শুক্রবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে হেফাজতের নতুন কমিটি

মুহাম্মদ সেলিম ও ইমরান এমি, চট্টগ্রাম

দেশের আলোচিত-সমালোচিত অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন কমিটিতে বাদ দেওয়া হয়েছে বিতর্কিত নেতাদের। সামনে আনা হয়েছে ক্লিন ইমেজধারী হেফাজত নেতাদের। পাশাপাশি নাশকতায় অভিযুক্ত নেতাদের আনা হয়নি শীর্ষ পদে এবং কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন হেফাজতের প্রয়াত আমির আল্লামা আহমদ শফি ও আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীর অনুসারী অনেক প্রভাবশালী নেতা। হেফাজতের প্রয়াত দুই শীর্ষ নেতার অনুসারী বাদ দিয়ে কমিটি গঠনের ফলে উত্থান হয়েছে নতুন শক্তির। হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মহিউদ্দীন গোলাম রাব্বানী বলেন, হেফাজতের আমির ও মহাসচিব ২১১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন। ৫১ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটিও অনুমোদন দিয়েছেন তারা। সংগঠনের জন্য ত্যাগ ও অবদানের কথা চিন্তা করে পদোন্নতিও দেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, হেফাজতে ইসলামে নতুন শক্তির আবির্ভাব হয়েছে। ২০১৩ সালে আল্লামা আহমদ শফির হাত ধরে বিস্তার ঘটে হেফাজতে ইসলাম। এরপর দেশ-বিদেশে সংগঠনটির নাম ছড়িয়ে পড়লে কওমি মতাদর্শী অনেক নেতা আসেন হেফাজতের ছাতার নিচে। তখন থেকে হেফাজত ইসলামে আহমদ শফির একক কর্তৃত্ব শুরু হয়। কিন্তু ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর আহমদ শফির মৃত্যুর পর হেফাজতের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় তারই কমিটির মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরীর হাতে। তিনিই হয়ে যান হেফাজতের আমির। আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীর নিয়ন্ত্রণে হেফাজতে কোণঠাসা হয়ে পড়েন আল্লামা আহমদ শফির অনুসারীরা। এরপর ফের নতুন করে সমালোচনার জন্ম দেয় ইসলামী এ সংগঠন ২০২১ সালে। ওই বছরের ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ আগমন ঘিরে সারা দেশে নাশকতা করেন হেফাজতের নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনার পর সরকার সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে হেফাজত নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে। অবস্থা বেগতিক দেখে তৎকালীন আমির আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী সারা দেশের হেফাজতের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। গ্রেফতার হেফাজত নেতাদের বেশির ভাগই জুনাইদ বাবুনগরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এ সময় রাজনৈতিক অঙ্গনে হেফাজত আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। ২০২১ সালের ১৯ আগস্ট আমির আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীর মৃত্যু হলে সংগঠনটির দায়িত্ব নেন তারই মামা আল্লামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী এবং মহাসচিব হন আল্লামা সাজিদুর রহমান। তখন থেকে রাজনীতিমুক্ত সংগঠন হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে শুরু করে হেফাজতে ইসলাম। পাশাপাশি শীর্ষ নেতৃত্বের কঠোরতায় ইসলামিক রাজনৈতিক দলে যেসব নেতা দায়িত্বে আছেন তাদের হেফাজতের গুরুত্বপূর্ণ পদে আনা হয়নি। সম্পূর্ণভাবে রাজনীতিমুক্ত ইসলামী পণ্ডিতদের নিয়ে হেফাজত সাজানো হয়েছে। তারা নতুনভাবে নিজেদের আবির্ভাব ঘটিয়েছেন। আগামী দিনে হেফাজতকে তৃতীয় শক্তি হিসেবেও মনে করা হচ্ছে। গতকাল চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি বাবুনগর মাদরাসায় বৈঠক করেন হেফাজতের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। বৈঠকে মীর ইদ্রিস, আজিজুল হক ইসলামাবাদী, আশরাফ আলী নিজামপুরী ও সাখাওয়াত হোসেন রাজিকে সাংগঠনিক সম্পাদক করার বিষয়ে আলোচনা হয়। বিতর্কিত কাউকে পদায়ন না করার বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু এসব নেতাকে নিয়ে বিতর্কের কারণে নারায়ণগঞ্জের মাদানী মাদরাসার মুহাদ্দিস বশির উল্লাহকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ নেতা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, হারুন ইজহার ও মীর ইদ্রিসকে যুগ্ম-মহাসচিব পদে পদায়ন করে ২১১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে কারাবন্দি মাওলানা মামুনুল হক, নুরুল ইসলাম কাশেমীসহ কয়েকজন নেতাকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কমিটিতে প্রধান উপদেষ্টা করা হয়েছে চট্টগ্রাম দারুল মারুফ মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা সুলতান যওক নদভীকে। এ ছাড়া ৫৩ জনকে উপদেষ্টা করা হয়েছে। আমির ও মহাসচিব পদে আগের মতোই রয়েছেন আল্লামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী ও আল্লামা সাজিদুর রহমান। সিনিয়র নায়েবে আমির দুজন, নায়েবে আমির করা হয়েছে ৪৬ জনকে। এ ছাড়া সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব করা হয়েছে জুনায়েদ আল হাবিবকে। যুগ্ম-মহাসচিব করা হয়েছে ১০ জন, সহকারী মহাসচিব ১০ জন, সাংগঠনিক সম্পাদক একজন, সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক আটজন, অর্থ সম্পাদক একজন ও সহ-অর্থ সম্পাদক করা হয়েছে ছয়জন। এর আগে ৫ আগস্ট কমিটি পুনর্গঠন করার জন্য একটি সাব-কমিটি করা হয়। ১৬ আগস্ট সাব-কমিটি বৈঠকে বসে ঢাকার ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে জামে মসজিদে। বৈঠকে যুগ্ম-মহাসচিব পদে মীর ইদরিস, হারুন ইজহার, মামুনুল হক, নাসির উদ্দীন মুনির ও সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীকে পদায়ন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ত্রিমুখী বিরোধ সৃষ্টি হয় হেফাজতে ইসলামে। সরকার চেয়েছিল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নেতাদের যেন শীর্ষ পদে পদায়ন করা না হয়।

সর্বশেষ খবর