মঙ্গলবার, ২২ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

উদ্বোধনের আগেই দখল ৩০০ ফিট সড়ক

♦ পার্কিংয়ের গাড়িতে তীব্র যানজট অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সামনের সড়কে ♦ হকারদের দখলে দৃষ্টিনন্দন ফুটপাত

নিজস্ব প্রতিবেদক

উদ্বোধনের আগেই দখল ৩০০ ফিট সড়ক

দেশের সবচেয়ে প্রশস্ত ও দৃষ্টিনন্দন সড়ক পূর্বাচল ৩০০ ফিট এক্সপ্রেসওয়ে। বর্তমানে এটি ১৪ লেনের একটি সড়ক। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন না হলেও অধিকাংশ কাজ প্রায় শেষ হওয়ায় যানবাহন চলাচলের জন্য এটি এখন উন্মুক্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বলে জানা গেছে। কিন্তু এর মধ্যেই অবৈধ গাড়ি পার্কিং, হকারদের দখলের কবলে পড়েছে এই এক্সপ্রেসওয়ে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। বিঘ্নিত হচ্ছে সড়কটির ব্যবহারিক কার্যকারিতা। গতকাল সরেজমিন পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে কাঞ্চন সেতুতে যাওয়া ৩০০ ফিট এক্সপ্রেসওয়ের মাঝখানে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। স্কুলটিতে সকালে ক্লাস শুরু হয়ে চলে বিকাল পর্যন্ত। শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যক্তিগত গাড়িতে অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসেন এই স্কুলে। কিছু গাড়ি শিক্ষার্থীদের নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। কিন্তু অধিকাংশ গাড়ি স্কুলের সামনে পার্কিং করে প্রায় সারা দিন সড়কটি দখল করে রাখে। এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ প্রায় সারা দিন অবৈধ গাড়ি পার্কিংয়ের দখলে থাকায় যানজট লেগেই থাকে। সকালে স্কুল শুরু এবং বিকালে স্কুল ছুটির সময় যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। স্কুলটি সকাল সাড়ে ১০টা, সাড়ে ১১টা, দুপুর ১টা, আড়াইটা ও সাড়ে ৩টায় ছুটি হয়। ওই সময় সড়কটিতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। কারণ ছুটি হওয়ার আগেই শিক্ষার্থীদের নিতে আসা ব্যক্তিগত গাড়িগুলো দু-তিন সারিতে সড়কে পার্কিং করে রাখা হয়। সড়ক দখল করে গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে এতে ভোগান্তিতে পড়ে এই এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারকারীরা। সেই সঙ্গে এক্সপ্রেসওয়ের ব্যবহারিক কার্যকারিতাও কমে যাচ্ছে।

এ সড়ক দিয়ে কাঞ্চন থেকে মোটরসাইকেল চালিয়ে ঢাকায় অফিস করেন মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এ যানজট নিত্যদিনের চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরো সড়কটিতে মোটামুটি গতিতে নিরবচ্ছিন্ন এলেও স্কুলটির সামনে আটকে থাকতে হয় দীর্ঘ সময়। স্কুলের সামনে আধা কিলোমিটার সড়ক পার হতে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা লেগে যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখানে কয়েক শ প্রাইভেটকার অবৈধভাবে সড়কটি দখল করে রাখে। ফলে সড়কে তীব্র যানজট থাকে। এদের কেউ কিছু বলে না। এত বড় পরিসরে স্কুল করেছে কিন্তু শিক্ষার্থীদের পিক এবং ড্রপ পয়েন্ট কিংবা গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখেনি। এত গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক এভাবে সবার চোখের সামনে দখল হয়ে যাচ্ছে অথচ এ নিয়ে কেউ কোনো কথা বলছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে এ সড়কের আরও অনেক অংশ দখল হয়ে যাবে।’

