বিচার বিভাগকে প্রজাতন্ত্রের হৃৎপিণ্ড উল্লেখ করে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা হারালে ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে ব্যর্থ হলে জাতিকে খারাপ সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

গতকাল সকালে আপিল বিভাগের এজলাস কক্ষে তাঁকে দেওয়া বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধান বিচারপতি। বিদায় বেলায় তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এবং কোনো এক রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে আবার দেখা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, মানুষ শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগের প্রতি আস্থা হারাতে পারে। কিন্তু বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা হারালে ওই জাতিকে খারাপ সময়ের জন্য, খারাপ দিনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, বিচার বিভাগ জনগণের মৌলিক অধিকারের রক্ষক। সংবিধানের রক্ষক। তাই বিচারকদের সাহসী ও সুবিচারক হতে হবে।

বক্তব্যের এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, এই বিদায় মুহূর্তে আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি আমার মরহুম বাবা-মাকে। আমার জন্য এবং আমাদের পরিবারের প্রতিটি সদস্যের জন্য অপরিসীম কষ্ট আর ত্যাগ স্বীকার করে তাঁরা জান্নাতবাসী হয়েছেন। তাঁরা আমার সংগ্রামের পথে সহায়তা করেছেন। এ কথা বলেই প্রধান বিচারপতি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। এক মিনিটের মতোও কথা বলতে পারেননি তিনি। এজলাসে উপস্থিত থাকা তাঁর বড় মেয়ে, নাতি ও ছোট মেয়ের জামাইকেও কাঁদতে দেখা যায়। কিছু সময়ের জন্য এজলাস কক্ষের পুরো পরিবেশ নীরব-নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে। এরপর প্রধান বিচারপতি আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, আমি বিচার বিভাগকে বেশি ভালোবেসে ফেলেছিলাম এবং আমি চেষ্টা করেছি স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে। আমরা আবার দেখা করব, কোথায় জানি না, কখন জানি না, তবে জানি আমাদের আবার দেখা হবে কোনো এক রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে।

দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী অবসরে যাচ্ছেন আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর। এই সময় সুপ্রিম কোর্টের শরৎকালীন অবকাশ (ছুটি) থাকায় গতকালই বিচারক হিসেবে শেষ দিনের মতো এজলাসে বসেছেন তিনি। তবে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ১৯৫৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। পড়ালেখা শেষে ১৯৮১ সালের ২১ আগস্ট জেলা আদালতে আইনজীবী হিসেবে যোগ দেন। তিনি ১৯৮৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর হাই কোর্ট এবং ১৯৯৯ সালের ২৭ মে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বাংলাদেশের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন। তিনি ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল থেকে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।