শুক্রবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

৪৫ বছরের কঠিন চ্যালেঞ্জে বিএনপি

আন্দোলন করে নিজেদের অবস্থান ফিরিয়ে আনা, দলের শৃঙ্খলা ধরে রেখে পছন্দের সরকারে ভোট করা

শফিউল আলম দোলন ও শফিকুল ইসলাম সোহাগ

৪৫ বছরের কঠিন চ্যালেঞ্জে বিএনপি

আজ পয়লা সেপ্টেম্বর, বিএনপির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৭৮ সালের এই দিনে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও ১৯ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে বিএনপি গঠন করেন। তবে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বর্তমানে সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে দলটি। বিএনপির সামনে এখন কঠিন থেকে কঠিনতর চ্যালেঞ্জ। সরকারের পদত্যাগ দাবিতে এক দফা আন্দোলনের মাধ্যমে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবি আদায় দলটির প্রধান চ্যালেঞ্জ।

বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মতে, রীতিমতো অস্তিত্বের লড়াই করছেন তারা। দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রেখে নিজেদের পছন্দের নিরপেক্ষ-নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে লড়াই করছে রাজপথের এই বিরোধী দলটি। সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোট নিয়ে ঘোষণা করেছে সরকার পতনের এক দফা যুগপৎ আন্দোলন। এর মাধ্যমে ক্ষমতাসীন সরকারের অবস্থান নড়বড়ে করে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান ফিরিয়ে আনতে চায়। বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপির প্রধান চ্যালেঞ্জ দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা ও মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা। এজন্য দরকার একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন। আর এটা বর্তমান ফ্যাসিস্ট ও কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কখনোই সম্ভব নয়। সেজন্যই আমরা সরকার পতনের যুগপৎ এক দফা আন্দোলন করছি। দেশের জনসাধারণও এতে যুক্ত হয়েছে। আমাদের উন্নয়ন সহযোগী তথা আন্তর্জাতিক বিশ্বও বাংলাদেশে একটা অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশীদারিমূলক নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথের এ আন্দোলন চালিয়ে যাব।’ প্রতিষ্ঠার ৪৫ বছর পূর্ণ করে আজ এমন এক সময়ে বিএনপি নতুন বছরে পা দিয়েছে যখন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দি অবস্থায় মারাত্মক অসুস্থ     হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে নির্বাসিত। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির চারজন সদস্য সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতে স্থায়ী কমিটিই সামলাচ্ছে সবকিছু। এ কমিটির সদস্যরাই দলের ভিতরে-বাইরে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। রাজপথের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন এবং এ আন্দোলনকে তারা অস্তিত্বের লড়াই হিসেবে নিয়েছেন।

জানতে চাইলে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপির সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের হারানো গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। কিন্তু সেটা বর্তমান ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারকে ক্ষমতায় রেখে সম্ভব নয়। এজন্যই আমরা সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। দেশের সব বিরোধী রাজনৈতিক দল, সংগঠনসহ গণতন্ত্রকামী জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তাদের সবাইকে সঙ্গে নিয়েই বিএনপি জনগণের এ দাবি আদায়ে সক্ষম হবে। এটাই বিএনপির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’

দলীয় নেতারা বলছেন, সরকার পতনের এক দফা আদায় ছাড়াও বিএনপির আরও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- আওয়ামী লীগ সরকার অতীতের মতো একতরফা জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করতে চাইলে তা প্রতিহত কিংবা মোকাবিলা করা। যুগপৎ কর্মসূচি রাজপথে কার্যকর করা। দলের শীর্ষনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করে উন্নত চিকিৎসার্থে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা। নিজেদের দলকে সুসংগঠিত করে অন্যান্য বিরোধী দলকে মাঠে ধরে রাখাও বিএনপি নেতাদের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ।

একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েও কোনো সাফল্য না পাওয়ায় আগামী নির্বাচনই এখন বিএনপির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন সিনিয়র নেতারা। এজন্য নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি সরকার না মানলে রাজপথেই বিষয়টির ফয়সালা করতে চান তারা।

এ ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের সামনে এখন একটাই চ্যালেঞ্জ। তা হলো বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়ে মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। নব্বইয়ের আন্দোলনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। এবার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে এক দফা আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারের পতন নিশ্চিত করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করব।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানান, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গড়ে ওঠা আন্দোলনের পাশাপাশি ভিতরে ভিতরে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে বিএনপি। নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ের পর নির্বাচনে অংশ নেবে দল। বিএনপি নেতারা বলছেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে তাদের পরিষ্কার সিদ্ধান্ত থাকায় নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় ছাড়া তাদের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই। তাই এবারের আন্দোলনটা তাদের জন্য অস্তিত্বের চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মাথায় নিয়েই সমমনা জোট ও দলগুলোকে নিয়ে রাজপথে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছে দলটি।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি : ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকালই কর্মসূচি পালন শুরু করেছে বিএনপি। এ উপলক্ষে বিকালে রাজধানীর গুলিস্তানে ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে কেন্দ্রীয় বিএনপির আলোচনা সভায় জাতীয় স্থায়ী কমিটি, নির্বাহী কমিটি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সদস্য এবং বরেণ্য বুদ্ধিজীবীরা অংশ নেন। আজ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর শেরেবাংলানগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীরউত্তমের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করা হবে। অনুষ্ঠানে স্থায়ী কমিটিসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন। বিকাল ৩টায় বিএনপির উদ্যোগে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের হবে। র‌্যালিটি ফকিরাপুল মোড়, নটর ডেম কলেজ, শাপলা চত্বর, ইত্তেফাক মোড় হয়ে রাজধানী মার্কেটের সামনে গিয়ে শেষ হবে। র‌্যালিতে স্থায়ী কমিটি, কেন্দ্রীয় ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সদস্যসহ সর্বস্তরের নেতা-কর্মী অংশগ্রহণ নেবেন।

অনুরূপভাবে সারা দেশে দলের সব ইউনিটে নিজ নিজ সুবিধামতো আজকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ইউনিটগুলো নিজেদের সুবিধাজনক সময় অনুযায়ী আলোচনা সভা ও অন্যান্য কর্মসূচি পালন করবে। বিএনপি এবং এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীকে উল্লিখিত কর্মসূচিগুলো সফল করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর