সোমবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

সমঝোতার সুযোগ নিয়ে জিজ্ঞাসা

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

সমঝোতার সুযোগ নিয়ে জিজ্ঞাসা

বাংলাদেশ সফরের আনুষ্ঠানিকতার প্রথম দিনেই ঢাকায় কর্মব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন মার্কিন কংগ্রেসম্যান এড কেইস ও রিচার্ড ম্যাকরমিক। তাঁরা গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার কোনো সুযোগ আছে কি না তা জানতে চেয়েছেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পৃক্ততার গভীরতা নিয়েও জিজ্ঞাসা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের দুই সদস্যের। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও গতকাল তাঁরা রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে  বৈঠক করেন। আজ দুই কংগ্রেসম্যান যাবেন কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে।

শনিবার আলাদাভাবে ঢাকা পৌঁছানো যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির হয়ে হাওয়াই থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস সদস্য এড কেইস  ও বিরোধী রিপাবলিকান পার্টির হয়ে জর্জিয়ার কংগ্রেসম্যান রিচার্ড ম্যাকরমিক গতকাল সকালে যান ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে। সেখানে দূতাবাসের কূটনীতিক ও  কর্মীদের সঙ্গে আলোচনার পর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে গিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান তাঁরা। সঙ্গে ছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ও কংগ্রেসম্যানদের স্ত্রীরা। পরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় মধ্যাহ্নভোজের আগে বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে। বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, মার্কিন কংগ্রেসম্যানরা নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার বিষয়ে কোনো সুযোগ আছে কি না কংগ্রেসম্যানরা জানতে চেয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, তোমাদের কোনো সমঝোতার পথ আছে কি না ওদের (বিএনপি) সঙ্গে। আমরা বলেছি, তাদের যে দাবি সরকার পতন হবে, ওটায় আমাদের  সমঝোতার কোনো স্কোপ (সুযোগ) নেই। ড. মোমেন বলেন,  তাদের একজন বলল, আমাদের দেশে আমি ডেমোক্র্যাট, উনি রিপাবলিকান। আমরা সবসময় সমঝোতায় যাই। আমরা উনাকে বলেছি, সমঝোতা করার মতো দাবি-দাওয়া তো এখানে নেই। তবে আমরা চাই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। আমাদের অন্য দল (বিএনপি) তো নির্বাচনের খবরই রাখে না। তারা চায় সরকারের পতন। সরকার পতনের ইস্যু তো সংলাপে যাওয়ার মতো কোনো টপিক নয়। দেশের রাজনৈতিক  দলগুলোর আন্তরিকতা থাকলে সুষ্ঠু এবং সহিংসতামুক্ত নির্বাচন সম্ভব বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, যতগুলো দল আছে, সব দল যদি নির্বাচনে অংশ নেয়, তারা যদি আন্তরিকভাবে অবাধ, সুষ্ঠু ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচন চায়, তাহলে সহিংসতা ছাড়াই নির্বাচন সম্ভব। সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে সহিংসতা ছাড়া নির্বাচন হবে। তবে সরকার বা নির্বাচন কমিশন চাইলেই সহিংসতা ছাড়া নির্বাচনের বিষয়ে গ্যারান্টি দেওয়া যায় না বলে জানান ড. মোমেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা কংগ্রেসম্যানদের বলেছি, এখানে নির্বাচন তোমাদের ওখানের (যুক্তরাষ্ট্র) চেয়ে ভালো হয়। তোমাদের ওখানে লোকে ভোট দেয় না। আমাদের এখানে অধিকাংশ লোক ভোট দেয়। ৭ শতাংশ লোকে ভোট দেয়। তোমাদের ওখানে লোক নির্বাচনে দাঁড়ায় না। এখানে একটা নির্বাচনে কয়েক শ প্রার্থী থাকে। প্রার্থী বেশি হলেও আমাদের এখানে কোনো অসুবিধা হয় না। শুধু সব দল ও মতের লোকের আন্তরিকতা দরকার। যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন নিয়ে কোনো ফর্মুলা দিচ্ছে কি না জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, ওরা কোনো ফর্মুলা দেয় নাই।

চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, চীন নিয়ে তারা বলেছে, তোমরা চীনের ভিতরে চলে যাচ্ছ। আমরা বলেছি, আমরা চীনের ঋণের ফাঁদে যাচ্ছি না। আমরা চীন থেকে যে ঋণ নিয়েছি, তা মাত্র ১ শতাংশের মতো। কংগ্রেসম্যানদের কাছে বিভিন্ন লোকজন বলেছে, এরা চীনের খপ্পরে পড়ে গেছে। চীনের গোলাম হয়ে গেছে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ভিন্নতার বিষয়গুলো বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের কাছে তুলে ধরেছেন বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, বলেছি যে, মনস্তাত্ত্বিকভাবে আমরা অবাধ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। প্রাইভেটাইজেশন আমাদের দেশের যত অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রি, কৃষি- এগুলো সব বেসরকারি খাতে। এগুলো সরকারি সেক্টর নয়, কমান্ড সিস্টেমের মতো না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, তারা ইন্দো-প্যাফিসিক নিয়ে বলেছে। হ্যাঁ, আমরা ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে একটা আউটলুক তৈরি করেছি এবং আমরা চাই, এটা অত্যন্ত অবাধ, নিরপেক্ষ, অন্তভুঁক্তিমূলক ও নিরাপদ, সবার সমৃদ্ধির জন্য নিয়ম-নীতিভিত্তিক নৌযান চলাচল।

যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রতিনিধিদের এমন সফর বাংলাদেশের বিষয়ে ভুল ধারণা দূর করতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। তিনি বলেন, অনেক সময় এ ধরনের প্রচার হয়েছে যে বাংলাদেশ একদম ভয়ংকর জায়গা, এলে মেরে ফেলবে। মানুষ খুব কষ্টে আছে, রাস্তাঘাটে মানুষ মেরে ফেলতেছে পুলিশ আর সরকার। আসলে এ ধরনের কিছু নাই। তারা একদম আকাশ থেকে পড়ে। শুনে এসেছে এই রকম খারাপ, এখন দ্যাখে যে অত খারাপ না। এ জন্য আমরা চাই অধিকতর লোকেরা আনাগোনা করুক। নিজের চক্ষুতে দেখে যাক, যাতে পক্ষপাতদুষ্ট প্রতিবেদনের ওপরে কোনো ডিসিশন না হয়। ড. মোমেন বলেন, দুই কংগ্রেসম্যানের সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা বলেছে, রোহিঙ্গাদের কাজ দেওয়ার জন্য। আমরা বলেছি, আমাদের ঘনবসতি। আর আমাদেরই প্রতি বছর ২০ লাখ যুবক কাজের বাজারে যোগ হয়। তোমরা মাত্র ৬২ জন রোহিঙ্গা নিয়েছ। পারলে আরও রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাও। ব্যবসার পাশাপাশি বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যদের আহ্বান জানানোর কথাও বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে দ্বিমুখী বাণিজ্য ১৪ বিলিয়ন ডলারের মতো এবং বাড়ছে। এটা ভালো। আমরা বলেছি, আমাদের বাণিজ্য বাড়ছে, কিন্তু সেই পরিমাণ বিনিয়োগ আসছে না। আগে অনেক বেশি আসছিল। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ওই বৈঠকে অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরী, সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ ও মোহাম্মদ এ আরাফাত, ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা অনুবিভাগের মহাপরিচালক খন্দকার মাসুদুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর