রবিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঢামেকে ঝুঁকিতে অন্য রোগীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত আর মৃত্যু বেড়েই চলেছে। রেহাই পাচ্ছেন না বিশেষ বয়স বা শ্রেণি-পেশার কেউ। তবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ডেঙ্গুর জন্য ঝুঁকি বাড়ছে অন্য রোগীদেরও। সারা দেশের অসংখ্য ডেঙ্গু রোগী প্রতিদিন এ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ওয়ার্ডগুলোতে যেন তিল ধারণের জায়গা নেই, এমন পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে মেঝেতে রেখে। গতকাল ঢামেকের নতুন ভবনের ৬ থেকে ৮ তলা পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের ভর্তি দেখা যায়। পুরুষের চেয়ে নারী রোগীর সংখ্যা ছিল বেশি। ওয়ার্ডের ভিতরে জায়গা না হওয়ায় এসব রোগীর ঠাঁই হয়েছে মেঝে, করিডর এমনকি সিঁড়িতে। তাদের মাথার ওপরে ফ্যান ঘুরছে, তবুও তীব্র গরমে অতিষ্ঠ রোগী ও তার স্বজনরা। স্বজনরা বলছিলেন, রোগীকে সারাক্ষণ হাতপাখার বাতাস দিচ্ছেন তারা। এরপরও গরমের কারণে রোগীরা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ওই তিন ফ্লোরে রোগী আর স্বজনের ভিড়ে দাঁড়ানোর মতো পরিবেশ ছিল না। কোনো ওয়ার্ডেই ডেঙ্গু আক্রান্ত কাউকে আলাদা কিংবা মশারির ভিতরে রাখতে দেখা যায়নি। সেখানে রায়হান নামে এক আনসার সদস্য জানান, প্রতিদিন গড়ে তিনজন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী মারা যাচ্ছেন। বয়স্কদের মারা যেতে দেখা যাচ্ছে বেশি। গতকাল ভোর সাড়ে ৫টায় ঢামেকের মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাহিমা বেগম (৩০)। তিনি শুক্রবার বিকালে ঢামেকে ভর্তি হয়েছিলেন। এ পর্যন্ত শুধু ঢামেকেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১০৮ ডেঙ্গু রোগী। তীব্র জ্বর নিয়ে গত সপ্তাহে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সানাউল্লাহকে (২৫)। পরীক্ষা করে দেখা যায় তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে দেখা হলেও গতকাল পর্যন্ত তিনি কোনো বেড পাননি। বাধ্য হয়ে মেডিসিন ইউনিটের মেঝেতে শুয়েই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে তাকে। এদিকে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক এ প্রতিবেদককে বলেন, ঢামেক হাসপাতালে এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৬০০র বেশি রোগী ভর্তি হয়েছেন। আর প্রতিদিন চিকিৎসাধী নিচ্ছেন প্রায় সাড়ে ৩০০ রোগী। ডেঙ্গু রোগীদের ভালো করতে আমরা অগ্রাধিকার দিয়ে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। মেডিসিন বিভাগের ৬০১ ও ৬০২ ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ঢামেকের চিকিৎসক ও নার্সরা। কামাল নামে একজনকে নেওয়া হয় ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে। তার শরীরে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। বেগতিক পরিস্থিতি দেখে তার বাবা ও ভাই তাকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। জরুরি বিভাগ থেকে তাকে ৬০১ নম্বরে ভর্তি করানো হয়। বেড না পাওয়ায় ওয়ার্ডের গেটের পাশে মেঝেতে ঠাঁই হয়েছে ওই রোগীর। একজন নার্স বলেন, রোগীর চাপে কোথাও কোনো বেডের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। তাই আমরা ফ্লোরে রেখেই চিকিৎসা দিচ্ছি। এছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের রাখা হয়েছে ঢামেক হাসপাতালের পুরনো ভবনের দ্বিতীয় তলায়। তাদের সেখানে আলাদাভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কয়েকজন চিকিৎসক জানান, রোগীর চাপ থাকায় বেডের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা চলছে মেঝেতে। এতে ডেঙ্গুর জীবাণু আরও বেশি ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর