শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

ব্যাংক খাতে আস্থা ফেরাতে বললেন গভর্নর

এমডিদের সঙ্গে বৈঠক

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘দেশের ব্যাংক খাতের প্রতি গ্রাহকের আস্থা কমে গেছে। ফলে গ্রাহকরা বিপুল পরিমাণ টাকা তুলে হাতে রেখেছেন। মানুষের হাতে টাকা রাখার পরিমাণ ২ থেকে ৩ শতাংশ বেড়ে গেছে।’ তাই ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে একযোগে কাজ করতে বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার।

গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় উপস্থিত তফসিলি ব্যাংকের এমডি ও সিইওদের এ নির্দেশনা দিয়েছেন গভর্নর। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের চার ডেপুটি গভর্নর, সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে বেসরকারি ব্যাংক এমডিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংক এমডি সেলিম আরএফ হুসেন সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ব্যাংক খাতে যাতে আস্থা ফেরাতে পারি, সেজন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। গভর্নর বলেছেন, ব্যাংক ব্যবস্থার বাইরে টাকার সরবরাহ বেড়ে গেছে আগের চেয়ে। এসব টাকা ব্যাংক ব্যবস্থায় ফেরত আনতে হবে। মানুষের হাতে নগদ টাকা বেশি থাকার মানে ব্যাংক খাতের আস্থার অভাব। ক্যাশলেস লেনদেন জনপ্রিয় করতে ডিজিটাল ব্যাংকিং, স্মার্ট অ্যাপসহ অনেক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তারপরও মানুষের হাতে নগদ টাকা কেন বাড়ল। গভর্নর বলেছেন সব ব্যাংককে আস্থা ফেরানোর চেষ্টা করতে হবে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, টাকা ছাপানো বৃদ্ধি এবং হুন্ডি তৎপরতার কারণে মানুষের মধ্যে হাতে টাকা রাখার প্রবণতা বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে, মানুষের হাতে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে রেকর্ড পরিমাণ টাকা রয়েছে। গত জুন শেষে প্রথমবারের মতো সার্কুলেশন বা প্রচলনে থাকা টাকার পরিমাণ ৩ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার ওপরে উঠেছে। এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে প্রচলনে থাকা নোটের পরিমাণ সর্বোচ্চ ২ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা। বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচার ঠেকাতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছেন গভর্নর। এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের জোরালো মনিটরিংয়ের মাধ্যমে ওভারইন ভয়েসিং অনেকটাই কমানো গেছে। তবে আন্ডার ইন ভয়েসিংয়ের মাধ্যমে এখনো অর্থ পাচারের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এবার এই বিষয়টি প্রতিহত করতে ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে ওভার ইনভয়েসিং কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে। ফলে এটা অনেকটা কমে গেছে। কিন্তু ব্যাপক আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের কিছু তথ্য মিলেছে। ব্যাংকগুলোকে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। এটা করা হয় মূলত কর ফাঁকি দিতে। সেই সঙ্গে পেমেন্টের বাকি অংশ পরে হুন্ডির মাধ্যমে করা হয়। ফলে হুন্ডির বিস্তার ঘটে। এটা জোরদার তদারকি করা হচ্ছে। সবার সম্মিলিত চেষ্টার মাধ্যমেই অর্থ পাচার ঠেকানো সম্ভব হবে। এ সময় তিনি বলেন, বাণিজ্য ঘাটতি অনেকটা কমানো গেলেও আর্থিক হিসাব এখনো নেগেটিভ আছে এটা সমন্বয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা ঠিক হলে বাণিজ্য ঘাটতিও কাটিয়ে ওঠা যাবে। এ ছাড়া, খেলাপি ঋণ, পুনঃতফসিল এগুলো রেগুলার মনিটরিং করতে হবে। পুনঃতফসিল ঋণ যেন আবার খেলাপি না হয় সেদিকে জোর দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু ডাটা হ্যাক করা হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের কাছে এমন রেকর্ড নেই। কোনো ডাটাতে সমস্যাও নেই।

সেলিম আর এফ হুসেন বলেন, আমাদের ট্রেড ব্যালেন্স বেশ পজিটিভ আছে। কিন্তু এখন চ্যালেঞ্জ হলো ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টেড নেগেটিভ হয়ে গেছে। এটা উত্তরণের চেষ্টা চলছে। ডিসেম্বর-জানুয়ারি নাগাদ এটাকে সহনীয় লেবেলে নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে। এটাই দেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট অনেক দিন নেগেটিভ ছিল না। খেলাপি ঋণও আমাদের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ। ২০-৩০ বছরের যে সমস্যা সেটা একদিনে কাটবে না। এটা ধাপে ধাপে কমিয়ে আনার নির্দেশনা দিয়েছেন গভর্নর। এ জন্য মামলা সংক্রান্ত জটিলতা কাটানোর চেষ্টা করছে ব্যাংকগুলো। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিয়ম অনুয়ায়ী ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়। নিয়মের বাইরে কোনো ব্যাংক করলে ৬ মাস পরে সেটা আবার এনপিএল হয়ে যায়। লিক্যুউডিটিতে কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। কয়েকটি ব্যাংকের কমে গেছে। কিন্তু পরিস্থিতি এমন না যে গ্রাহকরা ঋণের আবেদন করে পাচ্ছে না। কারণ মানি সাপ্লাই কমে গেছে। অনেক ডলার বিক্রি করা হচ্ছে। সরকারকে ঋণ দেওয়াও কমানো হয়েছে। ফরেন এক্সচেঞ্জ রিপোর্ট অর্থাৎ লেনদেন রিপোর্টিং এসব ব্যাংকের ফোকাস করা দরকার। কারণ তথ্যগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকে সঠিকভাবে দেওয়া হচ্ছে না। এখানে ভালো লোকবল, প্রশিক্ষণ দরকার। প্রতিটি ব্যাংকের এ সাইটে একজন সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট থাকা দরকার। পরিসংখ্যানগত রিপোর্ট ঠিকমতো না হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।

সর্বশেষ খবর