শিরোনাম
সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঘরে বসে থাকলে মনোনয়ন নয়

কঠোর বার্তা বিএনপিতে, সর্বস্তরের নেতাদের মাঠে থাকার নির্দেশনা

শফিউল আলম দোলন ও শফিকুল ইসলাম সোহাগ

ঘরে বসে থাকলে মনোনয়ন নয়

রাজপথে আন্দোলনের পাশাপাশি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভিতরে ভিতরে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে বিএনপির। নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির পাশাপাশি প্রার্থী চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলমান। রাজনৈতিক ফয়সালা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিএনপির দৃশ্যমান নির্বাচনী তৎপরতা শুরু হয়ে যাবে। রাজনৈতিক এ ফয়সালার জন্যই ‘এক দফা’ দাবি আদায়ে আন্দোলন করছে দলটি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপি নেতাদের পরিষ্কার বার্তা দিয়ে বলেছেন, যত প্রভাবশালী হোন না কেন, ঘরে বসে থাকা নেতাদের নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে মাঠে নামতে হবে। আন্দোলন নিয়ে কারও ন্যূনতম সংশয় থাকলে সেই নেতা ইস্তফা দিতে পারেন। আর যারা আন্তরিকভাবে মাঠে থাকবেন তাদের সবাইকেই যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবার দেশের অভ্যন্তরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও দলের এই সিদ্ধান্ত অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়নে সচেষ্ট রয়েছেন। বিএনপির বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলোর মাধ্যমে এসব তথ্য জানা গেছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, এবারের আন্দোলনে আমরা জীবন পণ করে মাঠে নেমেছি। মৃত্যু হলেও রাজপথ ছাড়ব না। এক দফা আদায়ের মাধ্যমে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল। এর মাধ্যমেই দেশ ও মানুষকে স্বৈরাচারমুক্ত করা হবে। জানা গেছে, চলমান এক দফা আন্দোলন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের মাধ্যমেই চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নেওয়ার লক্ষ্যে বিএনপি সমমনা দলগুলো নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে নেমেছে। দু-এক দিনের মধ্যে আবারও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতা, আন্দোলনে থাকা সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতাদের সঙ্গেও একের পর এক বৈঠক করে যাচ্ছেন দলীয় মহাসচিব। তারপর এসব বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে সবার সঙ্গে শেয়ার করছেন। তার পাশাপাশি আন্দোলনের কর্মসূচি নির্ধারণ, জনগণকে সম্পৃক্ত করতে কী কী করণীয় এসব বিষয়ে ধারাবাহিকভাবে সারা দেশে বিভিন্ন স্তরের নেতার সঙ্গে কথা বলছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ইতোমধ্যে জেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতা, দলের সাবেক এমপি-মন্ত্রী, বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদক, অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি। এমনকি বিগত জাতীয় নির্বাচনে দলের যারা প্রার্থী হয়েছিলেন তাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। আগামী মাসেই ‘অলআউট’ কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে, সেখানে কোনো ধরনের বিভেদ-বিভাজন যাতে না থাকে এবং কেউ যাতে দায়িত্বে অবহেলা না করেন, সে বিষয়ে বারবার সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সবাইকে।

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হয়েছে জেলা পর্যায়ের এমন একাধিক নেতা বলেছেন, সম্ভাব্য প্রার্থীদের উদ্দেশে দলের হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিগত দিনে এবং চলমান আন্দোলন-সংগ্রামে অনেক নেতা-কর্মী খুন, গুম, পঙ্গু হয়েছেন। যারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তারা এখনো ভালো আছেন। আন্দোলন যদি সফল না হয়, তাহলে তাদের পরিণতিও যে অনেককে বরণ করতে হবে না তার নিশ্চয়তা নেই। কারণ আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে বিএনপির কোনো নেতা-কর্মীকেই ছাড় দেবে না। আগামী নির্বাচনের বিষয়ে জেলা পর্যায়ের নেতাদের প্রতি দেওয়া হাইকমান্ডের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি। আর সে নির্বাচনে কে কত বড় নেতা, ব্যক্তি, এমপি-মন্ত্রী ছিলেন কি না দেখা হবে না। যারাই আন্দোলন-সংগ্রামে ভালো ভূমিকা রাখবেন তাদেরই মনোনয়ন দেওয়া হবে। জানা গেছে, মাঠের আন্দোলনের পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনের সব রকমের প্রস্তুতি হিসেবে বিএনপি সারা দেশে ৩০০ আসনের বিপরীতে প্রার্থী বাছাই শুরু করেছে অনেক আগেই। চূড়ান্ত প্রার্থীদের হাতেই মনোনয়নপত্র তুলে দেওয়া হবে। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় হওয়া না হওয়ার ওপর। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের জন্য এক দফার আন্দোলন চলছে। এ আন্দোলনে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে অংশ নিতে হবে। কোনোরকমের অবহেলা করা যাবে না। এটা শুধু ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানেরই নয়, সমগ্র দলের সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আমরা সবাই অঙ্গীকারবদ্ধ। বিএনপি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করবে ইনশা আল্লাহ।’ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘শুধু বিএনপিই নয়, সব বিরোধী দলসহ সমগ্র জাতি আজ এক দফার আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ। এটা আদায় করেই আমরা ঘরে ফিরব ইনশা আল্লাহ।’

৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সমাবেশের অনুমতি চায় বিএনপি : বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়ার প্রতিবাদে ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছে বিএনপি। সমাবেশের অনুমতি চেয়ে গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার কার্যালয় বিএনপির পক্ষ থেকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে।

 ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির দফতর সম্পাদক (গণমাধ্যম) এ বি এম এ রাজ্জাক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়নি। জানা গেছে, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির যৌথ উদ্যোগে ১৫ সেপ্টেম্বর বিকাল ৩টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর