউম্যানিস্ট পার্টি (বিএইচপি), ডেমোক্রেটিক পার্টি, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি (বিএমজেপি), বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি), বাংলাদেশ সনাতন পার্টি ও বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএলডিপি)। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।

মান্না বলেন, এই নির্বাচন কমিশনের বিন্দুমাত্র নিরপেক্ষতা নেই। সাংবিধানিক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের জন্য গঠন করা প্রতিষ্ঠানটি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনে পরিণত হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত কিছু সরকারি কর্মকর্তাকে পুরস্কার দেওয়ার জন্য এখানে নিয়োগ দেওয়া হয়। ভবিষ্যতে আরও বড় পুরস্কারের লোভে তাঁরা যে কোনো বেআইনি কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকবে। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এবং যার যার দলীয় প্ল্যাটফরম থেকে ইসির এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলব। আমরা হয়তো শিগগিরই সব দল নিয়ে বসব এবং পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করব।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, নির্বাচন কমিশন এক বছর ধরে যাচাই-বাছাইয়ের নোটিস দিয়ে, আবার কোথাও কোথাও আচমকা আমাদের দলগুলোর কেন্দ্রীয়, জেলা, উপজেলা অফিস পরিদর্শন করেছে। পরিদর্শনের নামে তাঁরা আমাদের তৃণমূলে অফিসের দলিল, সাইনবোর্ড, আমাদের দলীয় নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁদের যেভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে; তাতে মনে হয়েছে, তারা যেন রাজনৈতিক দল নয়, বরং আসামিদের তালিকা হালনাগাদ করছে। এবি পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন।

গণ অধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক বলেন, সরকারের কাছ থেকে ইসির কাছে নির্দেশনা ছিল, দুটি দল ছাড়া কাউকে নিবন্ধন দেওয়া যাবে না। এই সুপারিশ সরকারের বিভিন্ন এজেন্সি দিয়ে গেছে। অনিবন্ধিত দলগুলোর প্রতি ইসি অন্যায় করা হয়েছে, অবিচার করা হয়েছে। এ ধরনের জুলুম আমরা মেনে নেব না। লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বাবুল সর্দার চাখারী, বিএলডিপির চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন আল আজাদ, গণ অধিকার পরিষদের (একাংশ) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ফারুক হোসেন প্রমুখ এতে বক্তব্য দেন।

শর্ত পূরণ করলে নিবন্ধন : ইসি : দলগুলোর অভিযোগ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন কোনো গোয়েন্দা সংস্থার কথায় চলে না। কোনো গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের ভিত্তিতে কাজ করে না। ইসি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। এখানে যারা (সিইসি ও নির্বাচন কশিশনার) রয়েছে, তারা আইন, কানুন, নিয়ম মেনে (নিবন্ধন) দিয়েছেন।’ তিনি জানান, যে দুটি দল নিবন্ধন পাচ্ছে তারা আইন, বিধি অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ের শর্ত সঠিকভাবে পূরণ করেছে। এ নির্বাচন কমিশনার জানান, যারা আবেদন করেছে, তাদের জেলা, উপজেলা পর্যায়ের তথ্য যাচাই করা হয়েছে। তথ্য যাচাই সংক্রান্ত দুটি কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন সঠিক হয়েছে এবং শর্তপূরণ করায় দুটি দল নিবন্ধনের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছে। বাকিরা শর্ত পূরণ করেনি তাই নিবন্ধন পায়নি। ‘এখানে গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা গোয়েন্দা সংস্থার কাছে রিপোর্ট চাইওনি, নিইওনি। গোয়েন্দা সংস্থা আমাদের কাছে রিপোর্ট দেওয়ার কথাও না, সেটাকে এন্টারটেইন করারও সুযোগ নেই’ বলেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। নির্বাচন কমিশন সরকারের অঙ্গ সংগঠনে পরিণত হয়েছে এমন অভিযোগের জবাবে আলমগীর বলেন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। এটা গণতান্ত্রিক দেশ। গণতান্ত্রিক দেশে যে কোনো মানুষ যে কোনো বিষয়ে মন্তব্য করতে পারেন। সেই অধিকার তাদের আছে। এই অধিকার তো তাদের আছে করতেই পারেন। তবে কতটা সত্য মিথ্যা তা বিচার করবে দেশের জনগণ।

 

 

সর্বশেষ খবর