সোমবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

৮০ শতাংশ এলাকা মশার ওষুধের বাইরে

হাসান ইমন

রাজধানীতে এখন ডেঙ্গুর ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। প্রতিদিনই ১০-১৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। যদিও সিটি করপোরেশন নিয়মিত ওষুধ ¯েপ্র করছে। কিন্তু এর মধ্যে ৮০ শতাংশ এলাকা থাকে মশার ওষুধের বাইরে। সিটি করপোরেশনের মশক নিধনকর্মীরা অনেক এলাকায় যান না। এর বাইরে কিছু এলাকায় তাদের যাওয়ার অনুমতিও নেই। ফলে দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, নাগরিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারিসহ সব প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করতে হবে। শুধু ওষুধের মাধ্যমে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, সিটি করপোরেশনের মশক নিধনকর্মীরা কিছু নির্দিষ্ট স্থানে ওষুধ ¯েপ্র করে থাকে। এর মধ্যে সড়কের পাশে ড্রেনে, ডোবা, নালা-নর্দমায়, উন্মুক্ত স্থান, গর্তে জমে থাকা পানি, নির্মাণাধীন ভবনে, বিভিন্ন স্থানে পড়ে থাকা ডাবের খোসা, উন্মুক্ত স্থানে পলিথিনসহ ইত্যাদি স্থানে বৃষ্টির বা স্বচ্ছ পানি জমে থাকে সেখানে ওষুধ ¯েপ্র করা হয়। কিন্তু সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানে মশক নিধনকর্মীর যাওয়ার অনুমতি নেই। ওই সব প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের নিজেদেরই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কথা। কিন্তু এদের মধ্যে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখে না। গত ২৩ মে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে অংশীজন মতবিনিময় সভা হয়। সভায় স্বাস্থ্য অধিদফতর, বাংলাদেশ বেতার, রাজউক, আইইডিসিআর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতর, মাউশি, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ওই সময় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে পরিচ্ছন্ন রাখার কথাও বলেছেন। কিন্তু বাস্তবতা অনেকটা ভিন্ন। সব মিলিয়ে ৮০ শতাংশের বেশি এলাকায় সিটি করপোরেশনের মশার ওষুধ পৌঁছে না। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফজলে শামসুল কবির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সাধারণত এডিস মশা জন্মায় ভবনের এসি ও ফ্রিজের পড়া পানিতে, ছাদবাগানে, বিভিন্ন টবে, ভবনের আশপাশে জমে থাকা স্বচ্ছপানিতে। আর সাধারণত এসব স্থানেই করপোরেশন ওষুধ ¯েপ্র করতে পারে না। কারণ, ভবন মালিকরা ভবনে ঢোকার অনুমতি দেয় না। এ ছাড়া দুই ভবনের মধ্যবর্তী জায়গাগুলো এমনভাবে সংরক্ষণ করা, সেখানে কেউ যেতে পারে না। ওইসব স্থানে এডিস মশা জন্মায়। ওই মশাগুলোর কামড়ে বাসিন্দারা আক্রান্ত হয়। এডিস থেকে বাঁচতে হলে সবার আগে নাগরিককে সচেতন হতে হবে। তারা সচেতন না হলে এর থেকে বাঁচার উপায় নেই। তিনি আরও বলেন, সিটি করপোরেশন ওষুধ ¯েপ্র করে সড়কের পাশে, নালা, নর্দমায়। এসব স্থান সবমিলিয়ে ১৫-২০ শতাংশের মতো। এই ২০ শতাংশে মশা মরলেও বাকি ৮০ শতাংশের মশা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে সিটি করপোরেশনের একক চেষ্টায় এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তবে কিউলেক্স মশা নিধনে প্রায় শতভাগ করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণে থাকে।

জানতে চাইলে কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সিটি করপোরেশনের দেওয়া তথ্যটি অনেকটাই সঠিক। তবে কীটনাশক প্রয়োগের মাধ্যমে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে আসবে এটা ভুল। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে আনতে তার উৎপত্তিস্থল চিহ্নিত করতে হবে। যেসব পাত্রে বৃষ্টির পানি জমে সেগুলো ফেলে দিতে হবে। ওইসব কাজে নাগরিকদের জনসম্পৃক্ত করতে হবে। এর বাইরে যেমন- মাঠ ও পার্ক, উন্মুক্ত স্থান, রাস্তাঘাটসহ যেসব এলাকা উন্মুক্ত সে এলাকাগুলোয় সিটি করপোরেশন কাজ করবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পুলিশ স্টেশন, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যার যার জায়গা থেকে পরিষ্কার করবে। এই অংশীজনরা সবাই যদি কাজ করে তাহলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। অন্যথায় সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, এডিস মশা কোথায় জন্মায় নাগরিককে জানানোর দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। আবার অনেকে জানে কিন্তু পরিষ্কার করে না। এটা করতে জনসম্পৃক্তা বাড়াতে হবে সিটি করপোরেশনকে। জানা যায়, এডিস মশার জন্ম হয় জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে। ফ্রিজের ট্রে, রান্নাঘরের র?্যাক (যেখানে ধোঁয়া বাসনপত্র রাখা হয়), রান্নাঘরে বা বাথরুমের ড্রেনে জমে থাকা পানি, কুলার বাথরুম, বনসাই প্ল্যান্ট বা ইনডোর প্ল্যান্ট, পুরনো টায়ার, ঢাকনাবিহীন চৌবাচ্চা, ড্রাম বা ব্যারেল, পোষা প্রাণীর পাত্র, নির্মাণাধীন ভবনের ব্লক, ফেলে রাখা বোতল ও টিনের ক্যান, গাছের ফোকর, দেয়ালে ঝুলে থাকা বোতল, পুরনো জুতা, ফুলের টব, পরিত্যক্ত খেলনা, ছাদে অঙ্কুরোদগম উদ্ভিদ, বাগান পরিচর্যার জিনিসপত্র, ইটের গর্ত ও অপরিচ্ছন্ন সুইমিং পুলে। এ ছাড়া মাটির পাত্র, প্লাস্টিকের ড্রাম, কমোড, টিনের কৌটা, ডাবের খোসা, ব্যাটারির শেল, পলিথিন বা চিপসের প্যাকেট, ওয়াসার পানির মিটারে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়ে। সেখানে এডিস মশা জন্মায়।

সর্বশেষ খবর