সড়কে পার্কিং করে রাখা প্রাইভেটকার চালক মো. ইবরাহিমের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘সকাল ৭টায় যাত্রাবাড়ী থেকে শিক্ষার্থী নিয়ে এসেছি। স্কুল ছুটি হবে আড়াইটায়। ছুটি হলে শিক্ষার্থীকে নিয়ে আবার চলে যাব। প্রতিদিনই আসা-যাওয়া হয় আর গাড়ি থাকে রাস্তায়। যানজটের কারণে ছাত্র নামিয়ে যাত্রাবাড়ী যাই না। একবারে ছুটি হলে ছাত্র নিয়ে বাসায় ফিরি।’ গাড়ি কেন রাস্তায় রাখেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আশপাশে কোথাও তো পার্কিং নেই, এমনকি স্কুলেরও পার্কিংব্যবস্থা নেই। যেহেতু পার্কিংব্যবস্থা নেই, সে কারণে বাধ্য হয়ে রাস্তায় পার্কিং করি।’ এ ছাড়া পূর্বাচল ৩০০ ফিট এক্সপ্রেসওয়ে সড়কটির দুই পাশের সার্ভিস রোড এবং ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠেছে চটপটি, ফুচকা, আইসক্রিম, টং দোকান। হকারদের দখলে যেতে বসেছে দৃষ্টিনন্দন এই ফুটপাত। ফুটপাতের কাজ এখনো কিছুটা বাকি। এর মধ্যেই শুরু হয়েছে দখলের উৎপাত। প্লাস্টিকের বড় ছাতা টানিয়ে ঝুপড়ি দোকান খুলে বসেছে হকাররা। ৩০০ ফিট সড়ক থেকে খিলক্ষেত যাওয়ার বাঁকে দেখা যায় সারি সারি দোকান। এ সড়কের পাশে মাছের বাজারও বসতে দেখা গেছে। তপ্ত দুপুরে ছাতার নিচে বসে চা নিয়ে খোশগল্পে মেতেছে অনেক ক্রেতা। পাশেই সারি করে রাখা অটোরিকশা। বিকাল হতেই বদলে যেতে থাকে ফুটপাতের চিত্র। ঝাঁপি খুলে বসে ফুচকা, চটপটি, পিঠা, ফাস্টফুডসহ বিভিন্ন খাবারের দোকান। শিশু, কিশোর, তরুণ, তরুণী থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী মানুষের ভিড় জমে লেকপাড়ে। রাস্তার ওপরে মোটরসাইকেল, ব্যক্তিগত গাড়ি রেখে আড্ডায় মেতে উঠছে তারা। এর ফলে এক্সপ্রেসওয়েতে তৈরি হচ্ছে যানজট। এলোমেলোভাবে রাখা এসব গাড়ির কারণে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।

এক্সপ্রেসওয়ের ফুটপাতের কিছু অংশে এখনো কাজ চলছে। ঢালাই মজবুত করতে পানি দিচ্ছিলেন শ্রমিক খলিল মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমরা সিমেন্ট ঢালাই দিয়ে যাই, পরদিন সকালে এসে দেখি জুতা দিয়ে মাড়িয়ে উঁচুনিচু করে দিয়েছে। অনেকে এর ওপর মোটরসাইকেল রাখে। ফলে অনেক সময় কিছু জায়গার ঢালাই নষ্ট হয়ে যায়। আমরা যতক্ষণ থাকি ততক্ষণ দোকান বসতে দিই না। কিন্তু চলে যাওয়ার পর তো আর বলার কেউ থাকে না।’ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম দৃষ্টিনন্দন সড়ক পূর্বাচল ৩০০ ফিট এক্সপ্রেসওয়ে। এ সড়কের সৌন্দর্য এবং গতি শ্লথ হচ্ছে অবৈধ দখল আর পার্কিংয়ের কারণে। অতিদ্রুত এ সড়ককে সকল প্রকার অবৈধ দখলমুক্ত করার দাবি জানান কুড়িলের ব্যবসায়ী মো. নিজামউদ্দিন।

সর্বশেষ খবর