শুক্রবার, ২৮ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন

সীমান্তে মাদক বন্ধে মিয়ানমার সহযোগিতা করছে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, সীমান্ত এলাকা দিয়ে মাদক আসা বন্ধে ভারত যেভাবে সহযোগিতা করছে, মিয়ানমার সেভাবে করছে না। তিনি বলেন, মাদকের প্রচলন যুগ যুগ ধরেই চলে আসছে। ব্রিটিশ আমলে গাঁজা বোট নামে একটা নৌকা ছিল। সেটা আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। আমরা কোনো মাদক তৈরি করি না, তৈরি করতে উৎসাহও দিই না। কিন্তু আমরা ক্ষতির শিকার হচ্ছি।

গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে ‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস’ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পার্শ্ববর্তীসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ইয়াবা, আইসসহ ক্ষতিকর মাদক আসে। মিয়ানমার থেকে এমফিটামিনযুক্ত ইয়াবা ও আইস আসে। ভারত থেকে ফেনসিডিল আসত। তাদের সরকারের সঙ্গে কথা বলার পর যেসব সীমান্ত এলাকা থেকে ফেনসিডিল আসে সেসব জায়গায় তারা কাজ করছে; যাতে এগুলো বাংলাদেশে আসতে না পারে। ভারত যেভাবে আমাদের সহযোগিতা করছে, মিয়ানমার সেটা করছে না। যে কারণে বর্ডার গার্ড ও কোস্টগার্ডকে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ করছি। জনবল ও দক্ষতাও বাড়ানো হচ্ছে। মূল কথা হলো, দেশে যাতে মাদক ঢুকতে না পারে, আবার মাদক ঢুকলেও তা ধরতে পুলিশ ও র‌্যাব সব সময় কাজ করছে।

তিনি বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্ত লাইন একদম দুর্গম। সেখান থেকে হেঁটে যেতেও অনেক সময় লাগে। সে কারণে আমরা হেলিকপ্টারও কিনেছি। মাদক নিয়ন্ত্রণে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বহু আগ থেকেই মাদক আমাদের সমস্যার কারণ হয়ে আছে। এরই মধ্যে আমাদের দেশে অনেক সর্বনাশী ড্রাগ চলে এসেছে। আমরা মাদক তৈরি করি না, কিন্তু প্রতিবেশী কিংবা অন্য দেশ থেকে আসা মাদকের সবচেয়ে খারাপ শিকার হচ্ছি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালে মাদকের বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনীয়তা’ নীতি ঘোষণা করেছেন। সেভাবে আইনও সংশোধন করা হয়েছে। তাতে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

 মাদকের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার রোধে আমরা সর্বাত্মক কাজ করে যাচ্ছি। এ দিবসটি পালনের উদ্দেশ্য হলো মাদকদ্রব্য সেবনের ধ্বংসাত্মক পরিণতি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা। মাদকাসক্তমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সরকার তিনটি কর্মকৌশল অনুযায়ী কাজ করছে। সে ক্ষেত্রে আমাদের প্রথম কাজ হলো চাহিদা হ্রাস। এজন্য সবাই মিলে কাজ করছি। সমাজের সবাই সচেতন না হলে আমরা চাহিদা হ্রাস করতে পারব না।

আসাদুজ্জামান খান বলেন, জেলখানার কয়েদির অধিকাংশই মাদকের জন্য অপরাধী। তারা বিচারের জন্য অপেক্ষা করছেন। প্রায় সময়ই বিপুল মাদক জব্দ করে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। তৃতীয়ত, আমরা ক্ষতি কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। যারা আসক্ত হয়ে যান কিংবা আসক্তির দিকে ঝুঁকে পড়েন, তাদের কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায়, আমরা সেই চেষ্টা করছি।

এ সময় ঐশীর উদাহরণ টেনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সে খুবই প্রতিভাময়ী মেয়ে ও ভালো ছাত্রী ছিল। কীভাবে মাদকের জন্য বাবা-মাকে হত্যা করেছে, আপনারা সেই দৃশ্য দেখেছেন। পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যার দায়ে এ দম্পতির সন্তান ঐশী রহমান ২০১৩ সাল থেকে কারাগারে আছে। তার যাবজ্জীবন সাজার রায় হয়েছে।

সরকারি উদ্যোগে মাদক নিরাময় কেন্দ্র করছেন কি না- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমি আগেও বলেছি। আমরা আট বিভাগে আটটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ হাসপাতাল করেছি। ঢাকার তেজগাঁওয়ে যেটা আছে সেটার সক্ষমতা বাড়াচ্ছি এবং সমৃদ্ধ করছি। এ ছাড়া অন্য হাসপাতালগুলোও যেন এ খাতে কাজ করে সেজন্য মাঝে মাঝে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর প্রায়ই নির্দেশনা দিয়ে থাকে। একই সঙ্গে যেসব হাসপাতাল অপকর্ম করছে, ভুলভাল চিকিৎসা দিচ্ছে তাদের লাইসেন্স বাতিল করে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর