মঙ্গলবার, ২২ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

সংঘর্ষে বেনামি আসামি আড়াই হাজার

প্রতিদিন ডেস্ক

দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতা-কর্মীরা পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এসব ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে যেসব মামলা করেছে, তাতে বেনামি আসামি করা হয়েছে আড়াই হাজার নেতা-কর্মীকে। এ ছাড়া জেলা বিএনপির সভাপতিসহ নাম, পদবি উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে ৩১৭ জনকে। গতকাল হবিগঞ্জের মডেল থানা ও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় দায়ের করা পৃথক চার মামলায় নামে-বেনামে বিএনপি নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়। তবে গত রবিবার বিএনপি-আওয়ামী লীগের সংঘর্ষের ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। আমাদের হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে হবিগঞ্জে দুই দিনের সংঘর্ষের ঘটনায় গতকাল হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় পুলিশ অ্যাসল্ট ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা দায়ের করেছে। থানার এসআই খোরশেদ আলম পুলিশ অ্যাসল্ট ও এসআই ওয়াহেদ গাজী বাদী হয়ে বিস্ফোরক আইনে মামলাটি করেন। এসব মামলায় হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক পৌর মেয়র আলহাজ জি কে গউছসহ ৯০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই দুই মামলায় ৬০০ করে মোট ১২০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ বদিউজ্জামান জানান, এসব মামলায় এরই মধ্যে ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতার করতে অভিযান চলছে। মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, গত শনিবার (১৯ আগস্ট) বিকালে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে পদযাত্রা থেকে পুলিশের ওপর অতর্কিতে হামলা চালানো হয়। এতে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অজয় চন্দ্র দেবসহ কমপক্ষে ১০ পুলিশ আহত হন। আহত ওসিকে রবিবার উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা জাতীয় চক্ষু হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্য আহতরা হবিগঞ্জ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এদিকে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এম আউয়াল আশঙ্কাজনক অবস্থায় একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে রয়েছেন। এ ছাড়াও পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে আহত আরও বেশ কিছু নেতা-কর্মী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে গত রবিবার বিএনপির সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ ও শান্তি সমাবেশ থেকে সংঘটিত সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।

কাঁচপুরের ঘটনায় আসামি ৬০০ : নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুরে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষের ঘটনায় গতকাল সোনারগাঁ থানায় মামলা হয়েছে। এতে দলটির ১১৩ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখসহ ৬০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। থানার এসআই ফিরোজ আহমেদ বাদী হয়ে ওই মামলা করেন। থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আহসান উল্লাহ মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। গত ১৯ আগস্ট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুরে জেলা বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সংঘর্ষের ঘটনায় এসব মামলা হয়। মামলায় আসামি হিসেবে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূইয়া দিপু, আজহারুর ইসলাম মান্নান, সাবেক এমপি আতাউর রহমান খান আঙ্গুর, যুবদল নেতা শহীদুর রহমান স্বপন, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খায়রুল ইসলাম সজীব, কাজী নজরুল ইসলাম টিটু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবু সাদাত সায়েম, আফজাল কবিরসহ ১১৩ জনের নাম রয়েছে।

সোনারগাঁয়ে আসামি ৮১৪ : সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গত ১৯ আগস্ট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সংঘটিত সংঘর্ষের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ৮১৪ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে গতকাল মামলা হয়েছে। সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আহসান উল্লাহ এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকনসহ ১১৪ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৭০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।

সাঈদীর জানাজা নিয়ে সহিংস ঘটনায় চকরিয়ায় যুবক গ্রেফতার : কক্সবাজারের চকরিয়ায় মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজাকে কেন্দ্র করে থানা পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে পুলিশ মো. ওমর ফারুক (২৫) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারের পর গতকাল আদালতে হাজির করা হলে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে সে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে।

গ্রেফতার ওমর ফারুক কাকারা ইউনিয়নের শাহওমরাবাদ ২ নম্বর ওয়ার্ডের নূরুল আলমের ছেলে। তাকে দুটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাবেদ মাহমুদ ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

উল্লেখ্য, চকরিয়ায় গায়েবানা জানাজায় সংঘর্ষের ঘটনায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে মো. ফোরকান নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। পরে এ বিষয়ে ফোরকানের স্ত্রী নুরুচ্ছফা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাত ২ হাজার ১০০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এ ছাড়া থানার এসআই মো. আল ফোরকান বাদী হয়ে পৃথক দুই মামলায় ১৫০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৪ হাজার ৪০০ জনকে আসামি করে।

সর্বশেষ খবর